E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে বাধা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা

২০১৪ জুন ০১ ১৫:২১:৫২
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে বাধা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা

মো. আতিকুর রহমান : বর্তমানে সরকারের গৃহীত সকল প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও অর্থনৈতিক মুক্তি অথবা প্রবৃদ্ধি অর্জন এর কোনটির সফল বাস্তাবায়ন সম্ভব নয়, যদি না সরকার এদেশের  ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন? মূলত: দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা এর বিশাল জনগোষ্ঠী। যা তার ভৌগোলিক আয়তন ও প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় কল্পনাতীত বিশাল। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সরকারের গৃহীত নানামুখি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সেই সঙ্গে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের রাজধানী ঢাকা নগরী। বর্তমানে সরকারের গৃহীত সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অর্থনৈতিক মুক্তি অথবা প্রবৃদ্ধি অর্জন যাই বলি না কেন এর কোনটিই অর্জন করা সম্ভব নয়, যদি না দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারি। কেবলমাত্র দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা সম্ভব, অন্যথায় নয়।

বর্তমানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে সমাজে বাড়ছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বাসস্থান সংকট, খাদ্য সমস্যা, অপরাধ, সন্ত্রাস, দুনীর্তি, অপুষ্টি, পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি, মাদকাসক্তি, নিরাপত্তাহীনতাসহ আরো নানাবিধ সমস্যা। মূলত: মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা হচ্ছে আমাদের বড় সমস্যা, যাকি না আমাদের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দিচ্ছে। জনসংখ্যার উচ্চবৃদ্ধি উন্নয়নশীল দেশের সীমিত সম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং বিভিন্ন সেক্টরে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে। যদিও আমরা দেখেছি, জন্ম নিয়ন্ত্রণ উন্নয়নশীল দেশসমূহের একটি প্রধান উন্নয়ন কৌশল। বিপরীতে আমাদের দেশে শিক্ষার অভাব, বাল্যবিবাহ, সচেতনতার অভাব, সামাজিক ও ধর্মীয় বিধি নিষেধ জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধার সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি দেশের প্রতিটি সেক্টরে ভয়াবহ দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবেও দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সর্বত্র চরম বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে । এ সমাজে একশ্রেণীর সুবিধাভোগীরা একদিকে যেমন কালো টাকার পাহাড় গড়ছে, অন্য শ্রেণী অনাহারে ও অবহেলায় ফুটপাতে, রাস্তায় দিন কাটাচ্ছে।

বর্তমানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, দুর্বল সুশাসন ও দুর্নীতি ধনী-গরীব নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের জীবনে প্রত্যক্ষ ভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এখন এদেশের কম-বেশি অধিকাংশ মানুষ এই দুর্নীতির ভূক্তভোগী। এ অবস্থার অবসান না করতে দেশে উর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধি অর্জন তথা ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করার কথা যা কল্পনায় পরিনত হবে। ও সরকারের চরম দারিদ্র্য, আইন-শৃংখলার অবনতি, অব্যাহত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক অবক্ষয়, সম্পদের অপচয়, আত্মসাৎ, অপব্যবহার ইত্যাদির মূলে দুর্নীতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব একেবারে স্পষ্ট। বর্তমানে সরকার দেশে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন ও ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করতে যেসব পরিকল্পনা হাতে নিয়ে তা সত্যিই প্রংশসার দাবীদার। এখন যদি সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ ও বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে তবেই দেশে জাতীয় প্রবৃদ্ধি আনয়ন ও জাতিকে অর্থনৈতিক ভাবে মুক্তি করা সম্ভব হবে, অন্যথায় নয়।

যদিও আমাদের দেশের প্রায় সকলের জানা, দেশের সিংহভাগ সমস্যার মূলেই রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। মূলত: এই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণই আমাদের দেশের জন্য হতে পারে জাতীয় প্রবৃদ্ধি আনায়নে কল্যাণকর পদক্ষেপ। তাই বর্তমান সময়ে পরিবার পরিকল্পনার যে কর্মসূচী আমাদের দেশে চালু আছে তা আরো ব্যাপকতর করার পাশাপাশি এদেশের জনগণকে জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে এবং পরিকল্পিত ছোট পরিবার রাখতে কঠোর আইনের বেড়াজালে আবন্ধ করতে হবে। একটি পরিবারে সর্বোচ্চ দুই সন্তানের অধিক সন্তান নিলে সেই পরিবারকে প্রয়োজনে নাগরিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে মূলত: যে কারণ গুলি জড়িত সেই কারণ গুলি অতি দ্রুত সনাক্ত করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধান করতে হবে। যেমন: নিরক্ষরতা দূরীকরণ, ধর্মীয় গোঁড়ামি রোধ, বাল্যবিবাহ রোধ, মহিলাদের অধিক কর্মসংস্থান ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, সঠিক জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন, অনাকাঙ্গিত গর্ভধারণের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের আইনগত বাধা দূরকরণ, যেসকল ধর্মীয় ও সামাজিক নেতারা জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে তাদের আরো অধিক সচেতন করে তোলা, জন্ম নিরোধক বিভিন্ন পদ্ধতি দারিদ্র্য জনগণের কাছে সহজ লভ্য করা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সমস্যা গুলি অতিদ্রুত দূর করতে হবে। আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পিত ছোট পরিবার সৃষ্টির মাধ্যমেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। তাই এই দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কল্পে সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট মহল ও বিশেষ করে জনগণকে আরো অধিক সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি অধিক জনসংখ্যা রোধে কল্পে ঘরে ঘরে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এরপরেও যদি সরকার তথা জনগণ এই আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে তবে এদেশের জনগণ চরম ভাবে বিপর্যস্ত হবে, সেইসঙ্গে দেশের যাবতীয় কার্যক্রম এক সময় স্থবির হয়ে পড়বে। তাই সরকার তথা সকল দেশবাসীকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে বিরাজমান সিংহভাগ সমস্যা সমাধানে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সকলকে ঐক্যবোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অধিক জনসংখ্যার কুফল সমদ্ধে জনগণকে অবহিত করতে হবে, অধিক প্রচারণা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, জনসচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি সরকারেরকে জনসংখ্যা রোধকল্পে দ্রুত কঠোর আইন প্রনয়ন করতে হবে, যাতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে জনগণ এক প্রকার বাধ্য হয়। মূলত: জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করার মাধ্যমেই দেশের তথা জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন করা সম্ভব।

অপরদিকে বর্তমান পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে-দুর্নীতি যেন প্রশাসন যন্ত্রের মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতির কারণে অর্থনৈতিক অনুন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাড়ছে অস্থিরতা। স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারছে না। দেখা দিচ্ছে সুশাসনের অভাব। বর্তমানে দাতা দেশ ও সংস্থা গুলি বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ দানের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত আরোপ করছে তার মধ্যে জবাবদিহিতা ও সুশাসন অন্যতম। বর্তমানে দুর্নীতি রোধ ছাড়া সুশাসনের পথ প্রশস্ত করা সম্ভব নয়। একটি দেশের জাতীয় উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি আনায়নের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে এই দুর্নীতি। এর ফলে সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পদে পদে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীন ও বৈদেশিক বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন ব্যাহত হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব হচ্ছে না, সম্পদের প্রাপতা হ্রাস পাচ্ছে, মানবসম্পদ উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, গণতন্ত্রের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। এতে সরকার, রাষ্ট্র তথা দেশের আপামর জনগণ মারাত্মক ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। এদেশের সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী নিজ নিজ ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করছে ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। বর্তমানে এই দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে এদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করা সম্ভব হবে।

দেশের জাতীয় উন্নয়ন ও জনগণের মধ্যে চরম বৈষম্য পাশাপাশি জাতীয় প্রবৃদ্ধি আনয়নের স্বার্থে সরকার তথা এই দেশবাসীকে দুর্নীতি রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। এতে দেশের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজ নিজ দায়িত্বপালন করেন এইক্ষেত্রে প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন কাঠামে তাদের প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তন করতে হবে। আমরা দেখতে পাই, বর্তমানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও চীন জনসংখ্যার সমস্যা নিয়ে যেখানে তারা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে সেখানে আমরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছি এবং গৃহীত উন্নয়ণ মূলক কর্মকান্ডের সফল বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছি। দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য না দিয়ে আমরা অন্যান্য উন্নয়ণমূলক কর্মকান্ডের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এর ফলে আমরা যতই উন্নয়ন করছি জনসংখ্যার অধিক চাপে সেইসব উন্নয়ন মলিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে সমাজে বাড়ছে নানাবিধ সামাজিক অপকর্ম।

বর্তমানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রের ক্ষেত্রে গণচীনে যে কঠোর আইন রয়েছে তারচেয়েও আমাদের দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারকে আরো অধিক কঠোর হতে হবে। যদিও আমাদের দেশের প্রায় সকলের জানা, দেশের সিংহভাগ সমস্যার মূলেই রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। মূলত: এই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণই আমাদের দেশের সরকারের অন্যান্য গৃহীত উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ডের চাইতে কল্যাণকর পদক্ষেপ।

লেখক : কলামিষ্ট

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test