E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

১৫ই আগস্ট, দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা পরা ঐ ছায়ায় ...

২০১৬ আগস্ট ১২ ১৪:৪৬:২২
১৫ই আগস্ট, দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা পরা ঐ ছায়ায় ...

মাহবুব আরিফ :


বাঙালি জাতির সবচাইতে দুঃখের মাস হচ্ছে অগাস্ট মাস, এ মাসে বাঙালি জাতি তার সব চাইতে প্রিয় মানুষটিকে কিছু বিপথগামী, দেশদ্রোহী ও পরাশক্তি আশীর্বাদ পুষ্ট কুলাঙ্গারদের দ্বারা প্রাণ হারান।

প্রতিটি বাঙ্গালীর হৃদয় এ মাস একটি বিষণ্ণতার মাস, অথচ এ মাসেই বেগম জিয়া তার নকল জন্মদিন পালন করে বঙ্গবন্ধুকে করেন অবমাননা, এই মহিলার স্পর্ধা দেখে সত্যই অবাক হই। এবারও যদি বেগম জিয়া কোকোর মৃত্যুর তিন দিন পর তার নকল জন্মদিন পালন করার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন তবে বিএনপি থেকে এই মহিলাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করাটাই হবে যুক্তি সঙ্গত কাজ।

১৫ অগাস্ট বাঙালি জাতি তার প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে যখন দিশেহারা মুস্তাক দল তখন সামরিক বাহিনীর ছত্র ছায়াতে দেশটাকে নরকের সীমানার কাছে পৌঁছে দিতে থাকে। সংবিধানের উপর শুরু হয় অত্যাচার, হ্যাঁ আর না ভোটে বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের বেতনভুক্ত পাকি সমর্থক সামরিক কর্মকর্তা হয়ে উঠেন দেশের শাসক, শুরু হয় রাজাকার, আলবদর আর আল শামসদের পুনর্বাসন, ১৯৭২ এর সাংবিধানিক আইন রাজনীতিতে ধর্ম নিষিদ্ধ আইনকে বাতিল করেই জামায়াতকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান মৃত্যুর পর সুযোগ বুঝে ১৫ই আগস্টকে জন্মদিন বানিয়ে ফেলেন তারই স্ত্রী বেগম জিয়া, আর সেই থেকেই নকল জন্মদিন পালন করে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করার সুযোগ পেয়ে বসেন। জাতি এই জঘন্য কর্মটিকে অন্তর থেকেই ঘৃণা জানায়।

জামায়াত শিবির ও বাংলা ভাইদের অত্যাচারে বিএনপির দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে বাঙালি জাতি আবারও দিশেহারা হয়ে পরে, আর এদিকে সুযোগ সন্ধানীরা মুজিব কোট সেলাইয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠে, পাড়ায় মহল্লায় নব্য আওয়ামী লীগারদের মাঝে হঠাৎ করেই মুজিব কোট পরার হিড়িক শুরু হয়।

আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলেও নব্য আওয়ামী লীগারদের দাপটে ৭২ এর সংবিধানের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার প্রতি কেউ দৃষ্টি দিতে সাহস পায় নাই, কারণ সংবিধান থেকে ধর্মীয় অনুভূতিকে বাদ দিলেই মোল্লারা যদি আওয়ামীলীগের প্রতি কিঞ্চিত রাগ করে বসেন তবেই তো ভোটের রাজনীতি শেষ, এভাবেই বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রণয়ন করা ৭২ এর সংবিধান হয়ে পরে অবহেলিত ও অনর্থক।

স্বৈরশাসক এরশাদ কর্তৃক গৃহীত ও সংযোজিত আইন রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম সংবিধানেই থকে যায়, আওয়ামীলীগে সবার অগোচরে কিঞ্চিত মুসলিম লীগের হাওয়া বইতে শুরু করে। মেহনতি মানুষের তথা কৃষক, শ্রমিক আর সমাজের নিষ্পেষিত মানুষের নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধামা চাপা পরতে শুরু করে, হায়রে শোনার বাংলার মানুষ , সবার অগোচরেই বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিক লীগের নেতা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আজো দিশেহারা।

বঙ্গবন্ধুকে দলের মাঝে ধরে রাখার একমাত্র উপায় ২০১১ সালে সংবিধানে ১৩তম সংশোধনী ৪ 'ক' অনুচ্ছেদে বলা হয় সকল সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও আধাসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতি বাধ্যতামূলকভাবে প্রদর্শন করতে হবে, কিন্তু সংবিধানে স্বৈরশাসক এরশাদ কর্তৃক সংযোজিত ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তথা অষ্টম সংশোধনী যেমনটি ছিল তেমনটি থেকে যায়। উপরন্তু এরশাদ হয়ে পড়ে সরকারের শরিক দল।

শুরু হয় জঙ্গি উত্থান, ধর্মের দোহাই দিয়ে শুরু হয় ব্লগার হত্যা, ধর্মান্ধরা হয়ে উঠে বেপরোয়া। শফি হুজুর যখন মুক্তমনাদের হত্যার হুমকি দিয়ে বসে সেটাকে উপেক্ষা করে মুক্তমনাদের জন্যে ৫৭ ধারার খড়গ প্রস্তুত থাকে, ব্লগার অথবা মুক্ত মনাদের কল্লা হয়ে ওঠে ধর্মান্ধদের বেহেস্তের চাবি কাঠি। আজ যে দলের মাঝে বেলি ফুলের মালা দিয়ে জামায়াত শিবিরের কর্মীদের বরণ করে নয়া হয়, যে দলের শরিক থাকে একজন স্বৈরশাসক, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এরূপ অন্যায় সহ্য করতেন না।

কেউ কি একবারের জন্যে ভেবে দেখেছেন আজ এই মেহনতি বাংলার মানুষ তথা কৃষক, শ্রমিক ও মুজুরদের নেতা বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এই অন্যায় চোখ বুজে সহ্য করতেন? বাংলার মানুষ, ছাত্র জনতা প্রাণের গভীর থেকে এই মহান মানুষটিকে বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত করে, কাজেই বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শকে দয়া করে দল থেকে মুক্তি দিন, তিনি এই বাঙালি জাতির নেতা, আমাদের মাঝেই বেঁচে থাকবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কোন দলের বেড়াজালে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আবদ্ধ থাকার নয়।

গত ২৩শে জুলাই, ২০১৫ইং, বাসস পরিবেশিত সংবাদে, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব আশরাফুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুকে সার্বজনীন শ্রদ্ধাভাজন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে মিডিয়ার সাহায্য চেয়েছেন, অতি প্রশংসনীয় প্রস্তাব, আমি বলি কি, তার আগে আওয়ামীলীগ থেকে দুর্নীতিবাজ, ধান্দাবাজ, অতি আওয়ামী লীগারদের দল থকে বর্জন করুন কারণ তারাই ভালোটা চায় না, বঙ্গবন্ধুকে দলের বেড়াজালে আটকে রাখতে চান, দেশী ও প্রবাসী এইসব ধান্দাবাজরাই মুজিব কোট পরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পাহারাদার সেজে বসেছেন।

বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শ আমাদের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে আছেন ও থাকবেন। জয় বাংলা।

লেখক : সুইডেন প্রবাসী

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test