E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত-মুক্তিযোদ্ধা কমরেড প্রসাদ রায় বাংলাদেশের শত্রু !

২০১৬ নভেম্বর ১৩ ১৩:১৭:১৯
শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত-মুক্তিযোদ্ধা কমরেড প্রসাদ রায় বাংলাদেশের শত্রু !

সমরেশ বৈদ্য


যে দ্বিজাতি তত্ব বা ধর্মের ভিত্তিতে  ভারত-পাকিস্তান ভেঙে দু’টি আলাদা রাষ্ট্র হয়েছিল  তা কতবছর টিকেছিলো ? ১৯৪৭ এর দেশভাগ। ভারত আর পাকিস্তান। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি  ধর্মের  ভিত্তিতে এক হাজার মাইল দুরের বর্তমান বাংলাদেশটিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পেলো। কিন্তু তা কি রক্ষা হলো ? হয়নি, কারন শুধু ধর্মের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র চলতে পারেনা কখনো তা প্রমানিত হয়েছে।

সর্বশেষ ফয়সালা হলো ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। জন্ম নিলো স্বাধীন-স্বার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের। যে মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান জাতিগত-পাহাড়ি অধিবাসীদেরও রক্ত-আত্মত্যাগ রয়েছে। তাই সবারইতো সমান অধিকার এদেশের মাটিতে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে। সংবিধানও তাই বলে। কিন্তু তা হলো কই? ১৯৭১ থেকে ২০১৬ । মাঝখানে দীর্ঘ ৪৫ টি বছর । কিন্তু সেই ধর্মনিরপেক্ষতার বর্মটি টিকছেনা কেন জানি কোনভাবেই। প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে এদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ভিটেমাটি ছাড়া হচ্ছে। প্রানভয়ে , মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষায়, সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে অনেকেই নানাভাবে দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। আসলে তারা বাধ্য হচ্ছেন না বাধ্য করা হচ্ছে সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেক। এ প্রশ্ন প্রশ্নই থেকে যায়। উত্তর আর সমাধান পাওয়া যায়না। ফলে বাড়ছে শংকা। অবিশ্বাস।

এই যে শংকা -অবিশ্বাসের কথাটি বলছি- তা কেন হচ্ছে? এর উত্তর খুঁজতে যাইনি আমরা কখনো কেউ।এর সমাধানে আন্তরিক নই কেউ। এ কথাটি কেউ কি অস্বীকার করতে পারবেন ? তা নাহলে ’ ৪৭ গেলো, ’৭১ গেলো। তারপরও কেন এই স্বাধীন বাংলাদেশে আবার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে তাদেরকে সংখ্যানুপাতে জাতীয় সংসদ সহ সমাজ-রাষ্ট্রসহ সর্বক্ষেত্রে আসন, চাকুরী দেয়ার দাবি করতে হচ্ছে ? এ দাবিটি কিন্তু হঠাৎ করে ওঠেনি। যারা এ দাবিটি তুলেছেন তাদের যুক্তি হলো- বাধ্য হয়েই এ ধরনের দাবি তুলতে হচ্ছে। রাষ্ট্র-প্রশাসনÑআইন-রাজনৈতিক-সামাজিক জায়গাগুলো থেকে যখন নানা ধরনের নীপিড়ন-অত্যাচার নেমে আসে তখন বাধ্য হয়েই এ ধরনের দাবিগুলো করতে বাধ্য হচ্ছে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৬৫ সালে। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর 'ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলস, ১৯৬৫' জারি করা হয। এই বিধিমালা অনুসারে ওই ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ পর্যন্ত যেসব নাগরিক পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়, তাদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি 'শত্রু সম্পত্তি' হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৭১-এ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর, ১৯৭৪ খ্রীস্টাব্দে 'শত্রু সম্পত্তির' নাম পরিবর্তন করে 'অর্পিত সম্পত্তি' রাখা হয়। এই সব আর্পিত সম্পত্তি মূল মালিক বা তাদের বৈধ উত্তরাধিকারীর কাছে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০০১ খ্রিস্টাব্দে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১' প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু আজ অব্দি সেই শত্রু সম্পতি’র পরিবর্তিত রূপে অর্পিত সম্পত্তি ফিরে পেয়েছেন সে সব সম্পত্তির বৈধ মালিক বা তাদের উত্তরসুরীরা?

এই শত্রু সম্পত্তির দুর্ভোগের শিকার দেশের লাখ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কথা না হয় বাদই দিলাম অবিভক্ত পাকিস্তান গনপরিষদে যেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেছিলেন সর্বপ্রথম সেই ধেিরন্দ্রনাথ দত্তের কুমিল্লার বাড়ি এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো শত্রুসম্পত্তি হিসেবেই আছে। ১৯৭১ সালেও যিনি এই দেশমাতৃকাকে ছেড়ে যাননি কোথাও , অকুতোভয়ে থাকতে চেয়েছিলেন নিজ মাতৃভ’মি কুমিল্লাতে সেখানেই তাকে প্রান দিতে হলো। আর এই শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো শত্রু ! তাহলে তার স্বজনদের ক্ষোভ বাড়বেনা কেন ? তার সেই বাড়িটি এখনও শত্রু সম্পত্তি মানে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার স্বজন ও আইনজীবীরা।

অতি সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক আলোচনা সভায় মানবাধিকার সংগঠক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, পাকিস্তানের গণপরিষদে ১৯৪৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম দাবি উত্থাপনকারী সেসময়ের কংগ্রেস নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ তাকে কুমিল্লার বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ধরে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে রাষ্ট্রভাষার প্রস্তাবক এই মহান নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। অথচ আজও আমরা তার বাড়ি উদ্ধার করতে পারিনি।

এই অনুষ্ঠানে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি অ্যারমা দত্ত ক্ষোভের সাথে বললেন, ‘আমার দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জমি অর্পিত সম্পত্তি করা হয়েছে। তিনি এদেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন। তার রক্ত এদেশের মাটিতে মিশে আছে। এ নিয়ে দুঃখ আছে। অ্যারমা দত্ত বলেন, দাদুর (ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত) গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদর থেকে দুই মাইল দূরে রামরাই গ্রামে।পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর সেই বাড়ি অর্পিত সম্পত্তি করা হয়। তা আজও ফিরে পাইনি। বাড়িতে তালা লাগিয়ে রাখা হয়েছে। নামফলক থেকে ‘শহীদ’ শব্দটিও মুছে ফেলা হয়েছে। কুমিল্লা সদরের ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আরেকটি বাড়ি আছে। সেটিও দখলের চেষ্টা হয়েছিল জানিয়ে অ্যারমা দত্ত বলেন, “আমাদের প্রতিরোধের কারণে সেটি দখল করতে পারেনি।’

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক , সাংবাদিক ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, ১৯৬৫ সালে যে আইন হয়েছে, ২০১৬ সালেও আমরা তা নিয়ে কথা বলছি। সেই সম্পত্তি ফেরত পেতে লড়াই করছি। একমাত্র দুঃখ- মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার যখন ক্ষমতায় তখন এ লড়াই করছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তঅর্পিত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হবে জানিয়ে জয়বাংলা পত্রিকায় নিজ হাতে লিখেছি। তাহলে কি করলাম আমরা ? ’

শুধু কি এই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ? এ অঞ্চলে প্রগতিশীল আন্দোলন, সাধারণ মানুষের মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম সংগ্রামী রাজনৈতিক নেতা, মুক্তিযোদ্ধা কমরেড প্রসাদ রায়ের পাবনা শহরের পৈত্রিক বাড়িটিও শত্রু সম্পত্তি হয়ে আছে এই স্বাধীন বাংলাদেশে। অথচ এই কমরেড প্রসাদ রায়ের বড় ভাই জয়ন্ত রায় সম্পর্কে পাবনা পৌরসভার মৃত্যু নিবন্ধন বইতে উল্লেখ রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করার অপরাধে ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল আবদুল হামিদ সড়কের নিজ বাড়ি থেকে শিক্ষক জয়ন্ত রায়কে ধরে নিয়ে খুন করেছিল পাক সেনারা। কমরেড প্রসাদ রায়ও তখন মুক্তিযুদ্ধে।

কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পুরো পরিবারকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে। তারপর জয়ন্ত রায়ের পরিবার দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে নানা চেষ্টা-তদবির করেও আজ অবধি ফিরে পায়নি তাদের পূর্বপুরুষের সম্পত্তি। বিগত ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন নেতৃত্বাধীন তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সারা দেশে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চরঅকালে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছিলেন শহীদ জয়ন্ত রায়ের ভাই প্রয়াত কমরেড প্রসাদ রায়ের ছেলে স্বনামখ্যাত মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব অঞ্জন রায়। সে সময় (১২.০৫.০৭) ২০৮৭নং ডায়েরিতে অঞ্জন রায়ের লেখা একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে পাবনা জেলা প্রশাসন তৎকালনি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জানিয়েছিল, শহীদ জয়ন্ত কুমার রায়ের সম্পত্তি অর্পিত নয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে যে শহীদ হন, তার জমি কোনোভাবেই শত্র (অর্পিত) সম্পত্তি হতে পারে না।

প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পাবনা জেলা প্রশাসকের পাঠানো প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে। জেলা প্রশাসকের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যেহেতু জয়ন্ত কুমার রায় বাংলাদেশে অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক ছিলেন এবং তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাদের হাতে নিহত হন সেহেতু তার সম্পত্তি নীতিমালা অনুযায়ী অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্তির বিষয়টি আইনসিদ্ধ প্রতীয়মান হয় না। তবে এত কিছুর পরও বৈধ উত্তরাধিকারের হাতে সম্পত্তি হস্তান্তর করেননি পাবনা জেলা প্রশাসক। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহল এখনো দখল করে আছে সে সম্পত্তি। আর তাই হয়তো সাংবাদিক অঞ্জন রায়কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইস বুকে লিখতে হয়, 'আপনারা অনেক যুদ্ধ করেছেন- সফল হয়েছেন। এবারে ন্যয্যতার দাবিতে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সম্পত্তি কিভাবে শত্রু সম্পত্তির তালিকায থাকে? কেন আমাদের পরিবার ন্যায় বিচার পাবে না ? আপনাদের মিলিত কন্ঠই এনে দিতে পারে সমাধান।

যখন দেখি বাংলাদেশের জন্য প্রান উৎসর্গকারি দু’টি শহীদ ও খ্যাতনামা পরিবারের সম্পত্তি নাকি শত্রু সম্পত্তি বা ভিন্ন নামে অর্পিত সম্পত্তি তখন আর বুঝতে নিশ্চয় কারো অসুবিধে হওয়ার কথা নয় যে, এই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি ‘আইন দিয়ে এখনো শত্রু’ ভাবছে। খ্যাতনামাদের অবস্থা যদি এমন হয় তাহলে সারা বাংলাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অবস্থাটি কি তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন আছে ?

প্রসঙ্গটি যখন উঠলোই তখন আরো দু একটি কথার অবতারনা করতেই হয়। তাহলো ফরিদপুর শহরে এক হিন্দু পরিবারের বিশাল সম্পত্তি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ জোর-জবরদস্তি করে অত্যন্ত নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়েছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছুদিন আগে। এ নিয়ে ফরিদপুরের একজন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার যিনি একটি শহীদ পরিবারের সন্তান তিনি সোচ্চার ছিলেন। তিনি তার অনলাইন পোর্টালে নিউজ করলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলেন তা। জামায়াত-বিএনপি জোট সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রাণ হারাতে হারাতে বেঁচে যাওয়া এই অকুতোভয় সাংবাদিক প্রবীর শিকদার পা হারিয়ে এখন পঙ্গু অবস্থায়ও নির্ভিকতার সাথে সাংবাদিকতা করছেন, তবে ফরিদপুরে নয়, ঢাকায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি সংবাদ পরিবেশনের পর তার বিরুদ্ধে মাননীয় মন্ত্রীর পক্ষ থেকে মামলার পর গ্রেপ্তার, পুলিশী নির্যাতন নেমে এলো। হাতে পায়ে ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে রাখা হলো দুর্ধর্ষ খুনের আসামীর মত। তার প্রতিবাদে যখন সোচ্চার হলো সারা দেশ তখন তার জামিন দিতে বাধ্য হলো । কিন্তু মামলা তার পিছু ছাড়েনি।

সাংবাদিক প্রবীর সিকদার যখন মন্ত্রীর এসব কীর্তি নিয়ে নিউজ প্রকাশ করে নির্যাতনের শিকার হন তখন প্রতিবাদ করেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ -খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতারা ওই জমি-জমা দখল করে নেয়ার প্রতিবাদে। সংবাদ সম্মেলন করে সেসাথে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন-নিপীড়ন চলছিল এবং এসব অপকর্মের সঙ্গে যে বর্তমান সরকার দলীয় সাংসদ-নেতাকর্মী জড়িত সে বিষয়গুলোও তুলে ধরেন ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। আর এতেই ক্ষেপে ওঠেন মন্ত্রী মহোদয়। তিনি ফরিদপুরে এক প্রকাশ্য সভায় দাম্ভিকভাবে মানবাধিকার সংগঠক ও যেুদ্ধাপরাধ বিষয়ক অঅন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের অন্যতম প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্তকে ফরিদপুরের দিকে চোখ না দেয়ার হুমকি দিয়ে তার চোখ তুলে ফেলার কথাও উচ্চারন করেন। তবে এখনো এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের চোখ তুলে ফেলার ঘটনা ঘটেনি। তবে এতে স্বস্তি পাওয়ার কোন কারন নেই। কারন মাননীয় মন্ত্রী’র বিরুদ্ধে এমসতরো অভিযোগ তোলার দু:সাহস দেখিয়েছেন তিনি।

আবার এরই মধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলো যে, এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত নাকি পিটিআই (প্রেস ট্রাষ্ট অব ইন্ডিয়া) এর এক সংবাদকর্মীর প্রশ্নের জবাবে নাকি বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য ভারতের প্রথধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলীয়তো বটেই সরকার দলীয় সাংসদও খোদ সংসদে এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে উষ্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন রানা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে। কোন কোন সংগঠনতো রানা দাশগুপ্তকে গ্রেপ্তার করারও দাবি জানিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত পিটিআই এর কাছে এমন কোন বক্তব্য দেননি বলেই জানিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে পিটিআই এর কাছে লিখিত প্রতিবাদও পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তার এ বক্তব্যও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। ফলে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই। তাছাড়া তিনিতো একাত্তরের মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের একজন নিষ্ঠাবান প্রসিকিউটর। সরকারইতো উনাকে নিয়োগ করেছেন যোগ্য মনে করে।

যদি তাই হতো তাহলে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোসহ অন্যান্য তদন্তকারি সংস্থা এ ব্যাপারে তদন্ত করে দেখতে পারতো। কিন্তু দু:খজনক হলেও আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম জনকন্ঠ পত্রিকায় একজন সাংবাদিক ও একজন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক তাদের কয়েকটি লেখায় এমন অশোভনভাবে এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তকে আক্রমন করলেন যা দেখে সত্যিই হতাশ হতে হয়। কারন এ দু’জন সম্মানিত ব্যাক্তিই কিন্তু রানা দাশগুপ্তকে বেশ ভালোভাবে জানেন, চেনেন। শুধু তাই নয়, অধ্যাপক সাহেব বিভিণœ সময়েই এ্যডভোকেট রানা দাশগুপ্তের সঙ্গে নানা ধরনের সামাজিক, মানবাধিকার আন্দোলনে ছিলেন। একটু কষ্ট করে তার সাথে কথা বললেই হয়তো ব্যাপারটি সঠিকভাবে জানতে পারতেন। তবে তাদের লেখাগুলো পড়ে যেটা মনে হলো লেখাগুলো কারো দ্বারা আদিষ্ট হয়ে লেখা। কারন এ ধরনের লেখার মাধ্যমে রানা দাশগুপ্তকে একধরনের ইচ্ছেকৃত হেয় করার অপচেষ্টাই করা হয়েছে। কারণ মানবাধিকার সংগঠক ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত যাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের ব্যাপারে আর বেশি সোচ্চার না হন। কারন তিনিসহ ঐক্য পরিষদের নেতারা বিভিন্ন সময়েই দাবি তুলেছেন, ধমৃয়ি সংখ্যালঘুদেরকে জনসংখ্যার সংখ্যানুপাতে জাতীয় সংসদে আসন প্রদান, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ, সংবিধান অনুযায়ী সব ধরনের বৈষম্য বাতিল ইত্যাদি। একান্ত বাধ্য হয়েই তো এসব দাবি তারা তুলছেন। সময় থাকতে এগুলো গভীর বিবেচনায় নেয়া উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর।

ওই যে প্রথমে বলেছিলাম “ ধর্মনিরপেক্ষতার বর্ম” টি টিকছেনা মনে হচ্ছে । এ আশংকা অমুলক প্রমানিত হলে এদেশের অধিকাংশ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকরা স্বস্তি বোধ করবেন। কিন্তু তা করতে হলে সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত তাদেরকেই উদ্যোগী ও কার্যকর ভ’মিকা রাখতে হবে। লেখাটির শুরু করেছিলাম শত্রু সম্পত্তি বা অর্পিত সম্পত্তির বিষয় দিয়ে। কারন এদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে এখনো যদি সেই পাকিস্তান আমলের কালো আইন দিয়ে “শত্রু ” বা পরবর্তীতে রিফাইনড “ অর্পিত” বলে চিহ্নিত করা হয় তাহলে আর যাই হোক গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা। কারণ গণতন্ত্র শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর নয় , জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমানাধিকার নিশ্চিত করা। কাউকেই সম্ভবত ছোট করে দেখা বা অবমূল্যায়ন করা ঠিক হবেনা। তাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাহলে গণতন্ত্র মরুভূমির মরিচীকাই থেকে যাবে।

লেখক : সাংবাদিক

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test