E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুছে যাবে কলঙ্ক

২০১৫ জুন ১৮ ১৮:১৫:৩২
মুছে যাবে কলঙ্ক

চৌধুরী আ হান্নান : গত ডিসেম্বর মাসে দৈনিক বাংলা ৭১ এর একটি সংখ্যায় আমার একটি লেখা ছাপা হয়েছিল। শিরোনাম ছিল- "কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!" লেখার এক পর্যায়ে বলেছিলাম রাজনৈতিক অঙ্গনে যতই অশুভ সংকেত মনে করা হোক না কেন, বর্তমানে দেশে অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল সরকার বিদ্যমান- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার উৎকৃষ্ট সময়।

১৬ জুন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শরীয়তপুরের রাজাকার সলেমান মৌলবীকে সম্প্রতি আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় ছবি দেখে বয়স অনুমান করা যায়- তার বয়স বর্তমানে ৮০ বছর এর কম হবে না। কী করেছিলেন ৪৪ বছর পূর্বে এই মৌলবী সাহেব? পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য তৎকালীন ৪০ বছরের এই "নায়ক" সব কিছুই করেছেন তখন।

তা জানে শরীয়তপুরবাসী এবং এ মামলার বাদী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার।

আবদুস সামাদ তালুকদারের এটা দ্বিতীয় যুদ্ধ, জাতির কলঙ্ক মোচনের যুদ্ধ। এই দ্বিতীয় যুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে অংশগ্রহণ করার সময় এসেছে।

যুদ্ধাপরাধী বিচারের সাক্ষীকে হুমকি দেয়া, হত্যা করার ঘটনাও কম নেই। তারপরও থেমে থাকেনি বিচার প্রক্রিয়া। সাহসিকতার সাথে যাঁরা সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে এসেছেন তাঁদের প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দিতে হবে।

বর্তমানে অবস্থা পাল্টেছে- পরিস্থিতি ভিন্ন। রাজনৈতিক অবস্থা বিচার কার্য পরিচালনার অনুকূলে রয়েছে। এ যাবৎ বিচারকার্যে যারা বিরোধিতা করে এসেছে, সেই বিএনপি-জামায়াত এখন রাজনৈতিক যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক। তাদের শীর্ষ নেতাদের মুখেই উচ্চারিত হচ্ছে- অতীতের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের কথা। রাজনীতিতে ছোট ভুলের জন্য অনেক সময় বড় খেসারত দিতে হয়। বিএনপি'র সেই ভুলের মাশুল দেয়া শুরু হয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকার নিশ্চয় তাঁদের প্রতিপক্ষের ভুলগুলো পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করতে ভুল করবে না।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মতামত রেখেছেন- বিএনপি'র মধ্যে নতুন নেতৃত্ব আসতে হবে এবং দলের মধ্যে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। তা না হলে বিএনপি'র ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। বর্তমান সরকারের আরও একটি বড় কাজ রয়েছে। তা হলো জঙ্গী দমন, সন্ত্রাস দমন। রাজনীতির নামে ধর্মের অপব্যবহার, ধর্মের নামে অধর্ম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলো প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ হত্যা করে চলেছে। ইরাক, ইরান, মিশর, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ইত্যাদি। বিশ্ব নেতৃত্ব ও ধর্মান্ধতা থেকে উদ্ভুত সন্ত্রাস দমনে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন কিন্তু বোকোহারাম, আইএস কর্তৃক শিশু, নারী অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা কমছে না। পেন্টাগন থেকে প্রকাশিত খবরে জানা যায় ইরাকের আইএস জঙ্গী দমনের কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক খরচ হয় প্রায় ৯০ লাখ ডলার।

কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ধর্মীয় জঙ্গী তৎপরতা হ্রাস পাওয়ায় কোন লক্ষ্মণ দৃশ্যমান নয়। ধর্মীয় জঙ্গীবাদ মানব সভ্যতার প্রতি এক চরম হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশে ওই সকল জঙ্গী গোষ্ঠীর কোন কোন শাখায় অনুপ্রবেশ ঘটেছে। গোয়েন্দা তৎপরতায় তা মাঝেমাঝে ধরা পড়ছে। তবে একটা ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছে তা হলো বাংলাদেশ এবং ভারত একে অপরের বিরুদ্ধে নাশকতা চালানোর জন্য নিজেদের ভূমি ব্যবহার করতে দেবে না। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ায় এর সুফল উভয় দেশ ভোগ করবে।

যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জঙ্গী দমন- এ দুটি কাজে বাংলাদেশ পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে। এ দুটি বড় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব সভায় সফল, বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়কের আসনে আসীন হবেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আমাদের দেশের নিজস্ব আইন ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করে চলেছে। ট্রাইবুনালের স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। মহান সৃষ্টিকর্তা বার বার শত্রুর হাত থেকে, মৃত্যুর দুয়ার থেকে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছেন হয়ত তাঁকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ করিয়ে নেবেন বলে।

আমরা স্বপ্ন দেখি- একদিন যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হবে আর তা থেকে মুক্তিযুদ্ধে স্বজনহারাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। সে দিন কত দূরে?

লেখক : সাবেক ব্যাংকার

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test