E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কার খাবার কে খায়!

২০১৫ জানুয়ারি ১৬ ১৬:১৮:৪৫
কার খাবার কে খায়!

চৌধুরী আ. হান্নান : সাধারণ ধারণা ছিল গত জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। ওই সময়ে কয়েকটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে বিএনপি’র বিপুল ভোটে বিজয় দেখে পরিস্কার হতে থাকে যে ভোটারগণ আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ তো করলই না, নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বসল।

অনেক বিশ্লেষক জোর দিয়ে বলতে চেষ্টা করেছেন কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসত। খালেদা জিয়ার স্বল্প শিক্ষিত, পথভ্রষ্ট পুত্রকে সভা সমাবেশে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বর্ণনা করার রেওয়াজ আবার চালু হত।

এতদিন বিএনপি হতাশার সাগরে নিম্মজিত থেকে হঠাৎ আন্দোলন, অবরোধের নামে আবার জ্বালাও পোড়াও শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু জনগণ তো তাদের সাথে নেই, যেমন সম্পৃক্ত ছিল না ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে। ২০১৩ সালের শেষের রাজনৈতিক বিভীষিকা মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যাওয়ার আগেই আবার তা শুরু করে দিয়েছে বিএনপি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করার নজির বিএনপি’র নতুন নয়। জামায়াত সমর্থিত দলটির দূরদর্শিতা ও ধৈর্যের বড় অভাব।

আমরা অতীতে দেখি সরকার শপথ নেয়ার পর পরই নির্বাচিত সরকারকে ‘ফেলে’ দেয়ার হঠকারী আন্দোলন শুরু করেছিল বিএনপি। বিগত সংসদের (৯ম সংসদ) ৪১৮ কর্ম দিবসের মধ্যে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া মাত্র ১০ (দশ) দিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন। এমন বিএনপি দিয়ে আমরা কী করব ?

‘বিএনপি দেখলেই পিটুনি দাও’- সরকারের এমন নীতি কোন সুস্থ লোক সমর্থন করবে না। রাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে দলীয় গুণ্ডা আর পুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রতিপক্ষকে আঘাত করা ছাড়া সরকারের হাতে যখন অন্য কোন গণতান্ত্রিক ‘অস্ত্র’ থাকে না, তখন বুঝতে হবে সর্বনাশটা কাছাকাছি চলে এসেছে। আন্দোলন, অবরোধে ক্ষয়ক্ষতির জন্য বিএপিকে যতই দোষারোপ করা হোক না কেন সরকার দায় এড়াতে পারবে না। কারণ জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের।

আওয়ামী লীগের অনুধাবন করা দরকার ছিল যে জনগণ ভালবেসে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসায়নি তাদের। বিএনপির রাজনৈতিক ভুল এবং নির্বাচন বর্জনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের ফলে আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। ক্ষমতার মসনদে যাদের থাকার কথা ছিল তার আজ রাস্তায়।

বর্তমান চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের আগুনে ঘি ঢেলেছেন তারেক রহমান। তিনি উদ্দেশ্য মূলকভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমাানকে উসকানিমূলক আক্রমণ করে আওয়ামী লীগ নেতাদের মাথা গরম করে দিতে সফল হয়েছেন। মাথা গরম হলে তো মুখ দিয়ে কথা বের হবে না, বের হবে ‘আগুন’। হয়েছে ও তাই। আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা বলে ফেলেছেনÑবঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করার জন্য বেগম জিয়া/তারেক রহমান জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে বিএনপিকে সভা, সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে। উত্তেজনায় নেতারা ভুলে যান রাজনীতি, দেশ কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়।

ইতিহাসের যে আসনে বঙ্গবন্ধুর থাকার কথা তিনি সে আসনেই থাকবেন। কেউ তাঁকে খাটো করতে পারবে না। আর বঙ্গবন্ধুর প্রতি অতিভক্তি দেখাতে গিয়ে যারা বিএনপিকে সভা, সমাবেশ করার করার শর্ত দেয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে সম্পৃক্ত করেন তাদের উদ্দেশ্য যা-ই হোক তারা সরকারের মিত্র নয়, শেখ হাসিনার জন্যও এক বাড়তি বোঝা। আসলে নাশকতার আশংকায় বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না সরকার।

রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের নগ্ন থাবা থেকে মানুষ কত দিনে মুক্তি পাবে তা কেউ জানে না। সম্পদ লুটের মহোৎসব থেকে আমরা মুক্তি চাই। কামড়া কামড়ি করে খাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা কবে শেষ হবে ? জামায়াতিরা তো দেশের মানচিত্রটাই খামচে, ছিঁড়ে খেতে চায়।

বিখ্যাত মার্কিন কথা সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন (১৮৩৫-১৯১০) এর একটি উক্তি এখানে উল্লেখ না করে পারছি না। জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি মন্তব্য করেছিলেন- ‘আমি যতই মানুষ চিনছি, ততই কুকুরকে ভালবাসছি’। তিনি যদি আজ বেঁচে থাকতেন, আমাদের নেতাদের প্রতিপক্ষের সমালোচনা করার ভাষা শ্রবন করে কী বলতেন তা বড়ই ভাবার বিষয়।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট যা করছে তা আলোচনা নয়, তা হলো সন্ত্রাস আর নাশকতা। বিএনপি’র এক বড় নেতা সেদিন বললেন- ‘আমরা কীভাবে আন্দোলন করব? রাস্তায় বের হলেই পুলিশে ধরে, জেলে ঢুকায়, রিমান্ডে নেয়।’

এই যদি হয় নেতার কথা তা হলে বিএনপি’র মুরোদ বুঝা গেছে ! জননিরাপত্তার প্রয়োজনে সরকার নাশকতা কঠোর হস্তে দমন করবে এবং তাতে জনগণের ও সমর্থন থাকবে। ‘সংলাপে’ কোন সুফল পাওয়ার সম্ভবনা নেই। কারণ সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা গেলেও ‘তালগাছটা’ তারা ছাড়বে না।

এক্ষণে, বিএনপি’র জন্য একটি পথই খোলা আছে। তা হলো অবরোধ, নাশকতা বাদ দিয়ে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য ধৈর্য্য ধারণ করা। আরও ৪ (চার) বছর ধৈর্য্য ধরা বড়ই কঠিন কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ের সম্ভবনা প্রায় শতভাগ। কারণ ইতিমধ্যে সরকারের জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী, বাকি সময়ে তা শুন্যের কোঠায় এসে গেলে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।

এখন খালেদা জিয়াকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি কী দেশবাসীকে পুড়িয়ে মারা অব্যাহত রাখবেন না কি নির্বিঘ্নে ক্ষমতারোহন করার জন্য ধৈর্য্য ধারণ করবেন।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test