E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে

২০১৪ এপ্রিল ০৮ ১৪:৫৬:৪৩
এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে

বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই কাজটিই শেষ পর্যন্ত করলেন, যার জন্য বাংলাদেশের সবাইকে দীর্ঘ তেতাল্লিশ বছর অন্ধকারে থাকতে হয়েছে। তিনি যে বিষয়গুলোর অবতারণা করেছেন সেগুলো অবশ্যই গভীরভাবে চিন্তাভাবনার দাবি রাখে।

একটি ধন্যবাদ তিনি পেতেই পারেন তাঁর স্পষ্ট মন্তব্যের জন্য। তাঁকে তাঁর অনুসারীরা ‘দেশনেত্রী’ বলে সম্বোধন করেন তাঁর উপস্থিতিতে। একটু দূরে গেলে ‘ম্যাডাম’ বলেন, একটু বেশি দূরে গেলে ‘বেগম সাহেব’ বলে ডাকেন। আরও একটু বেশি দূরে গেলে কী কী বলেন অবশ্য সেটা এ লেখার জন্য প্রয়োজনীয় নয় বিধায় উল্লেখ করা হল না।

এবার আসা যাক তাঁর কথায়। কী বলেছিলেন তিনি? বলেছিলেন–

১. বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি;

২. আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি নয়, ওরা সেসময় দেশছেড়ে পালিয়েছে, লুটপাট করেছে, ফুর্তি করেছে। আর যাঁরা দেশে ছিল তাঁরা যথার্থভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে;

৩. তিনি দেশত্যাগ করেননি, ক্যান্টনমেন্টেই ছিলেন এবং তাঁর ওপর নির্যাতন করা হয়েছে;

৪. জিয়াউর রহমান নিয়মিত ক্যান্টনমেন্টে চিঠি দিয়ে তাঁর খোঁজখবর নিতেন;

৫. জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে তিনি গর্বিত।


বেগম জিয়া বলেছেন, তিনি দেশত্যাগ করেননি, ক্যান্টনমেন্টেই ছিলেন এবং তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে, অবশ্যই সত্যভাষণ করেছেন তিনি

বেগম খালেদা জিয়াকে অবশ্যই সাধুবাদ দিতে হবে তেতাল্লিশ বছর পরে হলেও একাত্তর সালে তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার জন্য। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি কিনা, সে সম্পর্কে আলোচনা করা বাতুলতা মাত্র এবং এজন্য বেগম খালেদা জিয়ার উক্তিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া যাবে না তিনটি কারণে।

প্রথমত, রাষ্ট্রধারণা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ধারণা কিংবা রাষ্ট্রপতি বিষয়ক ধারণা তাঁর থাকার কথা নয়। কারণ পুঁথিগত জ্ঞানের ওই পরিমণ্ডলে পদচারণা করার সুযোগ হয়তো তিনি পাননি।

দ্বিতীয়ত, তাঁর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা, আনুপূর্বিক ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, উত্তাল মার্চ সম্পর্কে কিছুই জানা সম্ভব নয়। কারণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে কর্মরত সেনা অফিসারের স্ত্রীদের রাজনৈতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে চিন্তাভাবনা, এমনকি কথাবার্তা বলা পর্যন্ত নিয়মবদ্ধভাবে নিষিদ্ধ ছিল। নিছক রং করা পুতুলের মতো সেনা অফিসারের পত্নীদের মুখস্ত পরিবেশ, মুখস্ত কথাবার্তা, মুখস্ত জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হতে হত।

তৃতীয়ত, তিনি তোতাপাখির মতো সেই কথা উচ্চারণ করেছেন, যা তাঁকে বলতে বলা হয়েছে।

কে বা কারা এসব বলেছে? লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা তাঁর পুত্র? সেই পুত্র কাদের মুখপাত্র? তাঁর কিংবা তাঁদের কণ্ঠনিঃসৃত যেসব বক্তব্য বেরিয়ে আসে মাঝে মধ্যে, তাতে তো প্রতিধ্বনিত হয় পাকিস্তানি সামরিক জান্তার কণ্ঠস্বর। তবে কি তাঁর কণ্ঠ থেকে সেইসব পক্ষশক্তির বাণীই বেরিয়ে আসছে, যা তাঁর ভাবাদর্শের মূল নিয়ন্ত্রক আইএসআই-জামায়াত পক্ষশক্তি?

বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে যে নোংরা বিতর্কের অবতারণা করা হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করাটাও এক ধরনের রুচিবিকৃতি। জিয়াউর রহমানের জীবদ্দশায় কখনও-ই এ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। এমনকি তিনি নিজেও পরিস্কারভাবে বলেছেন যে, বাঙালির নির্বাচিত প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাকারী একমাত্র জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, যাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়েই সবাই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

জিয়ার এ বক্তব্যের পরও যারা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু এবং জাতির জনকের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন, তাদের পরিস্কার উদ্দেশ্যটিই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা, বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরোধিতা করা, ’৭১-পূর্ববর্তী রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রবর্তন করা। এটা যে সুস্পষ্টভাবে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, চেতনার দ্রোহিতা– তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এ ধরনের অপরাধের যে শাস্তি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, সেই শাস্তিই তাদের প্রাপ্য।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টান্ত হিসেবে মিসরের বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই। আমি সেনাশাসনের ঘোর বিরোধী, গণতন্ত্র এবং মানবিক সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধের নিঃশর্ত এবং নিঃস্বার্থ সমর্থক। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে যারা ধর্মীয় স্বৈরতন্ত্র কায়েম করার ষড়যন্ত্র করে, তাদের পক্ষাবলম্বন করব। যে মুসলিম ব্রাদারহুড মধ্যপ্রাচ্যে চক্রান্ত এবং ধ্বংসাত্মক ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল, তার ইতিহাস যদি পর্যালোচনা করা হয়, বিশেষ করে ১৯২৮ সাল থেকে, যার প্রতিষ্ঠাতা স্কুলশিক্ষক হাসান আল-বান্না, তারই দর্শন যদি যথাযথভাবে পাঠ করা হয়, তাহলে আর বুঝতে কষ্ট হবে না যে, কেন মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের উত্থান রোধ করা এবং প্রয়োজনে সেখানে প্রচ- কঠোরতা প্রদর্শন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।

পরবর্তীতে মুসলিম ব্রাদারহুডের উত্থান, কার্যক্রম, ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত লেখা যাবে। সেখানে পরিস্কারভাবে উঠে আসবে জামায়াতের সঙ্গে ওই সংগঠনের দর্শনগত, কার্যক্রমগত এবং কাঠামোগত সাদৃশ্য। এখানে শুধু এটুকু বলি, মিসরে মোহাম্মদ মুরসিকে সামগ্রিকভাবে দমনের ভেতর দিয়ে যেভাবে ধর্মীয় জঙ্গি ফ্যাসিবাদের উত্থানকে রুখে দেওয়া হয়েছে, সেটা যদি না করা হত, তাহলে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল বিশ্ব আর এক হিটলার কিংবা লাদেনের উত্থান প্রত্যক্ষ করত।

এবার আসি বেগম জিয়ার অন্যান্য বক্তব্য সম্পর্কে। তিনি বলেছেন, তিনি দেশত্যাগ করেননি, ক্যান্টনমেন্টেই ছিলেন এবং ক্যান্টনমেন্টে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। অবশ্যই সত্যভাষণ করেছেন বেগম জিয়া। অবশ্যই তিনি দেশত্যাগ করেননি। জিয়া তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছেন, এমনকি বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠানো হয়েছে তিনি অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায়। তিনি তাঁদের সঙ্গে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

আগরতলায় বেগম জিয়ার অস্বীকৃতির সংবাদ যখন জিয়াকে দেওয়া হয় তখন তাঁর কি অভিব্যক্তি ছিল, তা জানানোর মতো ব্যক্তি এখনও জীবিত আছেন। যাঁকে জিয়া দায়িত্ব দিয়েছিলেন, বেঁচে আছেন তিনিও। আমি তাঁর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে তাঁর নাম প্রকাশ করলাম না। তবে আশা করব, এই পরিস্থিতিতে ইতিহাসের প্রয়োজনে ন্যায় এবং সত্যের স্বার্থে তিনি নিজেই তা জানাবেন।

তিনি আরও জানাতে পারেন, এ কাজের জন্য ক’জন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। যেহেতু তিনি প্রত্যক্ষ সাক্ষী, তিনি জিয়াউর রহমানকে সেসময় অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সঙ্গ দিয়েছেন, সেই সত্য প্রকাশের অসঙ্কোচ সাহস প্রদর্শনের শেষ সুযোগ তিনি নিতে পারেন। বেগম জিয়ার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে সেই অবরুদ্ধ সময়ে– এই তথ্যটি প্রকাশের মাধ্যমে বেগম জিয়া অবশ্যই এই সম্মানের অধিকারী হলেন, যে সম্মান বাঙালি জাতি একাত্তরে তিন লাখ মা-বোনকে দিয়েছে।
আগরতলায় বেগম জিয়ার অস্বীকৃতির সংবাদ যখন জিয়াকে দেওয়া হয় তখন তাঁর অভিব্যক্তি কী ছিল, তা জানানোর মতো ব্যক্তি এখনও জীবিত আছেন

কিন্তু এরই পাশাপাশি অনেক প্রশ্ন চলে আসে। তাহলে কেন তাঁকে উদ্ধার করার জন্য যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের তিনি বিমুখ করলেন? কেন একাধিকবার সুযোগ পেয়েও তিনি সেই সুযোগ গ্রহণ করলেন না? কেন তাঁর ওপর ক্রমাগত নির্যাতনের তথ্যটি এতকাল জাতির কাছে আড়াল করলেন?

তিনি জানেন কিনা জানি না, তবে একাত্তরের পাক-বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দালালরা একাত্তরে তাঁর ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক ছিল। কারণ মুক্তিযুদ্ধের একজন সক্রিয় সামরিক কর্মকর্তার স্ত্রীকে নিজেদের কব্জায় রাখা তাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার ছিল। অতএব তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল, কোথায় কোথায় তিনি গিয়েছেন, কার কার সঙ্গে কথা বলেছেন, কিংবা চলাফেরা করেছেন– এই সবকিছুরই হিসেব তাদের কাছে জমা আছে।

এমনকি একাত্তরের ডিসেম্বর মাসের ৩ তারিখে যদি যৌথবাহিনীর হাতে পাক বিমানশক্তি পুরোপুরি বিধ্বস্ত না হত, তাহলে ৭ ডিসেম্বরে বেগম জিয়াকে যারা ‘সসম্মানে’ পাকিস্তানে নিয়ে যেতেন, সেই তথ্যও তারা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। অতএব ম্যাডাম খালেদা জিয়া তেতাল্লিশ বছর পর সেসময়ের কথা বলে নিজেকে যতই মুক্তিযুদ্ধের পাদপ্রদীপে আনার চেষ্টা করুন না কেন, তাতে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জিয়াউর রহমান তাঁকে ক্যান্টনমেন্টে চিঠি পাঠিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর নিতেন বলে বেগম জিয়া যে দাবি করেছেন, তা কতখানি সত্য পাঠক বুঝে নেবেন। যাঁকে তিনি বলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণাটি তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সেই একাত্তরে আর্মি ক্র্যাকডাউনের পর দিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়, যাঁকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষক প্রমাণ করার জন্য মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন, যাঁকে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে পাক বাহিনীর সর্বত্র খুঁজে বেড়ানোর কথা– সেই জিয়াউর রহমান সেই অবরুদ্ধ সময়ে পাকিস্তানিদের দুর্গ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আটক থাকা তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন, এটা কি খুব বিশ্বাসযোগ্য কথা হতে পারে? আর তাঁর এ কথা সত্য হলে তো অন্যরকম সন্দেহ দানা বাঁধে।

তিনি বলেছেন যে, জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে তিনি গর্বিত। এমন বীর স্বামীর জন্য স্ত্রী গর্বিত হবেন– এ তো স্বাভাবিক কথা। কিন্তু তিনি কেন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্বামীর কাছে যেতে অস্বীকার করলেন? কেন একজন বিশেষ পাক জেনারেলের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে তিনি উদভ্রান্তের মতো সরকারের সমস্ত প্রটোকল উপেক্ষা করে পাকিস্তানে ছুটে গিয়েছিলেন?

কেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জিয়াউর রহমান তাঁর স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে চেয়েছিলেন? সেসময় তো এজন্য জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু ডেকে ভর্ৎসনা করে খালেদাকে তাঁর কন্যাসম বলে সম্বোধনও করেছিলেন এবং জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু স্ত্রী পরিত্যাগে নিবৃত করেছিলেন। এসব ঘটনার সাক্ষী তো অনেকেই আছেন।

তবে সবচাইতে বেশি যিনি জানেন তিনি তো স্বয়ং বেগম খালেদা জিয়াই। আর জিয়াউর রহমান ’৮১-এর মে মাসের ৩০ তারিখে নিহত হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করতেন, সেটাও কি বেগম সাহেবের চেয়ে বেশি আর কেউ জানেন?

আমি দুঃখিত এভাবে লেখার জন্য। একাত্তর নিয়ে যখন বারবার ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয়, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিংবা স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যখন অহেতুক বিতর্ক তোলা হয়, তখনও যুক্তি কিংবা তথ্য দিয়ে সেসব খণ্ডনের চেষ্টা করি। কিন্তু যখন সেই বিতর্ক উত্থাপিত হয় এমন কারও কাছ থেকে, যিনি তাঁর সংসারজীবনের জন্য, সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য, ক্ষমতার শীর্ষবিন্দুতে উপবেশনের জন্য, তাবৎ জাগতিক সমৃদ্ধির জন্য সেই মহান মানুষটির কাছে, সেই পরিবারের সদস্যদের কাছে চিরঋণী থাকার কথা– তখন সত্যিই খুব খারাপ লাগে।

অকৃতজ্ঞতারও একটা সীমারেখা থাকে, যখন সেই সীমারেখাটি বার বার লঙ্ঘিত হয়, যখন অরুচিকর কুৎসিত আক্রমণে বিদ্ধ করা হয় এমন একজন মানুষকে, যাঁর কর্ম ও চেতনায় বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ছাড়া আর কিছু ছিল না, তখন সত্যিই ক্ষুব্ধ হতে হয়।

আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি না। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আমার অনেক সমালোচনাও রয়েছে। অনেক অপরিপক্ব পদক্ষেপে আমিও বিরক্ত হয়েছি, কিন্তু যে মানুষটির একনিষ্ঠ অবদানের জন্য আমরা আজ সহস্র বছর পরে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি, একটি পতাকা পেয়েছি– সেই মানুষটিকে এত অশ্রদ্ধা করা যায়! এত অসম্মান করা যায়! যে নিজের পিতৃপরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে সে কী দেবে তার নিজের পরিচয়? কী হবে তার অস্তিত্বের ঠিকানা?


আমার অবাক লাগে, স্বয়ং জিয়াউর রহমান যেখানে তাঁর জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুকে সামান্যতম অসম্মান করেননি। অবশ্য বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের বিপরীতে তিনি তাঁর রাজনীতি পরিচালনা করতে গিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের খাঁচায় ঢুকে পড়েছিলেন বলে একপর্যায়ে তাঁকে চরম মূল্যও দিতে হয়েছিল বটে। কিন্তু তিনি কখনও নিজেকে বঙ্গবন্ধুর স্থলে কল্পনা করেননি। সেখানে তাঁর স্ত্রী এবং মত ও পথভ্রষ্ট পুত্র কীভাবে এত বিবেকবর্জিত কথাবার্তা বলতে পারলেন?

যারা এভাবে কথা বলতে পারেন, এভাবে ভাবতে পারেন, তাদের ব্যাপারে শুধু এটুকুই বলা যায় যে, তারা বিধাতার সৃষ্টির চরম অপচয়।

আবেদ খান: সাংবাদিক, কলামিস্ট, সম্পাদক দৈনিক জাগরণ।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test