E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রবাসে ভ্রমণ ও নিরাপত্তা

২০১৬ সেপ্টেম্বর ০৯ ১৭:১৪:০২
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রবাসে ভ্রমণ ও নিরাপত্তা

মাহবুব আরিফ : প্রবাসে প্রধানমন্ত্রী যে হোটেলে অবস্থান করছেন সেই হোটেলের করিডোর অসংখ্য শুভাকাঙ্খীদের ভিড়। সবাই লাইন ধরে দাড়িয়ে আছেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এই পথ ধরে হেটে যাবেন। তিনি ধীর গতিতে হেটে যাবার প্রাক্কালে হঠাৎ শত বাধাকে উপেক্ষা করে কয়েকজন ঝাঁপিয়ে পড়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পায়ের উপর শুয়ে পড়ে কদমবুচি করছেন। হোটেল লবীতে জয় বাংলা চিত্কারে আকাশ বাতাস মুখরিত করা শ্লোগান চলছে। কেউবা হয়তো ধাক্কা ধাক্কি করে সেলফি তোলাতে ব্যস্ত।

সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে প্রবাসে আওয়ামীলীগের নেতাদের মাঝে অনেকটা ঈদের উত্সব, কে কার আগে সেলফি তুলবে সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। হোটেলে ভিন দেশের অতিথিরা একটু উদ্বিগ্নতার সাথেই নিরাপদ দুরত্বে চলে গেছেন। নিরাপত্তা কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে জনসাধারনে কাছ থেকে নিরাপদ দুরত্বে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, একটু পর সব্বাইকে দুরে ঠেলে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী নিরাপত্তা কর্মী বেষ্ঠিত গাড়ীতে উঠে গেলেন, হয়তো ভাবছেন একটা গল্প ফেদে বসেছি, আসলে এটা কোন গল্প নয় প্রধামন্ত্রী প্রবাসে ভ্রমণের সময় এটা একটা স্বাভাবিক চিত্র।

খবরে প্রকাশ আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন দেশ নিরাপত্তার স্বার্থে সকল আন্তর্জাতিক ও দেশীয় জঙ্গি তৎপরতাকে যে কোন মূল্যে রুখে দিতে হবে, ‘জঙ্গিবাদের বিপদ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেছেন।

বিষয়টি বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বাস্তব সম্মত উক্তি, আর ঠিক তাই আমি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। এখানে অতীব বাস্তব সত্য হচ্ছে যে, শুধু দেশের নিরাপত্তা নয়, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাও বিশেষ ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে দেশের পরিস্থিতিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছেন তা নিঃসন্দেহে শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আজ কঠোর অবস্থানে।

গত ৮ই ডিসেম্বর ২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সন্ত্রাসী হামলায় ১৩০ জনের প্রাণ হানি ঘটে, ২২শে মার্চ ২০১৬ সকালে তিনটি সম্মেলিত আত্মঘাতী বোমা হামলায় বেলজিয়ামে ব্রাসেলস বিমানবন্দরে ওপর একটি ঘটনায় বত্রিশ জন বেসামরিক নাগরিক মানুষ প্রাণ হারায়, এইসব বীভৎস সন্ত্রাসী কর্ম কান্ডের কথা আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে।

সন্ত্রাসী ধর্মীয় উন্মাদনা হাত থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশ, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকার হলি আর্টিশিয়ান ব্যাকারিতে ঘটে যায় বাংলাদেশের নির্মমতম ভয়াবহ জঙ্গি হামলা, প্রাণ হারায় ২২টি নিষ্পাপ প্রাণ, যাদের মাঝে অধিকাংশই বিদেশি নাগরিক।

ইউরোপের দেশগুলো কঠোর জঙ্গি দমনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর ধর্মীয় উগ্রবাদীদের জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলো তাদের হামলার ধরণ পাল্টাতে থাকে, দলীয় ভাবে আক্রমণ থেকে তারা একক ভাবে হামলা প্রক্রিয়ায় সক্রিয় হতে থাকে, তার একটি প্রমান হলো লন্ডনের রাসেলস স্কয়ারে, সেই সন্ত্রাসী একজন সোমালি বংশোদ্ভূত নাগরিক একজন আমেরিকান নারী হত্যা করে পাঁচটি পথচারীকে আহত করে।

কাজেই পৃথিবীর বুকে যারাই বিভিন্ন দেশে এই উন্মাদনা রোধে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের অন্যতম কাজেই যথেষ্ট নিরাপত্তার সাথে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক মানের গোয়েন্দা কর্মদক্ষতা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে জামাত শিবিরের টাকা যে শুধু বাংলাদেশীই সন্ত্রাসী কর্ম কাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে তা নয়, বিগত তিন কি চার বছরের প্রবাসে সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামীলীগ নামে যে তাণ্ডব রচিত হয়েছে তাতে যে জামাত শিবিরের টাকা ছিটানো হচ্ছে না তা হলপ করে বলা যায় না।

দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার কারণে নিজ অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করতে পারছি যে, দেশ ও আওয়ামীলীগের সুনামকে ক্ষুণ্ণ করার জন্যে দেশের মত প্রবাসেও তারা কোটি কোটি কালো টাকা ব্যয় করে যাচ্ছে, অসংখ্য হাইব্রিড আওয়ামী নামধারীদের নেতাদের প্রলুব্ধ করে একটি অঘটন ঘটাবার অপেক্ষায় মাত্র, জামাতের টাকার অভাব নাই, তাই টাকা থাকলে বাঘের চক্ষু পাওয়া যায়, দু-একজন আওয়ামী হাইব্রিড নেতাদের কিনে ফেলা হাতের একটি চুটকি মাত্র।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপ সফরের সময় দেখায় যায় ইউরোপের আওয়ামীলীগের নেতাদের মাঝে ঈদের আমেজ, নাগরিক সম্ভার্ধনার নামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী জনসাধারণ খুবই কাছাকাছি চলে আসেন যা বর্তমান পৃথিবীর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মোটেই নিরাপদ বলে বোধ করি না।

বিভিন্ন সময়ে নিরাপত্তার কারণে ইউরোপে এ ধরনে চাটুকার বেষ্টিত পরিমণ্ডলে প্রধানমন্ত্রীর বিচরণ অনেক প্রবাসীদের বিচলিত করে, কারণ প্রবাসীরাও ঠিক আপনার আমার মত করেই তার দেশ ও দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্তর থেকেই ভালোবাসে। প্রবাসে আমাদের সবারই জানা যে এই প্রধানমন্ত্রীকে সহজে হারানোর ক্ষমতা বা সামর্থ্য আমাদের নাই।

সরকার ও বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে বিশেষ ভাবে অনুরোধ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রবাস ভ্রমণের সময় যেন বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।

লেখক : সুইডেন প্রবাসী

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test