E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বার্ধক্যের জ্বালা ও মতিয়া চৌধুরী আপা

২০১৫ জুন ২৬ ১৬:৫১:৪৪
বার্ধক্যের জ্বালা ও মতিয়া চৌধুরী আপা

চৌধুরী আ. হান্নান : খর রৌদ্রের তাপদাহে অতিষ্ঠ, ওষ্ঠাগত জীবনে হঠাৎ এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টি যেন আকাশ থেকে নেমে এলো।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ২০ জুন সংসদে বলেন, সম্প্রতি এক নির্দেশে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় ২ শতাংশ কমানো হয়েছে। তিনি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার না কমিয়ে ঋণখেলাপিদের বিষয়ে সরকারের তৎপরতা বাড়ানো ভালো বলে মন্তব্য করেন। অর্থমন্ত্রীকে এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবারও আহবান জানান আমাদের মতিয়া আপা। আমাদের প্রশ্নÑ অর্থের ঘাটতি মেটাতে ঋণখেলাপিদের না ধরে প্রবীণদের ওপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে কেন?

সারা জীবন চাকুরি শেষে এককালীন যে অর্থ পাওয়া যায় তা একটু বাড়তি মুনাফা পাওয়ার আশায়, অবসর জীবন কিছুটা স্বাচ্ছন্দে কাটানোর আশায় তারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে থাকেন। আবার অনেকে সন্তানদের আবদার ফেলতে পারেন না, ব্যবসা করার জন্য জীবনের শেষ সম্বল স্নেহধন্য সন্তানদের হাতে তুলে দেন। তারা অচিরেই বুঝতে পারেন তার প্রিয় সন্তান আসলে তার জন্য নয়। কিন্তু তখন ট্রেন ষ্টেশন ত্যাগ করে গেছে। আর যাঁরা অবসরোত্তর প্রাপ্ত অর্থ হাতে পেয়ে সঞ্চয়পত্র কেনেন, স্ত্রীর নামে পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনেন তারা খুবই নিরিবিলি গোছের মানুষ। তারা ভদ্রভাবে জীবনের পড়ন্ত বেলাটা নির্ঝঞ্জাট কাটাতে চান।

বার্ধক্যে পা দিলে তার মধ্যে পরনির্ভরশীলতা দেখা দেয়। শারীরিকভাবে অসমর্থ, অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা অসহায়ত্ব, নানা কারণে অন্যদের মানসিক যন্ত্রণা দেয়া সবই বার্ধক্যের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। তারা পরিবারের বাড়তি বোঝা। তার ওপর যদি ওই লোকটির কোন অর্থ না থাকে বা আয় কমে যায় তা হলে এ ‘বোঝা’ সন্তানরাও বহন করতে চায় না।

সরকারি কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করে দেয়া হয়েছে, তাদের ঘরে অধিক স্বাচ্ছন্দ ফিরে আসবে। কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণদের কী হবে ? এতদিন জেনে এসেছি সরকারের দেয়া সুযোগ সুবিধা কমে না, পর্যায়ক্রমে বাড়ে। কিন্তু মাননীয় অর্থমন্ত্রী কী করলেন জনাব মুহিত প্রবীণের চেয়েও প্রবীণ, অশীতিপর। তিনিই প্রবীণদের প্রতি এমন নির্দয় হলেন আর কে সদয় হবেন ?

অর্থমন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রনে ব্যাংক খ্যাত নানামুখী সংকটের মধ্যে রয়েছে। ৫০ হাজার কোটি টাকার উর্ধ্বে খেলাপি ঋণের বোঝা মাথায় ব্যাংকগুলোর। অপরদিকে রাষ্ট্রখাতের ব্যাংক গুলোতে ঋণজালিয়াতি, অনিয়মের কারণে সৃষ্ট মূলধন ঘাটতি সরকারকে মেটাতে হয়। জাতীয় বাজেটে বরাদ্ধ দিয়ে গত বছর ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি এই ব্যাংক গুলোকে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। এ অর্থ জনগণের করের অর্থ। দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের অর্থ ভা-ার লুট করে নেবে আর বহন করবে সাধারণ মানুষ। এটা কেমন বিচার ?
এ ব্যর্থতার দায় কার ?

আমাদের অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, তিনি ব্যর্থ হয়েছেন-পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন (প্রথম আলো ২২ সেপ্টেম্বর, ১৪) গ্রামাঞ্চলে সালিশ বৈঠকে হেরে গেলে স্বামী ঘরে এসে বৌ পেটায়। ঘরের নারী, ঘরের বৌ এক অদৃশ্য শিকলে বাঁধা। সে তো মার খাবেই !

মহিলাদের জন্য প্রচলিত পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ কমিয়ে নারীর ক্ষমতায়নকে কী নিরুৎসাহিত করা হয়নি ? আমাদের কর আদায়ের অবস্থা কম শোচনীয় নয়। মোট জনসংখ্যার শতকরা ১ ভাগ মানুষকেও করের আওতায় আনা যায়নি। যে বেশি আয় করবে সে ততো বেশি কর দেয়ার নীতি থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। বরং যার আয় বেশি, সম্পদ বেশি তার কর ফাঁকি দেয়ার ক্ষমতাও বেশি। বিশ্বব্যাংক বলেছে- বাংলাদেশের টাকা- জিডিপি’র অনুপাত দক্ষিণ এশিয় দেশ গুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন, এমনকি নেপালের থেকেও কম। নিজ দপ্তরের এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রীর মেজাজ ঠিক থাকার কথা নয়। ঋণখেলাপি আর করখেলাপিদের ছাড় দিয়ে অসহায় প্রবীনদের ওপর ‘ট্যাক্স’ বসালে সরকারের কতটা আর্থিক সাশ্রয় হবে ? প্রবীণেরা আন্দোলন করবে না, মানববন্ধন করবে না, সরকারকে বিব্রত করবে না কিন্তু মনের যন্ত্রনাটা লালন করবে ঠিকই। আর ঘরের বৌ পেটানোর কথা তাদের বার বাার মনে পড়তে থাকবে।

বর্তমানে প্রবীণদের সংখ্যা দেড় কোটির ওপর। তাঁদের প্রয়োজন তো একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। তারা দেশের ভোটার। সিনিয়র সিটিজেন। প্রাপ্য সম্মানটুকু না দিতে পারেন, অপমান করবেন না।

বাংলাদেশের মানুষ সরকার মানে বুঝে শেখ হাসিনাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে কাছে কাছে রাখে বলে জানি। আমাদের বিশ্বাস মতিয়া চৌধুরীর মতামতে তিনি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

এ জন্যই এখনও আমরা আশার আলো দেখি।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test