E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগুন নয়, অন্ধকারে আলো চাই

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৭:২০:২৪
আগুন নয়, অন্ধকারে আলো চাই

চৌধুরী আ. হান্নান : বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর সভাপতি ও প্রখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী কয়েকদিন পূর্বে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে দুই নেত্রীকে এখনই সংলাপে বসার অনুরোধ করেছেন (প্রথমআলো, ২৫ জানুয়ারি)। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তিনি একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। তাঁর সাথে আলাপচারিতায় রোগীর অর্ধেক রোগ এমনিতেই সেরে যায় এমন কথা প্রচলিত আছে।

তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। অবশ্য কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। কারণ তাঁর তৎকালীন নেত্রী ও নেত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। বর্তমান চলমান বিভীষিকার জন্যও এই মাতা পুত্রকে দায়ী করা হয়। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি সফল কী ব্যর্থ তা একেক পক্ষ একেকভাবে বিশ্লেষণ করবেন। কিন্তু অনেকেই বিশ্বাস করেন তাঁর পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সেদিন নৈতিকার বিজয় হয়েছিল। কাজেই তিনি সুযোগ্য রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং বর্তমানে একজন স্বানামধন্য সফল চিকিৎসকও।

এক্ষণে, আমি হৃদয়ে পেট্রোল বোমার ক্ষত নিয়ে, একজন সাধারণ নাাগরিক হিসেবে তাঁকে বলতে চাইÑ আপনি জাতির এ ‘অসুখের’ যথাযথ ঔষধ বাতলাননি। আপনি একজন পরিপক্ক রাজনীতিবিদ, আপনি ঠিকই জানেন বর্তমানে দুই নেত্রীর সংলাপ সম্ভব নয়। তবু কেন রাজনৈতিক বক্তব্য? শেখ হাসিনা তো আইনগত ভাবে নির্বাচিত সরকার প্রধান। তিনি কেন এখন লোক দেখানো সংলাপে বসবেন ?

জনাব বি. চেীধুরী কেবল বেগম খালেদা জিয়াকে কেন সন্ত্রাস বন্ধের অনুরোধ করলেন না ? জাতির বিবেক বলে যাদেরকে বিবেচনা করা হয় তারা যদি জাতির সংকট কালে সঠিক কাজটি না করেন তা হলে আমরা অসহায় বোধ করি। ওই একই সাক্ষাৎকারে জনাব বি চৌধুরী আরও বলেছেন কারা নাশকতা করছে আমরা তো জানি না, মানুষের মৃত্যু আমাকে বিচলিত করে।

শীর্ষ নেতাদের নিদের্শে বিএনপি জামায়াতের কর্মীরা বা তাদের এজেন্টরা এ সকল সহিংসতা ঘটিয়ে চলেছে এমন সত্য যখন বি. চৌধুরীর মত বিবেকবান ব্যক্তিরা বলতে চান না তখন আমরা অনেক বেশি বিচলিত হই। এ আমরা কেমন মানুষ আগুনে ঝলসে মারা যাওয়া সন্তানের বাবা-মা এর সাথে সহমর্মী হতে পারি না !

জনাব বি. চৌধুরী কী একটি উদ্যোগের শুভ সূচনা করবেন ? তাতে আগুন নির্বাপিত হয়ে অন্ধকারে আলো দেখা দেবে। তা হলো তাঁর নেতৃত্বে বিকল্পধারা বাংলাদেশের কর্মীদের মৌন মিছিল নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়ে এ নাশকতা বন্ধের নির্দেশ দেন। বিএনপি গেট খুলুক বা না খুলুক দেশবাসীর কাছে বার্তা পৌঁছে যাবে যে, আন্দোলনের নামে সহিংসতা যারা শুরু করেছে, তাদেরকেই তা বন্ধ করতে হবে। তারপর একটির পর একটি মিছিল যেতেই থাকবে। দ্বিতীয় মিছিলটি হবে নারী নেতৃত্বে মা-বোনদের মিছিল পুত্র হারা মা এর কাছে, স্বামীহারা বিধবার কাছে। তারপর ফুটপাতের দোকানী, সবজি উৎপাদনকারী, পোষাক শ্রমিক, পরিবহন মালিক শ্রমিক, পেশাজীবি, ব্যবসায়ী আপামর জনসাধারণ দলে দলে। বেগম জিয়ার দিল তো আর পাষাণ নয় যে বিগলিত হবে না ! একদিন ঠিকই গণ-আকাংখার বিস্ফোরণ ঘটে যাবে। এখন কেবল সূচনা সঙ্গীত বাজাবার জন্য একজন বংশীবাদক চাই।

এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চেীধুরীর মনে জমাট বাধা ক্ষোভ, অভিমান থাকার কথা। তিনি ছিলেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব। সদ্য বিধবা গৃহবধূ বেগম জিয়াকে রাজনীতিতে হাতে খড়ি, সংসদীয় রীতিনীতি পাশে থেকে শিখিয়েছেন এ শিক্ষাগুরু। স্বাধীনচেতা এ নেতাকে পরবর্তীতে মাতা-পুত্র কী গুরুদক্ষিণা দিয়েছিলেন তা দেশবাসী জানে। তবু আমরা বলি তিনি কিছুই হারাননি। তাঁর পরিনতি অনেকটাই মোঘল সেনাপতি বৈরাম খাঁ এর মত।

মোঘল সম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট আকবর ১৩ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহন করেন। বিচক্ষণ বৈরাম খাঁ সম্রাটের অবিভাবক নিযুক্ত হন। এই ‘খাঁ বাবা’ নিরক্ষর শিশু সম্রাট আকবরকে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আচার আচরণসহ সকল শিক্ষা দীক্ষার মাধ্যমে ভারতবর্ষের উপযুক্ত সম্রাটে পরিণত করে তুলেন। কিন্তু এক সময় আকবরের মনে হলো বৈরাম খাঁ এর এখন আর প্রয়োজন নেই।

মহান ব্যক্তিরা জাতীয় সংকটে ব্যক্তিগত মান-অভিমান মনে রাখেন না। আশা করব বি. চৌধুরীর মত অথবা দেশের বরেণ্য বিশিষ্ট কোন নাগরিক প্রথম বাঁশী বাজানোর কাজটি করবেন যে পথ ধরে আলো এসে অন্ধকার দূর করে দেবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test