E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শত্রুরোধের মন্ত্র দাও অভিজিৎ

২০১৫ মার্চ ১৫ ০০:৩৮:৩৩
শত্রুরোধের মন্ত্র দাও অভিজিৎ

আবেদ খান : একটা ফোন পেলাম স্নেহভাজন ইসরাফিল শাহীনের কাছ থেকে রাতে। কলকাতার সময় আনুমানিক সাড়ে নটার দিকে। বেদনামথিত কণ্ঠে সে সেই ভয়াবহ মর্মবিদারী সংবাদটি জানাল।
- আপনি কলকাতায় আছেন জানা সত্ত্বেও একটি দুঃসংবাদ দেওয়ার জন্য ফোনটা করলাম। আমাদের অজয়দা’র ছেলেকে ওরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে, তাঁর বউকেও প্রচ-ভাবে কুপিয়েছে। মেয়েটি এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। এতো অস্থির লাগছে যে খবরটি আপনাকে জানানো অনুচিত বুঝেও নিজেকে সামলাতে পারছিনাম না।

- কখন? কবে? কোথায়? আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না কোন অজয়দা’র কথা বলছে ইসরাফিল। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করলাম, অজয়দা কোথায়? কেমন আছেন তিনি?
- আজ, এই ঘণ্টা খানেক আগে, টিএসসির কাছে। বইমেলা থেকে ও আর ওর বউ বাড়ি ফিরছিল, ঠিক সেই সময়-
- কেমন আছেন অজয়দা শাহীন? কোথায় আছেন?
- রক্তমাখা আত্মজকে সামনে দেখে স্নেহময় পিতা আর কেমন থাকতে পারেন আবেদ ভাই? তিনি তাঁর কোয়াটারেই আছেন।
ইসরাফিল শাহীন ফোন রাখার আগে বলল, একেবারে হুমায়ুন আজাদকে যেভাবে কোপানো হয়েছিল সেভাবেই হামলাটা হয়েছে। হুমায়ুন আজদ হামলার পর তবু কিছুদিন বেঁচেছিলেন, কিন্তু অজয়দার ছেলে অভিজিৎ প্রাণে বাঁচেননি।

সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এই প্রথম মনে হলো আমি দেশের বাইরে আছি। হয়তো ভাষা একই, সংস্কৃতি-ঐতিহ্যও প্রায় একই, কিন্তু তারপরও তো দেশ আলাদা, মানুষ আলাদা, ভাবনার জগৎটাও আলাদা। তাদের পরিম-লে অভিজিৎ রায় কিংবা অজয় কুমার রায় সম্পূর্ণ অচেনা। এবং এই আমি ছুটে যেতে পারছি না শত ইচ্ছে সত্ত্বেও সেই টিএসসির মুখটার কাছে, কিংবা হাসপাতালে কিংবা অজয়দার গৃহদ্বারে। ছুটে গিয়ে ক্ষিপ্ত উত্তেজিত ক্রুদ্ধ জনতার সামনে গিয়ে চিৎকার করে বলতে পারছি না-কোথায় তোমরা সবাই-এখনও ভয়ে সিঁটিয়ে থাকবে? ওরা আমাদের বিবেকের কণ্ঠস্বরগুলোকে একে একে হত্যা করছে, ওরা আমাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের নৈতিক অধিকারকে লুঠ করতে উদ্যত, এরপরও কি খুনির কৃপাণ স্তব্ধ করা যাবে না? এরপরও কি, দেশের যেসব মানুষ মাসের পর মাস দুর্বৃত্তের নিক্ষিপ্ত বোমায় অঙ্গার হয়ে চলেছে তাদের, পরিবার-পরিজন আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব প্রতিবেশী পাড়া-মহল্লার শুভানুধ্যায়ীরা বেরিয়ে আসবে না সেই একাত্তরের মতো? তাদের কণ্ঠে কি নূরলদীনের সেই আহ্বান ধ্বনিত হবে না-জাগো বাহে, কুণ্ঠে সবাই!
কলকাতার শ্যামবাজারে একটি কক্ষে সেই রাতটি ছিল আমার জন্য ভয়ঙ্কর, দুঃসহ, বেদনামথিত নিদ্রাহীন রাত।

॥ দুই ॥
অথচ অভিজিতের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি কখনও, কোথাও। অজয়দা-শুচিস্নিগ্ধ ব্যক্তিত্বের অধিকারী বিজ্ঞানী অধ্যাপক অজয় কুমার রায়-সবসময় আমার নমস্য। তাঁর লেখার বিনীত পাঠক আমি, তাঁর বক্তব্যের মুগ্ধশ্রোতা। ওদিকে আমার পুত্র এবং পুত্রবধূ অভিজিতের বুদ্ধিদীপ্ত যুক্তিবাদী লেখায় প্রাণিত। কানাডায় থাকার সময় ওখান থেকে তাদের অনুরোধে ঢাকায় বইমেলা থেকে অভিজিৎ রায়ের বই সংগ্রহ করে পাঠিয়েছি-কখনও ঢাকার আজিজ সুপার মার্কেটের গ্রন্থাবিপণীগুলো হাতড়ে বেরিয়েছি ওঁর লেখা বই-এর জন্য। ওঁর লেখার সহজবোধ্য সাবলীলতায় আকৃষ্ট হয়েছি, গভীরতায় বিস্মিত হয়েছি, পা-িত্যে চমৎকৃত হয়েছি, কিন্তু সত্যি বলতে সব লেখা পড়ার সুযোগ আমার হয়নি। তবে বিডিনিউজ২৪.কম-এর অনলাইনে তাঁর লেখা পড়েছি বিভিন্ন সময়। কঠিন বিষয় নির্বাচন করে সেটাকে সহজ করে পরিবেশন করার ভেতরে যে মুন্সিয়ানা, তা সত্যিই অবাক করে দেওয়ার মতো। তাঁর একটি নিবন্ধ ‘সবই ব্যাদে আছে’-এর মধ্যে অত্যন্ত রুচিশীল এবং যুক্তিগ্রাহ্যভাবে ধর্মীয় কুসংস্কারের মুখোশটি খুলে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদাহরণ উপস্থাপনা করে। এর ভেতর দিয়ে এক বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষকে প্রত্যক্ষ করা যায়। ‘নোবেল পুরস্কার এবং আমার অনিয়ত ভাবনা’ লেখাটির মধ্যে একজন মানবতাবাদী অভিজিতকে খুঁজে পাওয়া যায় যে পুরস্কার এবং ব্যক্তিকে এক নিক্তিতে বিচার করেননি। একজন দক্ষ লেখকের কলমের ডগা দিয়ে একের পর এক তথ্য যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যেভাবে আলোচিত হয়েছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা-তা সত্যিই অনবদ্য। পদার্থবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য থেকে শুরু করে মালালা কিংবা কৈলাস সত্যার্থী কাউকেই সামান্যতম অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে একটি শব্দও প্রয়োগ করা হয়নি, বরং কৃতিত্ব প্রদানে কুণ্ঠাহীন অভিজিৎ অভিবাদন জানিয়েছেন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে- অবদান উল্লেখ করে প্রমাণ করেছেন যোগ্যতা। সে যে একজন মহৎ লেখক, স্বচ্ছচিন্তার অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী মানুষ, তা তাঁর প্রায় লেখাতেই স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়েছে।

অভিজিৎ-এর সঙ্গে আমার একবারই শুধু শীর্ণ যোগাযোগ হতে পারত তাঁর একটি ভিন্ন লেখা পাঠের পর, কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। বিডিনিউজ২৪.কম-এ প্রকাশিত সেই লেখাটি আমার এক অত্যন্ত প্রিয় মানুষ অধ্যাপক মীজান রহমানকে নিয়ে রচিত। মীজান রহমান ‘বিশ্ববিখ্যাত গণিতবিদ’ হিসেবে পরিগণিত বলে নয়, একজন সুসাহিত্যিক হিসেবে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছিল বেশ কয়েক বছর আগে। তিনি একবার যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন যেকোনো সূত্রেই হোক, আমার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। ঐ প্রবীণ ভদ্রলোক কষ্ট করে আমার অফিসে এসেছিলেন পরিচিত হতে। হাতে করে এনেছিলেন তাঁর লিখিত একটি বই। ভণিতাহীন বিনীত ভঙ্গিতে অনেকক্ষণ কাটিয়েছিলেন আমার সঙ্গে। আমার সামান্যতম ধারণা ছিলো না তাঁর সম্পর্কে। তিনি নিজেও আত্মপরিচয় দানে কুণ্ঠিত ছিলেন। আলোচনা হয়েছিল তাঁর ভাবনার জগৎ নিয়ে, জীবনবোধ নিয়ে। সুদীর্ঘ প্রবাসজীবন সত্ত্বেও তাঁর অন্তরে যে বাংলার সবুজভূমি বিস্তৃত থাকে সারাক্ষণ, সেটাও জেনেছিলাম কথায়-কথায়। উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন তাঁর লেখা একটি স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ ‘তীর্থ আমার গ্রাম’। সলজ্জভাবে বলেছিলেন, ‘সময় পেলে পড়বেন। দু’দিন পরেই চলে যাচ্ছি কানাডায়। আবার কবে আসব, কবে দেখা হবে, কিংবা আদৌ দেখা হবে কিনা, কে জানে। আমি তো লেখক নই কাঠখোট্টা অঙ্কশাস্ত্রের মাস্টার। থাকি বিদেশে। যদি ভালো লাগে তাহলে আনন্দিত হবো।’

‘তীর্থ আমার গ্রাম’ বইটা হাতে তুলে নিতে ক’দিন দেরি হয়েছিল। কিন্তু একবার পড়া শুরুর পর আর থামতে পারিনি। নেশাগ্রস্থের মতো একটানা পড়ে ফেলেছিলাম। ড. মীজান রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বটে, কিন্তু আমার লেখায় বিভিন্ন সময় ‘তীর্থ আমার গ্রাম’ বইটি উদ্ধৃত হয়েছে, উল্লেখিত হয়েছে। তিনি ছিলেন নরসিংদীর রায়পুরার মানুষ, গ্রামের নাম আদিয়াবাদ। ‘তীর্থ আমার গ্রাম’ বইটাতে সেই জš§তীর্থভূমিকে বারবার প্রণাম জানিয়েছেন মীজান রহমান। কী প্রাঞ্জল ঈর্ষণীয় সাবলীল রচনাশৈলী!
অভিজিৎ রায় ৯ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে বিডিনিউজ২৪.কম-এ ‘অধ্যাপক মীজান রহমান : এক নক্ষত্রের মহাপ্রয়াণ’ শীর্ষক নিবন্ধ লেখেন। একজন অত্যন্ত মেধাবী আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত আপাদমস্তক বাঙালি এবং অসাম্প্রদায়িক মুক্তিচিন্তার মানুষ, যাকে সে গুরুর আসনে বসিয়েছিল, সেই অধ্যাপক মীজান রহমানের চিন্তাভাবনার সঙ্গে অভিজিৎ পাঠকদের এতো চমৎকারভাবে পরিচিত করিয়েছিল যে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। ঘাতকের হাতে নৃশংসভাব খুন হওয়ার দিন বিডিনিউজ২৪.কম-এ অভিজিতের একটি লেখা প্রকাশিত হয় ‘কেন কোনো কিছু না থাকার বদলে কিছু আছে?’ শিরোনামে। ‘শূন্য থেকে মহাবিশ^’ নামের একটি বই অধ্যাপক মীজান রহমানের সঙ্গে যৌথভাবে লিখেছেন অভিজিৎ। অথচ বইটি প্রকাশের আগেই বরেণ্য গণিতজ্ঞ মীজান রহমান প্রয়াত হন। অভিজিতের ভাষায়-‘‘শূন্য থেকে মহাবিশ^’-এর পা-ুলিপি স¤পন্ন করে অধ্যাপক মীজান রহমান যেন হঠাৎ করেই শূন্যে মিলিয়ে গেলেন! কিন্তু তিনি শূন্যলোকে বিলীন হয়ে গেলেও আমাদের জন্য রেখে গেছেন অশূন্য কিছু অনুপ্রেরণা। তিনি তাঁর এই বই এবং অন্য সকল পূর্ববর্তী কাজের মাধ্যমে তিনি আমাদের আলো দিয়ে যাবেন ‘ঐ যে সুদূর নিহারীকা’র মতোই-অহর্নিশ।’

সহলেখকের প্রতি এমন শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপনের মাত্র পাঁচ ঘণ্টা পর অভিজিৎও যেন শূন্যে মিলিয়ে গেলেন! বলা উচিত, শূন্যে মিলিয়ে দেওয়া হলো। অভিজিৎকে শূন্যলোকে বিলীন করে দেওয়া হলেও আমাদের জন্য তিনি রেখে গেলেন ‘অশূন্য’ অনেক অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রকাশিত বিভিন্ন বই ও মুক্তভাবনার মাধ্যমে তিনি আমাদের আলো দিয়ে যাবেন ‘ঐ যে সুদূর নিহারীকা’র মতোই-অহর্নিশ।
আমার দুর্ভাগ্য, এই অভিজিৎ রায়-ই যে পরমশ্রদ্ধেয় অজয় কুমার রায়ের পুত্র-জানা ছিল না, কিংবা কখনো কোনো সুবাদে জানলেও মনে ছিল না। আহা, যদি আগে জানতাম, তাহলে ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ করতাম! ওঁর কাছ থেকে তো কিছু শেখা যেত!

॥ তিন ॥
কলকাতায় রামেন্দুদা’র সঙ্গে দেখা হলো এক সন্ধ্যায়। তাঁর কাছ থেকে একটি তথ্য শুনে স্তম্ভিত হলাম। অভিজিৎ আর বন্যাকে যখন চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয় তখন নাকি ঘাতকদের প্রতিরোধ করতে কেউ এগিয়ে আসেনি! এমনকি অল্প-ব্যবধানে থাকা পুলিশ সদস্যদেরও দেখা গেছে নীরব দর্শক হয়ে থাকতে। আরও বিস্ময়ের কথা-অভিজিৎ এবং তাঁর স্ত্রী বন্যা যখন রাস্তার ফুটপাথে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছিল তখন কেউ কেউ নাকি তাদের ছবি তুলছিল মোবাইলে। বোধহয় কেউ কেউ ভিডিয়ো-ও করেছিল।

এ-কথা শোনার পর মনে হয়েছে, আমাদের দেশ থেকে তবে কি বিবেক, রুচি, সাহস, মানুষের প্রতি ভালোবাসা-সবই অন্তর্হিত হলো? এটাও কি সম্ভব? যারা এসব ছবি তুলেছে তারা কারা? কী তাদের উদ্দেশ্য? যারা ঘোষণা দিয়ে উল্লাস করে নিজেদের আনসারুল্লাহ দল পরিচয় দিয়ে হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করেছিল এবং সচিত্র স্ট্যাটাস দিয়েছিল ওরা কি তারাই? ছবি তোলার সময় কেউ তাদের জিজ্ঞেস পর্যন্ত করল না-ওরা কারা, কেন করছে এই নিষ্ঠুর কাজ? যারা বইমেলায় যায়, বই কেনে, বই পড়ে, সেই সব ছাত্রছাত্রীরা যারা টিএসসিতে জটলা করে, সেই সব ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা-যারা জঙ্গিবাদ রোখার দৃপ্ত শপথ নেয়, স্লোগানে রাজপথ কাঁপায়-তাদের কেউ ছিল না আশেপাশে?

পুলিশ কর্তৃপক্ষের দাবী ছিল বইমেলার এলাকাজুড়ে নি-িদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু ঐ অঞ্চলে, ধরা যাক শাহবাগ চত্বর থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত, কয়টা হাতবোমা ফুটেছে? পুলিশের জনবল কিংবা সিসিটিভি-কোনোকিছুই কি হদিশ করতে পারল না দুর্বৃত্তদের? ওরা বোমা নিয়ে ঢুকছে এলাকায়, চাপাতি-ছোরা-পিস্তল-গুলি নিয়ে মহড়া দিয়ে যাচ্ছে, এমনকি মানুষ খুন করে সেটা বুক চিতিয়ে দায় স্বীকার করে উল্লাস পর্যন্ত করছে, আর কী করছে আমাদের প্রশাসন? কী করছে আমাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক?

ঢাকায় ফিরেছি ক’দিন আগে। সেই থেকে এক প্রচ- নির্জীবতা পেয়ে বসেছে। অভিজিৎকে নিয়ে কতজন লিখেছেন, আরও অনেকেই লিখবেন হয়তো-বা। কিন্তু আমি কী লিখব? মাঝে মাঝে মনে হয় শুধু লিখে কি কিছু হবে? আরও অনেক কিছু করা দরকার, অনেক কিছু করার আছে। অভিজিৎ-এর স্ত্রী বন্যা বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছে, বাংলাদেশে মৌলবাদী জঙ্গিদের বিস্তার ঘটছে, তারা ক্রমশ বলশালী হয়ে উঠছে। বন্যা বলেছে মুক্তিচিন্তার প্রসার ঘটিয়ে মানুষের ভেতরকার যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক মনটাকে জাগিয়ে তোলার কাজ সে করে যাবে।

বন্যা বন্যার কাজ করবে, অভিজিৎ তাঁর কাজ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত করেছে। কিন্তু আমরা এখানে কী করছি? কী করতে পারছি? একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠার কথা তো আমাদের পক্ষের। উঠছে না কেন এখনও? জয়বাংলা ধ্বনি ছিল শত্রুরোধের মন্ত্র। এ-জন্য ছিল ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার চেতনা এবং বিশ্বাস, এ-জন্য ছিল যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার বজ্রশপথ, এ-জন্য ছিল শক্তিশালী সংগঠন, যার শেকড় থাকবে সাধারণ মানুষের অন্তরে। কোথায় সে-সব?
আমরা কিন্তু হারতে আসিনি। চূড়ান্ত লড়াই-এ আমরাই জিতব। শামসুর রাহমানের কবিতার মতো-

‘আকাশের নীলিমা এখনো
হয়নি ফেরারি, শুদ্ধাচারী গাছপালা
আজও সবুজের
পতাকা ওড়ায়, ভরা নদী
কোমর বাঁকায় তন্বী বেদিনীর মতো।
এ পবিত্র মাটি ছেড়ে কখনো কোথাও
পরাজিত সৈনিকের মতো
সুধাংশু যাবে না।’


লেখক : সম্পাদক, দৈনিক জাগরণ

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test