E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফিদেল কি আমাদের কেউ?

২০১৬ নভেম্বর ২৮ ১৫:৪২:৫৬
ফিদেল কি আমাদের কেউ?

শেখর রায়


ফিদেল কাস্ত্রো বিদায়। সাথে চলে গেল এক ইতিহাস। কেউ দুঃখিত, কেউ মহাখুশী যেমন আমেরিকার নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ডোনালড ট্রাম্প। সে বলেছে এবার কিউবায় সত্যিকারের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে। এতকাল ছিল নাকি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা। মহানন্দে বাদ্য সহকারে নৃত্য করেছে আমেরিকায় মায়ামির কিউবান-আমেরিকান নাগরিকগন। কারণ এই সব বিক্ষুব্ধ মানুষেরা কিউবান বিপ্লবী আন্দোলনের সময় নিজ দেশ ও গণ সংগ্রাম ত্যাগ করে আমেরিকায় নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছিল, যারা ছিল এমন সুবিধাবাদি। যারা সর্বদা কাস্ত্রো সরকারের তীব্র সমালোচক ছিল ও আছে।

কম্যুনিস্ট বিপ্লবোত্তর ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শিবিরের প্রখ্যাত কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক যারা চে গুয়েভারা ও কিউবান বিপ্লবের সমর্থক ও সংগ্রামী মানুষ যেমন হেবারতো পাদিল্লা, নিকলাস গিয়েন, হোশে লেজামা, রেইনাবদো আরেনাসের, ভারজিনিও পিনেরো, সেভেরো সারদুর মত এমন মানুষদেরও কাস্ত্রো জামানায় হয় জেল খাটতে হয়েছে, না হয় কিউবা থেকে বিতাড়ন করা হয়েছিল, অথবা কেউ প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে বেঁচে গিয়েছে। তাদের লেখা পত্র, শিল্প কর্ম বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ করেছিল ফিদেল। কারণ তাদের লেখাপত্র কাস্ত্রো ও তার দলীয় লোকেদের বিচারে দেশ ও জন বিরোধী কাজ হয়েছিল। সে দেশে সচেতন ও প্রগতিশীল লেখক শিল্পীদেরও ছিল না কোন স্বাধীনতা। যারাই রাষ্ট্র ব্যবস্থার সমালোচক, তাদের আর সহ্য করা হয়নি। আজো সে দেশে এক বিশাল সংখ্যায় জনগণ চে'র মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। অনেকে মনে করে যে চে'কে দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত হয়েছিল হাভানায় বোসে, যা নিয়ে আজো কোন বিশ্বাস যোগ্য তদন্ত করা হল না।

রাজনীতিগতভাবে ফিদেল ছিলেন জোসেফ স্তালিনের বিরুদ্ধপন্থীদের কাছের লোক। খ্রূচভ, কসিগিন, বুল্গানিন, ব্রেজনেভ ও সর্বশেষ গ্রাসনস্তপন্থী গরবাচভের অনুসারী। এক কথায় সবিয়েত সংশোধবাদের ও রাশিয়ান হেজিমনির চরম ও অন্ধ অনুসারী ব্যক্তি যদিও অন্ধ আমেরিকা বিরোধী। ফিদেলের কাছে যারাই আমেরিকা সরকারের বিরোধী তারাই তার বন্ধু। যে কারনে মাও সে তুং ও কম্যুনিস্ট চীনের সাথে তার ও তার সরকারের কোন ভাল সম্পর্ক ছিল না। যখন ২য় বিশ্ব যুদ্ধোত্তর শীতল লড়াই আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ ও সবিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে চলেছিল, ফিদেল প্রত্যাশিত ভাবেই ছিল সবিয়েতের পক্ষে। কিউবার মানুষের প্রিয় নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা চে গুয়েভারা পররাজ্য গ্রাসের সাম্রাজ্যবাদী নীতির তীব্র সমালোচক ছিলেন। যার পূর্ণ আস্থা ছিল একটি দেশের মানুষের জনযুদ্ধে বা গণমুক্তি সংগ্রামে। যখন লাউস, কাম্বডিয়া, আফঘানিস্তানে, পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যখন সবিয়েত রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন অব্যাহত, ফিদেল তখন স্বাভাবিক কারনেই নিশ্চূপ ছিলেন।৭০ দশকে চীনা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতি কোন সমর্থন জানাননি।

আজ ফিদেল যখন কবরে শায়িত, কিউবায় কম্যুনিস্ট শাসন ৫৭ বছরে পা দিল। তথাপি সেই দেশ একটি তৃতীয় বিশ্বের পিছিয়ে পরা ভূখণ্ড। সাধারণ জনগণের আর্থিক অবস্থা চূড়ান্ত খারাপ। বেকারি, দারিদ্র, নিরাপত্তাহিনতায় ভুগছে ফিদেলের কিউবা। শিল্পের (manufacturing industry) অবস্থা করুন যেন আধুনিক পৃথিবী এখনো কিউবাতে প্রবেশ করেনি। অস্বীকার করার উপায় নেই যে জন স্বাস্থ্য, শিক্ষায় বিশেষ অগ্রগতি লাভ করেছে এই দেশ। আজো সে দেশে বাস করে সরকারের সমালোচনা করা সহজ নয়। করলেই বলা হয় আমেরিকার দালাল। ভারতে যখন তেলেঙ্গানা ও নকশালবাড়ি কৃষক আন্দোলন চরমে চলছে ও ইন্দিরা- নেহেরু পরিচালিত রাষ্ট্রশক্তি সেই আন্দলনেকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে, ফিদেল তাদের নৈতিক সমর্থন দেয়া দূরের কথা, ইন্দিরা গান্ধীর করকমল চুম্বন করে বসলেন, জ্যোতি বসুকে পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন সাবাস ভায়া।

কিন্তু প্রিয় ফিদেল, আমরা কি এমন পৃথিবী সত্যি চেয়েছিলাম?

লেখক : পশ্চিম বাংলার গণমাধ্যম কর্মী ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test