E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভারত-পাকিস্তান সংকট এবং বাংলাদেশ

২০১৬ সেপ্টেম্বর ২৭ ২২:০৩:৪২
ভারত-পাকিস্তান সংকট এবং বাংলাদেশ

শিতাংশু গুহ :


ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০ সেপ্টেম্বর এক বার্তায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, বাংলাদেশ ভারতের পাশে আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর এ বার্তা কেন্দ্র করে ফেসবুকে একটি ছোট্ট পোস্টিং দিয়েছিলাম এই বলে যে, এতদিন মোদি বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে; এবার শেখ হাসিনা বললেন, বাংলাদেশ ভারতের পাশে আছে, সাবাশ। এতে ব্যাপকভাবে ‘লাইক’ পড়ায় মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের এই উঠে আসায় সবাই খুশি। অন্যদিকে ফেসবুকে অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশের নব্বই ভাগ মানুষ ভারতের বিপক্ষে এবং পাক-ভারত যুদ্ধ হলে সবাই চাইবে পাকিস্তান জিতুক। কেউ কেউ এও বলেছেন, ভারতের শোচনীয় পরাজয় ঘটবে।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রাক্কালে রাজা কৃষ্ণের সমর্থনের জন্য দুর্যোধন ও অর্জুন তার দরবারে উপস্থিত হলে, কৃষ্ণ উভয়কে সাহায্য করতে সম্মত হন। কৃষ্ণ একদিকে তার সৈন্যবল এবং অন্যদিকে তিনি একা, এ দুটোর মধ্যে কে কোনটা চান জানতে চাইলে কৌরব দুর্যোধন প্রথমেই কৃষ্ণের বিশাল সৈন্যদল চেয়ে নেন, ফলে পাণ্ডব অর্জুনের ভাগে পড়ে শুধুই শ্রীকৃষ্ণ। যুদ্ধের ফলাফল সবার জানা। অনুরূপভাবে, যুদ্ধ বাধলে ভারতের সম্ভবত শুধুমাত্র শেখ হাসিনা ও তার অনুগামী প্রতিশীলদের নৈতিক সমর্থনই দরকার হবে, পাকিপ্রেমী বাংলাদেশিদের নয়। তবে নব্বই শতাংশ হিসাবটা সম্ভবত বাড়াবাড়ি। যদিও, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রিকেট খেলার সময় ঢাকার মাঠের চিত্রটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আশার কথা যুদ্ধটা সম্ভবত হচ্ছে না, অন্তত মোদির কথায় এ মুহ‚র্তে তাই মনে হচ্ছে।

ছোটখাট ঘটনাবলি বাদ দিলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দুটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৫ এবং ১৯৭১। পাকিস্তান কি কোনোটায় জিতেছে? ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় আমরা হাইস্কুলে পড়ি। একদিন ইতিহাসের শিক্ষক জবেদ আলী স্যার ক্লাসে বললেন, ‘চ্যাগলা লাহোরে চা খেতে চেয়েছিল, কিন্তু চায়ের কাপ থেকে সাপ ফণা বের করে ছোবল মেরেছে’। চ্যাগলা ছিলেন তখন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ওই সময় ইসলামামাবাদ দেশবাসীকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছিলেন যে, ওই যুদ্ধে পাকিস্তান জয়ী হয়েছে, যদিও বাস্তব ঠিক উল্টো। বাঙালিরা সেটা বুঝতে সমর্থ হয় ১৯৭১ সালে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসঙ্গে যাব না; তবে ১৯৭১-এ ভারতের ‘ডিসাইসিভ ভিক্টরি’ পাকিস্তানকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়। ওই সময় ভারত কেন একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে সেটা আজো রহস্যময়; শ্রীমতি গান্ধী তা জানতেন কিন্তু তিনি তো নেই?

তবে এ প্রসঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী তার আত্মজীবনী ‘মাই ট্রুথ’ গ্রন্থে বলেছেন- পূর্ব রণাঙ্গনে সম্পূর্ণ বিজয় হয়েছে, পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণে সম্মত। ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে মন্ত্রিপরিষদ এবং সমরনায়কদের পৃথক পৃথক বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রথমে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে উভয় রণাঙ্গনে একতরফা ‘যুদ্ধবিরতির’ সিদ্ধান্ত হয়। এই বৈঠকের পর শ্রীমতি গান্ধী যান জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে। সেনাপতিরা তখন আনন্দিত এবং পশ্চিম রণাঙ্গনে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে জোরালো বক্তব্য পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জানান, একটু আগে মন্ত্রিপরিষদ যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেনারেলরা বিরক্ত হন, আপত্তি জানান। শ্রীমতি গান্ধী উঠে দাঁড়ান, স্পষ্ট ভাষায় আবারো বলেন, মন্ত্রিপরিষদ যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যান্ড দ্যাট ইজ ফাইনাল। এ কথা বলে তিনি বেরিয়ে যান। এর পরের ইতিহাস সবার জানা।

এবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হবে কিনা তা নিয়ে হয়তো এখনো সংশয় আছে। যুদ্ধ হলে কে জিতবে সেটি একটি প্রশ্ন বটে! তবে যারা পাকিস্তান জিতবে বলে আশা করে বসে আছেন, তারা একাত্তরেও ডিসেম্বর মাসে ঢাকার আকাশে ভারতের বিমান দেখে পাকিস্তানি বোমারু ভেবে খুশি হয়েছিলেন! এরা ভুলে যাচ্ছে যে, ১৯৭১-এর ভারত আর ২০১৬-এর ভারত এক জিনিস নয়। তবে যুদ্ধ কাম্য নয়। যুদ্ধ হোক বা না হোক, ভারত এবার প্রতিশোধ নেবে তা নিশ্চিত, কিভাবে সেটা দেখার বিষয়। সিন্ধুর জলচুক্তি বাতিল করে? পাকিস্তানের ভেতর ঢুকে সন্ত্রাসীদের পেটাবে? ৬৫ বা ৭১-এ ভারত কিন্তু পাকিস্তান আক্রমণ করেনি, যুদ্ধটা শুরু করেছে পাকিস্তান। তবে এ কথা বলা যায়, ভারত বাধ্য করেছে, পাকিস্তানকে যুদ্ধ শুরু করতে। পঁয়ষট্টিতে নিরাপত্তা পরিষদ এবং একাত্তরে ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।

এখনকার মতো তখন পাকিস্তান সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল না। এখন পাকিস্তান ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’। আর ভারত একটি বিশ্বশক্তি। যারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিয়ার তুলনা করেন, তারাই কেবল ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের তুলনা করে আত্মপ্রসাদ লাভ করতে পারেন! ভারত মনে হয় এবার প্রথম দিকে সীমিত যুদ্ধের পক্ষে ছিল বা এখনো আছে কিন্তু যুদ্ধটি সীমিত থাকবে কিনা সেটি নিশ্চিত না হলে যুদ্ধে যাওয়াটা কতটা যৌক্তিক সেটাও বিবেচ্য। এ সময়ে পাকিস্তানের প্রাণভোমরা হচ্ছে তার ‘পারমাণবিক বোমা’। তাই আসল যুদ্ধের চেয়ে উভয় দেশ বাকযুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত আছে; নেতারা নরমে-গরমে বক্তব্য রাখছেন। যুদ্ধের দামামাও বাজছে, তবে থেমে থেমে। পাকিস্তানে নেতারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছেন। ভারতের নেতারা পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার কথা বলছেন। ভারত কি থোড়াই কেয়ার করে পাকিস্তানকে?

একটি গল্প বলি। এক ভারতীয় এবং এক পাকিস্তানিকে ঈশ্বর একটি করে বর দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। প্রথমে পাকিস্তানি বলল- ভারত সব সময় আমাদের জ্বালায়, হে পরওয়ারদিগার তুমি পাকিস্তানের চারিদিকে এমন একটি উঁচু দেয়াল করে দাও যেন ভারত আর আমাদের ডিস্টার্ব করতে না পারে। সৃষ্টিকর্তা বললেন, ‘তথাস্তু’। এবার ভারতীয়ের চাওয়ার পালা। তিনি জানতে চাইলেন, হে ওপরওয়ালা, আপনি পাকিস্তানের চারিদিকে যে দেয়ালটি দিচ্ছেন, সেটির উচ্চতা কত? স্রষ্টা জানালেন, এমন উঁচু যে ওটা কেউ টপকাতে পারবে না। ভারতীয় আবার প্রশ্ন করেন, ওখানে কোনো ফাটল থাকবে না তো বা পানি বেরিয়ে যাবে না তো? সৃষ্টিকর্তা এবার বিরক্ত হয়ে বললেন, না, ওটা একেবারে ইস্পাত-কঠিন হবে। ভারতীয় এবার খুশি হয়ে বলেন, তাহলে হুজুর আপনি ওটা পানি দিয়ে ভরে দিন।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে বিষয়টি হয়তো ওই রকমই হবে। তবে অনেকে মনে করেন, এবারকার যুদ্ধের বাই-প্রোডাক্ট হবে ‘স্বাধীন বেলুচিস্তান’। অথবা নির্ঝঞ্ঝাট কাশ্মির বা পাঞ্জাবি পাকিস্তান। যারা ভারত ভাঙার দিবাস্বপ্ন দেখছেন, তারা আবারো হতাশ হবেন। গত সত্তর বছরে অনেকের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও ভারত ভাঙেনি। গণতন্ত্র থাকলে হয়তো কখনো ভাঙবে না। এটাই গণতন্ত্রের শক্তি। ভারতের সমস্যার অন্ত নাই; কিন্তু বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। অনেকে আহাম্মকের মতো বলেছেন, ভারতের ১৮ কোটি মুসলমান পাকিস্তানের পক্ষ নেবে! পক্ষান্তরে পাকিস্তানে গণতন্ত্র নেই, পারমাণবিক চাবিকাঠিও নওয়াজ শরীফের হাতে নেই, সরকার এবং সন্ত্রাসীরা প্রায় সমান শক্তিশালী। সেনাবাহিনী ‘কারগিল’ সংকট সৃষ্টিকালে প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর প্রয়োজনও বোধ করেনি। আমেরিকা ভেতরে ঢুকে গিয়ে বিন লাদেনকে মেরেছে। ভারত আজাদ কাশ্মিরে ঢুকে গিয়ে প্রায় একশ সন্ত্রাসীকে মেরে এসেছে। পাকিস্তানের কিচ্ছু বলার নেই।

এবার যুদ্ধ বাধলে পাকিস্তানের পক্ষে আইএস বা এরদোগানের তুরস্ক বা অন্য দু’একটি ছোটখাট জঙ্গি রাষ্ট্র ছাড়া কাউকে পাওয়া যাবে না। যারা চীন পাশে দাঁড়াবে বলে পুলকিত হচ্ছিলেন, তাদের জানা থাকা দরকার চীন বা আমেরিকা দূর থেকে হাততালি দেয়া ছাড়া অন্য কিছু করে না। একাত্তরে চীন এগিয়ে আসেনি! ২০১৬- তেও আসবে না। তুরস্ক-আইএস-পাকিস্তান বিশ্বব্যাপী ইসলামি সন্ত্রাসের মদতদাতা, বৃহৎ শক্তি চীন-রাশিয়া-আমেরিকা সবাই এর ভুক্তভোগী। সদ্য মার্কিন কংগ্রেসে পাকিস্তানকে জঙ্গিরাষ্ট্র ঘোষণার একটি বিল উঠেছে। ‘পাকিস্তান স্টেট স্পন্সর অফ টেরোরিজম ডিজেগনেশন’ এ্যাক্ট নামে এই বিলটি এইচআর ৬০৬৯ নামে পরিচিত। এটি কার্যকর হোক বা না হোক, কিন্তু এ সময়ে এটি পাকিস্তানের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর। পাকিস্তান গ্রহীতা, সন্ত্রাস ব্যতীত এর দেয়ার কিছু নেই। ভারত বিশ্ব-উন্নয়নের অংশীদার, পার্টনারকে জমাখরচ দিতে হয় বটে!

যুদ্ধের দামামার সঙ্গে সঙ্গে এবার কাশ্মির ও বেলুচিস্তানের কথাও বহুলভাবে আলোচিত হচ্ছে। কাশ্মির সর্বদাই ভারত-পাকিস্তান রাজনীতির ‘এসিড টেস্ট’ ছিল; অধুনা যুক্ত হয়েছে ‘বেলুচিস্তান’। কিন্তু কাশ্মির ও বেলুচিস্তান এক নয়। ভারত কাশ্মির সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনৈতিক উপায়ে; আর পাকিস্তান বেলুচ সমস্যা মেটাতে চাইছে সামরিকভাবে। বালুচিস্তান একক শক্তি। কাশ্মির মুখ্যত জম্মু-কাশ্মির যা ভারতের দখলে; আজাদ কাশ্মির পাকিস্তানের দখলে এবং চীনের দখলের অংশ ‘আকসাই-চীন’। কাশ্মিরের বেশিরভাগ অংশ, প্রায় ৮৫ হাজার বর্গমাইল ভারতের দখলে। আবার জম্মু হিন্দু অধ্যুষিত, কাশ্মির মুসলিম এবং লাদাখ বৌদ্ধ অধ্যুষিত। ১৯৪৭-এ শেখ আব্দুল্লাহর পরামর্শে কাশ্মিরের রাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেন। শের-এ-কাশ্মির আব্দুল্লাহর অনুসারীরা এখনো ভারতের সঙ্গে থাকতে চান, জম্মুর হিন্দুরাও তো আছেনই। তাপস চৌধুরী নামে এক ভদ্রলোক এ বিষয়ে এক নিবন্ধে বিশদ আলোচনা করে বোঝাতে চেয়েছেন, বেলুচরা স্বাধীনতা পেলেও কাশ্মিরের জন্য সেটা অসম্ভব।

পক্ষান্তরে বেলুচিস্তান ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের অংশ ছিল না; ১৯৪৮-এ পাকিস্তান সেটি যখন নেয়, সেই অবধি বেলুচরা স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষিপ্রধান গোটা বেলুচিস্তান পাকিস্তানের মোট আয়তনের অর্ধেকের একটু কম এবং খনিজ সম্পদে ভরপুর। ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত থাকায় শিয়া-সুন্নি প্রভাব আছে। ক’দিন আগে মিডিয়ায় একটি সংবাদ বেশ আলোড়ন তুলেছিল, তাতে একজন বেলুচ বলছেন, ‘আমাকে যা-ইচ্ছে তাই বলুন, কিন্তু পাকিস্তানি বলবেন না’। এটাই বেলুচদের অবস্থান! শিয়া-সুন্নি প্রশ্নে পাকিস্তান-ইরান সম্পর্ক ভালো নয়, অবশ্য সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের মাখামাখিও এর অন্যতম কারণ। পাক-ভারত যুদ্ধে সুকর্নোর ইন্দোনেশিয়া বা নাসেরের মিসর অতীতে ভারতের পক্ষে ছিল। সেই হিসেবে যুদ্ধের হিসাবটা পাকিস্তানের জন্য খুব সুখকর হবে না। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে শিয়াদের সংখ্যা খুব নগণ্য নয়।

তদুপরি, কাশ্মিরিরা একটি ইসলামি রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করছে। বেলুচরা বাংলাদেশের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চায়। আবার কাশ্মির যেমন দুর্গম অঞ্চল এবং ভারতের ওপর নির্ভরশীল, বেলুচিস্তান তা নয়। বেলুচিস্তানের মুসলমানরা কেন পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চায় না এই বিষয়টি বুঝতে পারলে বাংলাদেশের মৌলবাদীরা সম্ভবত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে একটি মুসলিম রাষ্ট্র বানাতে সচেষ্ট হতেন না। আমার রাশিয়ার প্রফেসর বন্ধু তরুণ চক্রবর্তী এক বিনীত সতর্কবার্তায় সবাইকে পাক-ভারত প্রশ্নে লিখে অনেকের বিরাগভাজন না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। আসলে রাজাকারের অনুরাগভাজন হয়ে কি কোনো লাভ আছে? পাকিস্তানের নামের আগে ‘পাক’ শব্দটি থাকলেও কাজ কি সবই ‘না-পাক’ নয়?

আমার ওই তরুণ বন্ধু স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, এবারকার মতো ১৯৯৮ সালে ভারত-পাকিস্তান সংকট চরম আকার ধারণ করলে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি গিয়েছিলেন মধ্যস্থতা করতে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী বিষয়টি ততটা আমলে নেননি। এবারো কিন্তু শেখ হাসিনা দ্রুত মোদিকে বাংলাদেশের সমর্থনের কথা জানাতে মোটেও দেরি করেননি। আঠারো বছরের ব্যবধানে উভয় পদক্ষেপই সঠিক। পার্থক্য হলো, শেখ হাসিনার এবারের সমর্থন যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করেছে। মোদি সদ্য তার এক ভাষণে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এনে পাকিস্তানকে ধোলাই করেছেন। তাই বলতে হয়, আঠারো বছর আগের ভারত এবং শেখ হাসিনা এক বস্তু নন। ২০১৬-এর শেখ হাসিনার সমর্থন এখন মোদির কাছে কাম্য এবং আদরণীয়। এই দুই দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশও এক জায়গায় নেই, দেশের গুরুত্ব যথেষ্ট বেড়েছে এবং সম্মান বেড়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী কলাম লেখক।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test