E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জনশক্তি রপ্তানী অভিবাসন গতিকে ত্বরান্বিত করবে

২০১৫ মার্চ ০২ ১৫:০৫:৫০
জনশক্তি রপ্তানী অভিবাসন গতিকে ত্বরান্বিত করবে

মো. আতিকুর রহমান : দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তির যে ক’টি মাধ্যম বিশেষ অবদান রেখে চলেছে তার মধ্যে জনশক্তি রপ্তানী খাতটি অন্যতম। যা দেশের অর্থনীতির ভীতকে আরো মজবুত ও শক্তিশালী করছে। বিশ্ব মন্দা সত্বেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে যেমন জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখছে, অনুরূপভাবে জনশক্তি রপ্তানীর মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব নিরসনে খাতটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক সংঘাত ও অস্থিরতায় দেশের প্রধান রপ্তানীখাত তৈরি পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য উৎপাদন শিল্পে যে নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে তা কাটিয়ে উঠতে সরকারকে জনশক্তি রপ্তানীর দিকে অধিক নজর দিতে হবে।

ইতোমধ্যে বর্তমান সরকারের শ্রম ও প্রবাসী কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বর্হিবিশ্বে জনশক্তি রপ্তানীর ক্ষেত্রে যে দ্বার উন্মোচন করছে, তা যে কোন উপায়ে ধরে রাখতে হবে। আমরা চাই না, কোনো মহলের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে জনশক্তি রপ্তানী খাতে কোন ধরনের স্থবিরতা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হোক, দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হোক। তাই জনশক্তি রপ্তানীকে আরো বেগমান করতে বায়রাসহ অন্যান্য রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে সরকারের যদি কোন ধরনের সমস্যা ও মতপার্থক্য থাকে তবে তা যতদ্রুত সম্ভব পারস্পারিক আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়গুলি নিষ্পত্তি করতে হবে।

যদিও একথা সত্য, বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে বায়রার বিরুদ্ধে অতীতে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হলেও বিশ্ব শ্রমবাজারে জনশক্তি পাঠানোর পথ তৈরিসহ নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান সেই সঙ্গে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে শ্রমিক প্রেরণের দ্বার উন্মুক্তে বায়রার অবদান অস্বীকার্য। বিষয়গুলি সরকারকে যেমন অনুধাবন করতে হবে, ঠিক তেমনি উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জনশক্তি রপ্তানীর পথকে কন্টকমুক্ত করতে হবে। বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্টগুলিকে অধিক মুনাফা লাভের পথ থেকে সরে এসে জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে হবে। স্বল্পমূল্যে জনশক্তি রপ্তানী গতিকে ত্বরান্বিত করতে বিশেষ নীতিমালার মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্টগুলির মধ্যে পরস্পরকে সহযোগিতা, সমস্যা সমাধানে সমঝোতা ও সকলকে নমনীয় পথ অবলম্বন করে দেশের স্বার্থে জনশক্তি রপ্তানী প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে হবে। এতে একদিকে আমাদের বিদেশী সাহায্যের নির্ভরশীলতা যেমন কমবে, ঠিক তেমনি দেশের অর্থনীতি বুনিয়াদ আরো মজবুত ও সুদৃঢ় হবে।

এরই ধারাবাহিকতায় জনশক্তি রপ্তানীর ক্ষেত্রে আমাদের দেশের চাইতে যেসব দেশ এগিয়ে আছে তাদের নীতি অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাস্তবসম্মত স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। অভিবাসন ব্যয় ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরো জোরদার করতে হবে। আর এই কাজে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সরকারকে এই খাতে শৃংখলা এবং গতি ফিরিয়ে আনতে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলো যথাযথ বাস্তবায়নে সরকারকেই সেগুলোর দিকে অধিক মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। যদিও একথা সত্য, বিগত পাঁচ বছরে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স অন্যান্য বছরের তুলনায় অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে।


তথ্যমতে, ২০০৯ হতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রেমিটেন্স প্রাপ্তির হার ২৩৭% বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩.৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৪ তে তা আরো বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা মোট জাতৗয় উৎপাদনের ১১.৪৯ শতাংশ। মূলত: এই রেমিটেন্স জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির স্বার্থে ইতিবাচক।

সরকারের ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১’ ও মধ্যম আয়ের দেশ বাস্তবায়নে জনশক্তি রপ্তানীর গতিকে আরো বেগবান ও প্রবাসীদের ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরী। এতে দেশের বেকারত্ব দূরীকরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি লাভের ক্ষেত্রে এক সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আর এই কাজটি বাস্তবায়নে সরকারকে নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান, অভিবাসন ব্যয় কমাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ, শ্রমিকদের বিদেশী ভাষায় পারদর্শিতা অর্জনের ব্যবস্থাকরণ, প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজের চাহিদার আলোকে কোর্স কারিকুলামের মানন্নোয়ন, প্রতিবছর দেশে বিদেশী নিয়োগকারীদের সমন্বয়ে শ্রমমেলার আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ সর্বোপরি ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ আবাসন ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারকে বিভিন্ন দেশের চাহিদানুযায়ি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, প্রবাসে নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, অভিবাসী কর্মীদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশী দূর্তাবাসগুলোকে আরো অধিক শক্তিশালী ও প্রবাসী কর্মীদের যে কোন সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, বিভিন্ন দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক সাধন, শ্রেণী ভিত্তিক কর্মী প্রেরণের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, বিদেশগামী কর্মীদের ভাষাগত ও কর্মক্ষেত্রের দক্ষতা উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানামুখী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি ও মনিটরিং নিশ্চিতকরণ , নারী কর্মীদের ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ অভিবাসন ও কর্ম নিশ্চিতকরণ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিদেশীদের চাহিদানুয়ায়ী কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার, ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোকে আধুনিক ও যুগোপযোগীকরণ, কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্টগুলোকে বিশেষ আইন ও নীতিমালার মধ্যে আনায়ন ও সেগুলির দিকে সরকারের মনিটরিং জোরদারকরণ, কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখা বৃদ্ধিসহ সেগুলোকে আরো অধিক কার্যকরীকরণ, অবৈধ ভাবে সমুদ্র পথে বিদেশে কর্মী প্রেরণে দালাল বা প্রতারক চক্রের অপতৎপরতা রোধে অধিক প্রচারনা গ্রহণ, মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের গডফাদার ও রিক্রুটিং এজেন্টগুলোকে চিহিৃতকরণ ও সেগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুক ব্যবস্থাগ্রহণ ও দ্রুততার সাথে বিচার কার্য সম্পূর্ণ করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে জনগণের আস্থা আনায়ন। বিশেষ করে, বিদেশে প্রেরিত কর্মীদের নানামুখী হয়রানি রোধসহ কমমূল্যে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত আবাসন ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে তাদের প্রেরিত মূল্যবান রেমিটেন্সের মাধ্যমে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন তথা অর্থনৈতিক চাঁকাকে সুদৃঢ় করা বর্তমানে অধিক জরুরী বলে মনে করি। আর যদি সরকার উক্ত কাজগুলি দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করতে পারে তবে এই খাতে যেমন গতি আসবে, ঠিক তেমনি সরকারের ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন করাও সম্ভব হবে।

কেননা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সার্বিক অগ্রগতি নির্ভর করে ঐ দেশের দক্ষ জনশক্তি, অধিক কর্মসংস্থান এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহারের ওপর। কিন্তু আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা, কর্মসংস্থানের স্বল্পতা, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারকদের উদাসীনতা, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা, বেকার যুবকদের জন্য পর্যাপ্ত ট্রেনিং সেন্টার না থাকা, কূটনৈতিক তৎপরতার অভাব, বিগত সরকারের ভ্রান্তনীতি, কিছু কিছু রিক্রুটিং এজেন্টদের অনৈতিকত কর্মকাণ্ড, বিশ্বমন্দা যা ইতোপূর্বে এই খাতে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছিল তা কাটিয়ে উঠতে বর্তমান সরকার যে ভাবে কাজ করছে অতীতেও উক্ত ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে এমনটিই আশা করি।

যদিও দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ যারা বেকারত্বের গ্লানি ও জীবিকার তাগিদে সোনালী স্বপ্ন নিয়ে অবৈধ পথে প্রবাসে পাড়ি দিতে গিয়ে মানবপাচারকারী দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে, মালয়েশিয়ার উপকূলীয় গহীন অরণ্যে ও জঙ্গলে পালিয়ে একপ্রকার দুর্বিসহ অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে অথবা জীবিকার তাগিদে অবৈধভাবে সাগরপথে ট্রলারে অথবা সাম্পানে মানবপাচারকারীদের প্রতিটি ধাপে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিয়েও তাদেরকে নানামুখী নির্যাতনের স্বীকার হয়ে প্রাণ দিতে হতে হচ্ছে, অনেককে আবার পাচারকারীচক্রের জিম্মি দশা থেকে উদ্ধারে পরিজনদের শেষ সহায়-সম্পদ ও ভিটে মাটি পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে, আবার অনেককে বিভিন্ন কারাগারে মানবেতর দিন কাটাটে হচ্ছে, মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত এমন সংবাদ আমরা আর দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত জনশক্তি রপ্তানী প্রক্রিয়া। আর এই প্রক্রিয়াকে ফলপ্রুসু করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্তত ঐসব নিরীহ মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে হলেও এই ধরনের মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা রোধকল্পে সরকারকে যতদ্রুত সম্ভব এর মূল হোতাদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দালালদের এই ধরনের প্রলোভন থেকে রক্ষা পেতে গ্রামের নিরীহ, বেকার ও অসচ্ছল পরিবারের যুবক তথা অভিভাবকদের সর্বদা সর্তক থাকতে হবে। এই ধরনের প্রবণতা রোধকল্পে অধিক জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। এর সুফল পেতে সরকারকে বিদেশে কর্মী প্রেরণ ও কর্মসংস্থানের পথে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আগে দূর করতে হবে। বিদেশ গমন প্রক্রিয়াটিকে আরো সহজ করতে গ্রাম, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মীদের কম্পিউটারাইজ বিশেষ ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। দালাল চক্রের অপতৎপরতা ও সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নৌবাহিনীর সদস্য ও আইনপ্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থাকে আরো অধিক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন ও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, চাহিদানুযায়ী শ্রমশক্তির জন্য প্রশিক্ষণ ও নতুন নতুন বাজার সম্প্রসারণ করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, এই খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং তাদের সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারকে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান তথা বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্টগুলোর সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকারি নিয়মের মধ্যে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, কেননা সরকারের পাশাপাশি এইসব এজেন্টগুলোই জনশক্তি রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক রেমিটেন্সের দ্বারা দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে আরো অধিক মজবুত করতে কাজ করে যাচ্ছে। জনশক্তি রপ্তানীর কাজের সঙ্গে জড়িত এখনও যেসব ব্যবসায়িক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তাদেরকে পুনরায় উক্ত কাজে উদ্বুদ্ধ করতে তাদের জন্য উপযুক্ত কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশে কর্মী প্রেরণে দালালচক্র ও অধিক মুনাফা লোভী ব্যক্তিদের অপতৎপরতা রোধ করার পাশাপাশি সরকার অনুমোদিত জনশক্তি রপ্তানী রিক্রুটিং এজেন্টগুলোকে আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতায় এই গতিকে বেগবান করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতে হবে, অপর দিকে ঐসব বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্ট দ্বারা আর যেন কোন ব্যক্তি বা কর্মীকে প্রবাসে গমনের পথে কোন প্রকার হয়রানির স্বীকার হতে না হয় সেইদিকে সরকারের কঠোর মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।

যদিও বর্তমান সরকার বিগত সময়ে এই খাতের নানামুখী প্রতিবন্ধকতা ও বিশৃংখলতা কাটিয়ে জনশক্তি রপ্তানীর গতিকে ত্বরান্বিত করতে বায়রাকে অন্তভ’ক্ত করে বাস্তবসম্মত নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যা ইতিবাচক বলে মনে করি। ইতোমধ্যে এই খাতে সরকারের সাফল্য স্বরূপ বলতে হয়, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও ইরাকে প্রায় মোট ১১ লক্ষ বাংলাদেশী অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দান, যুদ্ধরত লিবিয়া থেকে শ্রমিক প্রত্যাহার এবং জি-টু-জি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় বন্ধ হওয়া শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণ এবং সেখানে কমখরচে মাত্র মাথাপিছু ২৪,০০০/- থেকে ২৭,০০০/- হাজার টাকায় কর্মী প্রেরণ, সৌদি আরবে বন্ধ হওয়া শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণ এবং সেখানে মাত্র ১৫,০০০/- থেকে ২০,০০০/- হাজার টাকায় কর্মী প্রেরণ, জর্ডানে বিনা খরচে মহিলা কর্মী প্রেরণ এবং ইপিএস এর মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বমোট ৮৫০ মার্কিন ডলারে কর্মী প্রেরণ। সরকারি কম খরচে বিদেশে কর্মী প্রেরণের প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিদেশে শ্রমিকদের নানা ধরনের হিডেন চার্জের সম্মুখিন হওয়ার যেসব তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে তা আমলে নিয়ে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এমনটিই প্রত্যাশা করি। এছাড়ার সরকার বিদেশে নতুন শ্রম উইং সৃজন, ভিজিলেন্স টাস্কফোস গঠন, অভিবাসন ব্যয় হ্রাস ও উক্ত প্রক্রিয়ায় সুশাসন নিশ্চিতকরণ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক স্থাপন, কর্মী প্রেরণে নানা দেশের সাথে সমঝোতা স্বাক্ষর, বোয়েসেলকে আরো কার্যকারীকরণ, প্রবাসে মৃত কর্মীর পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান, প্রবাসে আটককৃত কর্মীদের আইনগত সহায়তা প্রদানসহ দেশে ফেরত আনায়ন, সহজ শর্তে বিদেশ গমণকারীদের ঋণ প্রদান, ভিসা কার্ড প্রদান, দক্ষতা উন্নয়ন তহবিল গঠন, শিক্ষা বীমা চালু, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ অনুমোদন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি ২০০৬ কে সময়োপযোগী করে সংশোধনপূর্বক বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি ২০১৪ খসড়া প্রণয়ন, অভিবাসন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে ডিজিটাইজেশনকরণ, প্রবাসীদের শিক্ষাবৃত্তি চালু বর্তমান সরকারের ইতিবাচক সাফল্য বলে মনে করি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সৌদি প্রতিনিধি দলের আগমনসহ বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে ঐদেশে ১০ হাজার কর্মী প্রেরণের যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সরকারের এই ধারাবাহিকতা বজায়ে থাকলে জনশক্তি রপ্তানী গতি আরো ত্বরান্বিত হবে।

যদিও এই মূর্হুতে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জে নয় মাসে ৬৬ লাখ প্রবাসীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রদান। সরকার তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে সক্ষম হবে এমনটিই আশা করি। ৬৬ লাখ প্রবাসীদের শঙ্কা নিরশনে সরকার বাস্তব সম্মত উদ্যোগ গ্রহণ ও তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে সরকারের উল্লেখিত সাফল্যের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখবে, দেশের জনগণ এমনটিই প্রত্যাশা করে। সেইসঙ্গে নিরাপদ ও সম্মানজনক বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জালিয়াতি ও প্রতারণারোধ, চাহিদানুযায়ী দক্ষ কর্মী তৈরি, কর্মী গমন ও অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণসহ এই খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্টগুলোর মধ্যে একটি সুষ্ঠু ধারার প্রতিযোগিতা তৈরিসহ প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যা এদেশের জনশক্তি রপ্তানীর অভিবাসন গতিকে অধিক ত্বরান্বিত, নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করবে। জনশক্তি রপ্তানীর পথকে মসৃন করতে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্টগুলি অধিক আন্তরিক হবেন এমনটিই জাতি প্রত্যাশা করে।

লেখক : কলামিষ্ট

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test