E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আওয়ামী লীগে নতুন রক্তের সঞ্চালন

২০১৬ নভেম্বর ০২ ১৫:৪১:১৭
আওয়ামী লীগে নতুন রক্তের সঞ্চালন


চৌধুরী আবদুল হান্নান



২৪ অক্টোবর ‘সমকালে ’ দৃষ্টি কেড়েছেন পীযূষ কান্তি’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে কেবল আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীরাই সীমাহীন আনন্দিত হননি, আবেগ আপ্লুত হয়েছেন রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি মাত্রই।

পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি। দীর্ঘদিন যাবৎ দলের জন্য এক নিবেদিত প্রাণকর্মী। তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করেছেন, উনসত্তরের গণ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

১৯৭৫ সালে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদানের জন্য বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হিসেবে তাকে মনোনয়ন দেন বঙ্গবন্ধু । কিন্তু এর তিন দিন পর সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হন। এ নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে ওই সম্মেলনে যোগদান না করার ঘোষণা দেন তিনি। প্রতিনিধি দলের অন্যরা সম্মেলনে যোগদান করলেও তিনি যোগদান করেন নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার খলনায়ক খন্দকার মোস্তাকের নির্দেশ সত্ত্বেও সম্মেলনে যোগদান না করায় তার রোষানলে পতিত হন তিনি।

এবার দল তাঁকে মূল্যায়ন করেছে, সন্মানিত করেছে। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সম্মেলনে তাকে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী ফোরাম সভাপতি মন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছে। প্রচার বিমুখ তৃনমূলে জনপ্রিয় এক প্রকৃত কর্মীকে র্শীষ ফোরামে স্থান দেওয়া দলের মধ্যে গুনগত পরিবর্তন আনার মানসিকতা বহন করছে। একজন যোগ্য ব্যক্তি তার উপযুক্ত মর্যাদা পেয়েছেন যা স্বাভাবিক খবর, বিস্ময়কর কোন ঘটনা নয়। তবে বিস্ময় রয়েছে অন্য খানে।

তা হলো দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার প্রখর দৃষ্টি। পদ পদবির জন্য নানামুখি তদবির, তোষামদ, চাটুকারিতার জ্বালায় নিত্য চাপে থাকতে হয় দলের র্শীষ নেতাদের, বিশেষ করে সভাপতিকে। সেক্ষেত্রে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার নেতা-কর্মীর মধ্য থেকে প্রকৃত নেতা খুঁজে বের করা সহজ কাজ নয়, বড়ই দুরূহ। দলের প্রতি একনিষ্ঠ ভালবাসা আর অকৃত্রিম দেশপ্রেম ছাড়া তা মোটেই সম্ভব নয়। যে দলের পরিচালকের তীক্ষ্ন দৃষ্টি এত প্রসারিত তারা তো এগিয়ে যাবেই।
পী

যূষ কান্তির মত নির্লোভ, নিভৃতচারী অনেক নেতা এখন ও নিশ্চয়ই নেতৃত্বের বাইরে রয়েছেন। তাঁরা বাহ্যিক চাকচিক্যহীন, সাধারণ। কিন্তু দলের জন্য অসাধারণ। এ জাতীয় নেতাদের সমগ্র দেশ থেকে খুঁজে এনে দলের মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে। ফলে দলে নতুন রক্তের অনুপ্রবেশ ঘটবে। গুনগত পরিবর্তন শুরু হবে। দলের তরুন সাধারণ সম্পাদক (হ্যা তরুনই) ওবায়দুল কাদের বলেন ‘জনগনের কাছে সরকার আরও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। এসব কিছু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনের দৃশ্যপট। আওয়ামী লীগ গুনগত পরিবর্তনে এগোচ্ছে। নি:সন্দেহে এসব আলোর ইশারা। ’

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগন বটবৃক্ষের ছায়াতলে র্দীঘদিন কাজ করার অভ্যাসের ফলে তারা শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্ব ভাবতে নারাজ। শেখ হাসিনা যতই নতুন নেতৃত্বের কাছে দলীয় ক্ষমতা ছেড়ে দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করুন না কেন, তাঁর জন্য সে সুযোগ সহসা তৈয়ার হবে না। তাছাড়া সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সম্মেলনে তাঁর প্রতি নেতা কর্মীদের যে বাধভাঙ্গা ভালবাসা , সমর্থন লক্ষ্য করা গেছে তাতে এ বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় হয়েছে। শেখ হাসিনা এখন নিজের আলোতে আলোকিত, কর্মীদের প্রেরণার উৎস।

আওয়ামী লীগের আজম্ম লালিত নীতি বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তর এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা পূর্নতা পাবে, সে প্রত্যাশা সকলের। দলটি যে ভাবে সংগঠিত হচ্ছে তাতে আমরা আশার আলো দেখি। তবে দুর্বল বিরোধী দল বা বিরোধী দলহীন সংসদ শাসক দলের জন্য আপাত ভাল মনে হলে ও তা ধীরে ধীরে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেয় যা ইতিহাসের শিক্ষা।

দলে অনবরত সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। যারা দলের জন্য বোঝা, কলংক তাদের পদ পদবি থেকে বাদ দিতে হবে এবং পীযূষ ভট্টাচার্য্যরে মত কর্মীদের কাছে নিতে হবে। ফলে দলের মধ্যে ভালো আর মন্দের দ্বন্ধ চলমান থাকবেএবং ভালোর জয় হবে।

দারিদ্র ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছোট্ট দেশ সিঙ্গাপুরকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গুলোর সারিতে পৌঁছেছেন আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক লি কুয়ান। ৩১ বছর দেশ শাসন করেছেন তিনি, অথচ জনপ্রিয়তা কমেনি তার। এমন নেতৃত্বের অপেক্ষায় থাকতে চাই আমরা।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test