E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মানব সৃষ্ট দুর্বিপাক ও বিবেকের দায়বদ্ধতা

২০১৫ মার্চ ০৯ ১৮:৪৭:২৮
মানব সৃষ্ট দুর্বিপাক ও বিবেকের দায়বদ্ধতা

চৌধুরী আ. হান্নান : রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে উদ্ভূত সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা করছে সরকার। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে উপস্থিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের নিয়োজিত দুর্বৃত্তের ছোঁড়া বোমার আঘাতে দগ্ধ অসহায় মানুষদের প্রত্যেকের হাতে ১০(দশ) লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র তুলে দিয়েছেন। যদিও টাকায় আগুনে পোড়ার কষ্ট লাঘব হয় না, তবু তাদের পরিবার কিছুটা হলেও আর্থিক সচ্ছলতা পাবে। হরতাল-অবরোধে যাদের যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদেরকেও আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। ক্ষতির তুলনায় এ অর্থ যথেষ্ট বলা যাবে না, তবু একটি শুভ কাজের সূচনা হয়েছে নিশ্চয়ই তা বলা যাবে।

জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া যে রাজনৈতিক আন্দোলন সফল হয় না, বিএনপি-জামায়াত জোট তা আরও একবার প্রত্যক্ষ করল। তাদের তথাকথিত আন্দোলনের সর্বশেষ সংস্কার ‘নাশকতা-সহিংসতা’ সরকারের গৃহিত পদক্ষেপে ইতোমধ্যে স্তিমিত হয়ে আসছে। তা নিস্তেজ হয়ে থেমে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেক্ষেত্রে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকেই বিজয়ী পক্ষ বলতে হবে। বিজয় অর্জন করাই যথেষ্ট নয়, ধরে রাখার যোগ্যতা থাকা চায়। একটি স্বাধীন দেশের ৪র্থ স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের পূর্বেই জাতির স্থপতিকে সপরিবারে হত্যা করেছিল স্বাধীনতা বিরোধীরা। শত্রুরা ৭১ এর পরাজয়ের বদলা নিতে সক্ষম হয়। বিজয়ের আনন্দে আওয়ামী লীগ এতই মত্ত ছিল যে, তারা বুঝতেই পারেনি-তোমাকে বধিবে যে গো-কুলে বাড়িছে সে’। ফলে দেশ বিশ বছরেরও অধিক সময় প্রতিপক্ষের হাতে চলে যায়। বিজয়ের আনন্দ-উচ্ছ্বাস বেশি দিন দীর্ঘায়িত হয় না কিন্তু পরাজয়ের জ্বালা অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়।

বর্তমানে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার হাতে এবং এটা বাঙালি হিসেবে আমাদের একান্ত আকাংখিত প্রাপ্তি। বর্তমান চলমান সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা অবিলম্বে তৈরি করতে হবে যাতে কেউ আর্থিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয়।

তালিকা তৈরিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্ষমাহীন এক অদূরদর্শিতা রয়েছে। সময়মত তারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন না করায় নতুন নতুন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা উদয় হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। অদ্যবধি সে তালিকা তৈরির কাজ সুসম্পন্ন হয়নি এবং নানা কলংকে আমরা র্জজরিত হয়ে পড়ছি।

বিএনপি-জামায়াতের দেয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তা দেয়ার জন্য অর্থ সংকুলান কীভাবে হবে? ‘মানুষ মানুষেন জন্য’ এ মনোবৃত্তি নিয়ে অগ্রসর হলে এ জাতীয় সংকটে অর্থের অভাব হওয়ার কথা নয়। সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় এ সমস্যা সহজে মোকাবেলা করা যায়। আমাদের জানা মতে প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট সোসাল রেসপনইসবিলিটি (সি এস আর) খাতে আলাদা অর্থ বরাদ্ধ থাকে। মূলত মানবিক কর্মকা-ে এ অর্থ ব্যয় করা হয়। রাজনৈতিক নাশকতায় পরিবারের একমাত্র উর্পাজন ক্ষম নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যুতে তার নাবালক সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণের চেয়ে মানবিক সহায়তা আর কী হতে পারে ? সন্তানহারা এক অসহায় মাকে সহায়তা দেয়ার চেয়ে আর কী মানবিক কর্মকা- হতে পারে ?

প্রাথমিকভাবে ব্যাংক ব্যবস্থার দিকে তাকানো যায়। দেশে কর্মরত দেশি, বিদেশি, সরকারি ও বেসরকারি মিলে ৫৬টির মত ব্যাংক রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনই ব্যাংক গুলোকে নির্দেশ দিতে পারে তাদের সি এস আর খাতে এক বছরের বরাদ্ধকৃত অর্থ সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য ব্যয় করেেত। এ ভাবে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান বা বৃত্তবান ব্যক্তি সহায়তার হাত বাড়ালে প্রয়োজনীয় অর্থ সংকুলান মোটেই কঠিন হওয়ার কথা নয়।

জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দিকে ও ২০ দলীয় জোটের সহিংসতা রোধে সরকার কাজ করে চলেছে যা রাষ্ট্রের একটি প্রধান দায়িত্ব। আমরা মনে করি যে ভাবেই হোক আগামি নির্বাচন (২০১৯ সাল) পর্যন্ত এ সরকার টিকে যাবে কিন্তু ভোটারদের কাছে তাদের জনপ্রিয়তা থাকবে না। তার প্রধান একটি কারণ এ দেশের ভোটারগণ সরকারের কাজের মূল্যায়ন করে না, ক্ষমতার পালা বদল চায়।

আন্দোলনের নামে জনগণের বিরুদ্ধে ২০ দলীয় জোটের ‘যুদ্ধের’ ক্ষয়ক্ষতির দায় প্রধানত দু’টি মূল দল বিএনপি-জামায়াতকে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে জোটের মধ্যে যারা স্বাধীনচেতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন তারা একত্রে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারেন যারা আগামি নির্বাচনে ভোটারদের প্রত্যাশিত হতে পারেন।


ফলে আগামি ২০১৯ এর নির্বাচনোত্তর যারা সরকার গঠন করবে এবং যারা সংসদে বিরোধী আসনে থাকবে তারা উভয়ই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক হবে। তা হবে মুক্তিযুদ্ধের এক বড় অর্জন।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test