E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাতির বিবেক যখন দিশেহারা !

২০১৫ জানুয়ারি ২৬ ১৬:৪৩:৪৭
জাতির বিবেক যখন দিশেহারা !

চৌধুরী আ. হান্নান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি এক আলোচনায় দেশব্যাপী চলমান সহিংসতার বিষয়ে বলেছেন-‘ব্যর্থ রাষ্ট্র ঠেকাতে সংলাপ জরুরী’। তিনি একজন স্বনামধন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, তাঁর লেখা বই কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। রাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর মতামতকে বিশেষজ্ঞের মতামত হিসেবে ভাবেেত হবে। অপরদিকে, দেশের মানুষ রাজনীতিকদের কথা গুরুত্ব দেয় না, বিশ্বাস করে না। তাদের কথা মিথ্যায় ভরা, আবর্জনায় পূর্ণ। ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়া- এর বাইরে তাদের কোন কথা আছে তা কেউ মনে করে না। কিন্তু ড. এমাজ উদ্দিনের মত বুদ্ধিজীবীরা যখন কিছু বলেন, আমাদের তো নড়েচড়ে বসতেই হয়। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিম্নের প্রশ্নগুলো পেশ করতে চাই :

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিএপি’র রাজনীতিতে বিশ্বাসী, বিএনপি’র অন্যতম অভিভাবক, সংকটকালে পরামর্শদাতা। গাজীপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিএপি পার্থীর বিপুল ভোটে বিজয়ের পর যখন পরিষ্কার হয়ে আসছিল যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে (৫ জানুয়ারি, ২০১৪) বিএনপি’র বিজয়ের উজ্বল সম্ভাবনা দেখা দেয়া সত্ত্বেও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিল, তখন তিনি বিএনপিকে সঠিক পরামর্শটি দেননি কেন ?

ভোটের রাাজনীতি বিবেচনায় বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। আগামী কয়েক বছরে তা শুন্যের কোঠায় নেমে গেলে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না। সেক্ষেত্রে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে (২০১৯) বিএনপি’র বিজয়ের সম্ভবনা প্রায় শতভাগ। তবে কেন বিএনপি’র মুরুবিবরা জ্বালাও পোড়াও বাদ দিয়ে তাদের আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পরামর্শ দেন না ?

বর্তমানে আওয়ামী লীগ আছে গদি রক্ষার যুদ্ধে আার জামায়াত সমর্থিত বিএনপি আছে গদি দখলের লড়াইয়ে। দুই মত্ত হস্তীর উত্তাল লড়াইয়ে ক্ষেতের পাকা ফসল মাটিতে মিশে যাচ্ছে। এক পক্ষ ধরাশায়ী না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

জাতির বিবেক বুদ্ধিজীবীরা যখন দ্বিধাবিভক্ত হন, আমরা হতাশায় ডুবে যাই, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ি। ডা. এমাজ উদ্দিন বিএনপি নেত্রীকে সঠিক পরামর্শ দিতে গেলে তাঁর ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রদূতের মত পদ-পদবি পাওয়ার সম্ভবনা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সঠিক পরামর্শ না দিয়ে তিনি বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার কথা বলে বিএনপিকে খুশি করছেন, নাশকতাকে উস্কে দিচ্ছেন। অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন যাঁরা কেবল সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কারণে প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ লাভজনক পদে আছেন অথবা সরকারের নানা আনুকুল্য পেয়ে থাকেন। তাঁরা কৌশলে কথা বলেন, ঝামেলা এড়িয়ে চলেন। জাতির সংকট কালেও যারা সাদাকে সাদা বলার সৎসাহস দেখাতে চান না, তাদের কেন আমরা জাতির বিবেক বলব ? তারা বুদ্ধিজীবী ননÑতারা আসলে দক্ষ ও কৌশলী পেশাজীবী।

এত উর্বর মাটির দেশটা কখনও ব্যর্থ রাষ্ট্র হবে না। ড. এমাজউদ্দিনের বাসনা পূর্ণ হবে না ! বাংলাদেশ কখনও সোমালিয়া, কঙ্গো, সুদান হবে না। রাজনৈতিক সংঘাত ছাড়া দেশের অগ্রগতির পথে তেমন কোন বাধা নেই।

বছরে ৬ হাজার কোটি ডলারের ও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাসীরা আমাদের অর্থনীতিতে যোগান দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পোষাক শিল্পের উত্থান বিস্ময়কর। আর যারা কৃষিকাজে নিয়োজিত তার দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এনে দিয়েছেÑ তারা জাতীয় বীর। দেশের এখন সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবার পালা।

বর্তমানে চলমান বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন-নাশকতা কঠোর হাতে দমন করা ছাড়া সরকারের অন্য কোন পথ নেই। জনগণ তাদের সাথে থাকবে। জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। বিএনপি’র অতীত ভুলের মাশুল বিএনপিকেই দিতে হবে, তাদের হতাশার আগুনে অন্যদের দগ্ধ করার অধিকার তাদের নেই।

আর সরকার যদি এখন সাধারণ মানুষের পাশে এসে না দাঁড়ায় ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ কেবল বিএনপি’র মত হতাশার সাগরে হাবু ডুবু খাবে না, মুসলীম লীগের মতোই বিলীন হয়ে যেতে পারে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test