E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

পুলিশের যত দোষ !

২০১৫ মে ২১ ১৮:৩৬:৫৭
পুলিশের যত দোষ !

চৌধুরী আ. হান্নান : টেলিভিশনের পর্দায়, সংবাদপত্রের পাতায় দৃশ্য দেখে মনে হবে রাষ্ট্রের সুশৃংখল নিয়মিত বাহিনীর সদস্য দ্বারা নারী নির্যাতনের এক সচিত্র প্রতিবেদন। বিভিন্ন সমাবেশে পুলিশকে জনগণের বন্ধু হতে পরামর্শ দেয়া হয়। এই যদি হয় বন্ধুর নমুনা তাহলে বিপদে আমাদের আশ্রয় কোথায় ? পুলিশ যদি নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে আমাদের বোনদের লাঞ্ছিত করে তাহলে সে পুলিশ আমরা চাই না।

যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে গত ১০ মে পুলিশের হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হন ছাত্র ইউনিয়নের নারী কর্মীরা। ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্র ইউনিয়নের সুনাম রয়েছে। ছাত্রলীগের মত তাদের কোন দুর্নাম নেই। তাঁদের অগ্রসর চিন্তার ধারক মনে করা হয়ে থাকে। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়ন বিরোধী কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে চায় তারা।

ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানীর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা ছাত্রীদের ওপর একদল উচ্ছৃংখল ছাত্রের অশোভন আচরণের মত অনাকাংখিত, বিব্রতকর ঘটনাও কম নয়।

নব্বই দশকের প্রারম্ভে একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির কথিত বান্ধবীকে টি এস সি এলাকায় নাজেহাল করেছিল একদল ক্ষুব্ধ ছাত্র। একজন অবিশ্বাসী বন্ধুর অনাকাংখিত আচরণে একবার সূর্যসেন হলের তিনতলা থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েছিলেন এক ছাত্রী।

তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা প্রেম-ভালোবাসা নিবেদনের এক অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। ছেলে মেয়েরা এক সাথে দলে দলে ঘুরে বেড়ানোর অবাধ সুযোগ। রোকেয়া হল, সামসুন্নাহার হলের সামনে দিয়ে একবার ঘুরে না এলে বিশ্ববিদ্যালয় হলের ছাত্রদের যেন খাবারই হজম হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের আনাচে কানাচে বিকাল বেলা যুগলদের বসে অবিরাম আড্ডায় কলকাকলিতে মুখরিত থাকে।

ছাত্র জীবন উৎকৃষ্ট সময়-বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আরও উৎকৃষ্ট। এমন বাধাহীন, স্বাধীন জীবন আর হয় না। তাই আনন্দ-উল্লাস, রোমাঞ্চ একটু বেশিই। তারুণ্যকে আটকানো যায় না, বাধ ভেঙে যায়। বাধ ভাঙা আনন্দ যখন নদীর দু-কূল উপচায়, আনন্দ যখন নির্মল থাকে না, বিপত্তি তখনই ঘটে। তা-ই ঘটেছিল বর্ষবরণে। পরবর্তীতে পুলিশ কমিশনার এর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির সময় কেন একজন নারী নেত্রীর উপর পুলিশের চড়াও হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হলো তা ভেবে দেখার বিষয়।

বাংলা নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান ধর্ম, বর্ণ, বয়স নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণ মূলক সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান। কেবল শিক্ষাথীরাই নয় সকল স্তরের মানুষ এবং বিভিন্ন পাড়া মহল্লার উঠতি বয়সের বখাটেরা ও অতি উৎসাহী হয়ে এ জাতীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এ ধরণের একটি সার্বজনিন অনুষ্ঠানে নারী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটার অনুকূল পরিস্থিতি বিরাজ করে এবং বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন বখাটেরা সে সুযোগ নিতে বিলম্ব করে না। পুলিশের করার কিছু থাকে না।

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশকে অত্যন্ত সর্তকতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হয়। কাউকে গ্রেফতার করলে ছাত্ররা পুলিশের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক মিছিল বের করবে, এমনকি ভি.সি-এর পদত্যাগ দাবি পর্যন্ত গড়াতে পারে। কাজেই এ ধরণের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কাউকে সন্দেহবশত গ্রেফতারের ঝুঁকি নেবে না, নিতে পারে না। প্রয়োজন জনসচেতনতা আর প্রয়োজন উপযুক্ত সময়ে গণপিটুনি।

নারীর সম্মান নারীকেই রক্ষা করতে হবে। ‘ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের’ মাধ্যমে তাকে বুঝে নিতে হবে-এখানে সে কতটা নিরাপদ।

যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় দফা নারী নির্যাতনের মত ঘটনা ঘটলো। যা পূর্বের ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে। এ কলংকের দায় কেবল পুলিশের নয়, ছাত্র সংগঠনটিকেও নিতে হবে। জনতার মিছিল যখন ভাইয়লেন্ট (violent) হয় পুলিশকে এ্যাকশনে যেতেই হয়। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কতক্ষণ ধৈর্য্য ধারণ করবে ? অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত ? আলোচিত ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধারণ করেছে বলে মনে হয়। ছাত্র ইউনিয়নের সেই নেত্রী (?) পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে হঠাৎ দৃশ্যপট পাল্টে যায়। পুলিশ সদস্যটি ও কালবিলম্ব না করে সমগ্র পুলিশ বাহিনীর মুখে কলংক লেপনের কাজটি করে বসলো- মহিলা কর্মীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চুলের মুঠি ধরে, ঘাড় ধরে প্রকাশ্যে টানা হেঁচড়া করে তার আক্রোশ মেটাতে লাগলো। মুহূর্তেই পুলিশ সদস্যটি হারিয়ে ফেললো নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ আর পুলিশের শিক্ষা, নীতি আদর্শ।

এ কারণেই দেখতে হয় মানুষের বংশগতি ও পরিবেশ। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়। পুলিশ কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই কালিমা লেপনকারী পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সাথে সাথে পুলিশ প্রশিক্ষণে নৈতিকতা শিক্ষার প্রাধান্য দিতে হবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র।


পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test