E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কী আনন্দ আকাশে বাতাসে !

২০১৪ ডিসেম্বর ১১ ১৮:৩৯:৪৩
কী আনন্দ আকাশে বাতাসে !

চৌধুরী আ. হান্নান : কোন দাগী অপরাধী দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর যখন জনতার হাতে ধরা পড়ে তখন আনন্দ আর ধরে না। সে অপরাধী যদি হয় গণদুশমন তা হলে তো আর কথাই নেই, উল্লাস হবে বাঁধ ভাঙা।

একাত্তরের ঘাতকেরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় একেএকে ধরা পড়ছে-কারাগারে ঢুকছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইবুন্যালে বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে। যুদ্ধে স্বজনহারা যারা বুক ভরা লুকানো বেদনা নিয়ে আজও বেঁচে আছেন তারা কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি পাবেন। আর যাদের কাছে এ স্বাধীন ভূ-খন্ডটি ভালবাসার বাংলাদেশ তাদের কাছে মনে হবে-কী আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে!

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন-বাঙালিকে পাকিস্তানের ক্রীতদাসে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করে গেছেন। তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যার ওপর দায়িত্ব পড়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের-জাতীয় জীবনে লেপ্টে থাকা কলংক মোচনের। শেখ হাসিনা সে দায়িত্ব, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। জাতির পিতার কন্যা যদি এ কাজটি সু-সম্পন্ন করতে পারেন, তাতেই তিনি বিশ্ব ইতিহাস গড়বেন।

একটি দেশের সরকার যখন একজন ব্যক্তি বিশেষকে হত্যা করার নীল নকশা তৈরী করে তখন সে ব্যক্তির কী আর বেঁচে থাকা সম্ভব? কিন্তু আমাদের হাসিনা বেঁচে আছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিউতে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের জনসভায় পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলার লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা। ওই হামলা থেকে তাঁর প্রাণে বেঁচে যাওয়ার অলক্ষে নিশ্চয়ই মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারা রয়েছে। তিনি বেঁচে থাকবেন। কিছু অসমাপ্ত কাজ রয়েছে যে! সর্বপ্রধান কাজটি শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কেউ করবে-এমন আশা করা বৃথা। বর্তমানে দেশের অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল সরকার বিদ্যমান- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার সর্বোৎকৃষ্ট সময়। বিচার তো সরকার করবে না, বিচার করবে ট্রাইবুনাল। তবে সরকার পক্ষের আন্তরিক উপস্থাপনার ওপর মামলার ভাগ্য নির্ভরশীল।

রাজনৈতিক যুদ্ধে পরাজিত হয়ে জামায়াত-বিএনপি বর্তমান সংসদকে অকার্যকর, অবৈধ বলে আর্তনাদ করে চলেছে। অবশ্য তাতে সরকার নড়ে চড়েও বসছে না।

স্বাধীনতার সূচনালগ্নে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশে ফিরে অনেকেই তাঁদের স্বজনদের জীবিত পাননি। ইতোমধ্যে মীর জাফরের বংশধররা জীবন বাঁচাতে গর্তে ঢুকে পড়েছে, ছদ্মবেশ নিয়েছে, জন্মভিটা ত্যাগ করে পালিয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপি এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ঘাতকদের রাজনীতির মূল ধারায় পূনর্বাসন করেন। ফলে ২০ বছরের অধিক সময় ধরে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকের দল আর তাদের দোসররা রাষ্ট্র ক্ষমতা জবর দখল করে তা অপবিত্র করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। জেনারেল জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কেন যে খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন তা আরেক বিস্ময়। তবে ইতিহাসে তাঁর সঠিক অবস্থান নির্ধারিত হতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। ইতোমধ্যে ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াতে ইসলামী-৪৩ বছর যাবত অবাধ বংশ বৃদ্ধি করে চলেছে। ফলে কেউটে সাপে ভরে গেছে দেশ।

হাসিনা সরকার কখনোই গঠনমূলক বিরোধীদল পায়নি। অতীতে দেখি নির্বাচিত সরকারকে ‘ফেলে’ দেয়ার হটকারী আন্দোলনের সূচনা করতে চেয়েছে সরকার শপথ নেয়ার পর পরই। বিগত সংসদের (৯ম সংসদ) ৪১৮ কর্মদিবসের মধ্যে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া মাত্র ১০ (দশ) দিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে রাষ্ট্রের ক্ষমতা বলয়ের মধ্যে যাঁরা আছেন তাঁরা সঠিক পরামর্শ দেওয়ার চেয়ে হাসিনাকে তোষামোদ করতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। পাহাড় সমান প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, পথে পথে ঘাপটি মেরে থাকা শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে সরকার এখন একটা শক্ত অবস্থানে চলে এসেছে।

তারা আমার সোনার বাংলাকে দেশ হিসেবে স্বীকার করে না। অথচ বাংলা মায়ের বুকে জন্মানো শষ্য দানা খেয়ে এতদিন জীবন ধারন করে চলেছে। আবার তাদের গর্তে লুকানোর সময় এসে গেছে। প্রাণ ভয়ে আবার পালাবে তারা। কিন্তু এবারপালাবি কোথায়? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৬০ লক্ষ লোক হত্যার অন্যতম নায়ক আইখম্যান ১৫ বছরের অধিক আত্মগোপনে থাকার পর ইসরাইলের গোয়েন্দা জালে যখন ধরা পড়লো, শান্তিকামী বিশ্ববাসীর আনন্দ উল্লাস দেখে কে !

এবার এসেছে আমাদের পালা ! পলায়নরত শয়তান জনতার হাতে ধরা পড়বে-শৃংখলিত হবে। মাথা নিচু করে কাঠগড়ায় হাত জোড় করে দাঁড়াবে-বিচারের মুখোমুখি হবে। বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে যতদিন আজম্ম শত্রুদের বিচার কার্য সম্পন্ন না হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত, নির্যাতিত ও স্বজনহারা যাঁরা জমাট বাধা বেদনা বুকে ধারন করে আজও বেঁচে আছেন তাঁদের আবার অশ্রুসজল হয়েছে। এ অশ্রু আনন্দের। শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোক।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test