E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শাস্তি নয়, ক্ষমা!

২০১৪ ডিসেম্বর ২০ ১৭:৫৩:১২
শাস্তি নয়, ক্ষমা!

চৌধুরী আ. হান্নান : বর্তমানে চলমান ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বিতর্ক মিডিয়াকে ছাপিয়ে রাস্তা ঘাটের রসালো আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ? আসল না নকল ? এ প্রশ্ন এখন সর্বত্র।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কী এখন লজ্জায় মুখ লুকাবেন ? দেশ যখন বিশ বছরের অধিক সময় পাকিস্তানি প্রেতাত্মার শাসনাধীন ছিল, তখন তাঁরা কেবল মুখই লুকাইনি, হয়রানিরও শিকার হয়েছেন।

দেশব্যাপী ভুয়া সনদধারীদের পাকড়াও অভিযান শুরু করলে ‘দাঁড়কাকের’ সংখ্যা বাড়তে থাকবে। নকলদের দৌরাত্মে আসলরা বিপন্ন হয়। ওদের সংখ্যা যত বাড়বে, বিচার করা তত কঠিন হবে। আমাদের দেশে অনেক সময় বড় দুর্নীতির শিকড় খুঁজতে গেলে মাঝ পথে তদন্তই থেমে যায়। ইতোমধ্যে বড় বড় যারা জালে আটক পড়েছেন তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী, বিপুল অর্থ-বিত্তেরও মালিক। এক ছোট্ট ইঁদুর এসে কুট কুট করে জাল কেটে সিংহকে মুক্ত করে দেবে না, তাই বা কে বলবে ? অর্থ ও প্রভাব যার আছে আইন, বিচার তো তারই পক্ষে !

অপরাধের শাস্তি না হলে সমাজে অপরাধ বেড়ে যায়। আবার অনেক সময় ক্ষমার মাধ্যমে আরও ভাল ফল পাওয়া যায়। শাস্তি ও ক্ষমা আদালতের বাইরেও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে।

জানা গেছে, নতুন মানদণ্ডের ভিত্তিতে আবার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা তৈরি হবে এবং সেক্ষেত্রে খেতাবপ্রাপ্ত ও শহীদরাও সনদ হারাতে পারেন (সমকাল,০১ ডিসেম্বর, ১৪) খবরটি কেবল উদ্বেগজনকই নয়, একই সাথে হাস্যকর ও বেদনাদায়ক।

অন্যদিকে, রাজনীতির ময়দানে স্বাধীনতা বিরোধী একটি বিষবৃক্ষ ডালপালা বিস্তার করে রয়েছে। তারা তলে তলে ভুয়াদের মাসতুতো ভাই বনে যাওয়া ও বিচিত্র নয়। এভাবে ওরা মিলিত শাক্তি দিয়ে অবস্থা বুঝে সরকারের যে কোন শুভ উদ্যোগ ভন্ডুল করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে। আমাদের আতঙ্কের অন্ত নেই। আমরা দেখেছি যেখানে আসামি শক্তিশালী, পুলিশ তাকে খঁজে পায় না এবং তখন বাদীকে খুঁজে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক. ম মোজাম্মেল হক আসল, নকল বিতর্ক অবসান করে একটা স্বচ্ছতা আনার জন্য মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে যে সফলতা এসেছে তা কম নয়।

ছাত্র জীবনে প্রথম সারির ভালছাত্র, পেশা জীবনে সরকারি চাকুরীতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত সচিবগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে কোন প্রকার অংশগ্রহণ না করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করে যে অনৈতিক কাজটা করেছেন, সে লজ্জা কেবল তাদেরই নয়, এটা জাতীয় লজ্জা। তারা জাতির জীবনে দুর্গন্ধ ময়লা লাগিয়ে দিয়েছেন। তাদের বিচার কে করবে ? বিচার করলেই কী পাহাড় সমান লজ্জা দূর হবে ?

যাঁদের নিঃস্বার্থ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন দেশের মুখ দেখেছি তাঁরা অনেকেই জীবনে দুর্বিষহ জ্বালা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আর যাঁরা আজও বেঁচে আছেন তারা বয়োবৃদ্ধ, একদিন প্রয়াত হবেন। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরব-গাঁথা অম্লান থাকবে যুগ যুগ ধরে, প্রজম্ম থেকে প্রজম্মে। তখন তো কেবল মরনোত্তর সম্মান, সংবর্ধনা জানিয়ে আমাদের তৃপ্ত থাকতে হবে।

সকলের বিচার করতে চাইলে কারও বিচার করা যায় না। সনদ বাতিল, বিভাগীয় শাস্তি সবই তো একধরনের বিচার। তাছাড়া ছিটানো মধু দেখে মাছি এসেছে, তাতে দোষ দেখি না। চোখের সামনে পদোন্নতি, অর্থ আগমনের লোভ সংবরণ করা তো সহঝ নয়! তাই বলে মূল হোতা, রাঘববোয়ালদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছি না। মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য বিদেশী বন্ধুদের প্রদত্ত ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতি ও মুক্তিযুদ্ধার ভুয়া সনদ ক্রয় বিক্রয় কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা বা তা বন্ধ না করার ব্যর্থতার দায়ে তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামকে তদন্তের আওতায় না নিলে অন্যদের বিচার করার নৈতিক অধিকার থাকতে পারে না। আর ওই মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা যারা একই কায়দায় নিজেরা ব্যক্তিগত লাভের আশায় এ কুকর্মে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করা যায় কিনা তা যত দ্রুত বিবেচনা করা যায় ততই ভাল। যাতে ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধকে কেউ বাণিজ্যের উপজীব্য করে কলঙ্কিত করতে সাহস না পায়।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test