E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অপরিকল্পিত নগরায়ন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি

২০১৭ জানুয়ারি ৩০ ০৮:৫৯:৩০
অপরিকল্পিত নগরায়ন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি

অমিত বণিক : সম্প্রতি বাংলাদেশের নগরায়নের ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জেনেছি জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। ‘আরবানাইজেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এক অভূতপূর্ব সংখ্যক মানুষ রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে। সে তুলনায় পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলোতে মানুষ আসছে না বললেই চলে।

এমনকি কোনো কোনো শহরে মানুষের সংখ্যা কমছে। একদিকে যখন শহরাঞ্চলে মানুষের অভিবাসনের এ স্রোত, তখন দেখা যাচ্ছে আরো একটি অভ‚তপূর্ব ঘটনা। শহরমুখী মানুষের এ স্রোতে আবার পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক বেশি সংখ্যায় শামিল হচ্ছেন। হিসাবে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর কমপক্ষে চার-পাঁচ লাখ লোক গ্রাম থেকে শুধু রাজধানী শহর ঢাকায় পাড়ি জমাচ্ছেন স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। আর শহরমুখী মানুষের মধ্যে ঢাকায় আসছেন প্রতি ১০০ জন পুরুষের বিপরীতে ১৬৭ জন নারী এবং চট্টগ্রামে এ সংখ্যা প্রতি ১০০ জন পুরুষের বিপরীতে ১৬৬ জন নারী।

নগরায়ণের এ অসঙ্গতির কারণ হিসেবে ইউএনএফপিএ দায়ী করেছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল বণ্টনের বৈষম্যকে। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির ৪০ শতাংশ আসে ঢাকা থেকে। সে হিসাবে ঢাকার মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। সে তুলনায় জিডিপির জাতীয় গড় হচ্ছে মাথাপিছু ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার। ফলে সবাই চায় এ মিষ্টির থালায় ভাগ বসাতে। তবে এটাও সত্যি যে, এতে করে সবচেয়ে বড় আঘাতটি পড়ছে ঢাকার ওপর। এই অপরিকল্পিত ও অব্যাহত নগরায়ণের ফলে ঢাকা ইতোমধ্যেই দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বাসস্থান। অথচ দেশের মোট আয়তনের মাত্র ১ শতাংশেরও কম এলাকা নিয়ে ঢাকা শহর। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামমুখী এ জনস্রোতের কারণ যেমন আয়ে ভাগ বসানোর আকাক্ষা, তেমনি পরিকল্পনাহীনতাও। আমাদের নীতিনির্ধারকরা দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আধুনিক সুযোগসংবলিত শহর গড়তে ব্যর্থ বলেই নগরায়ণের এ ভারসাম্যহীনতা। একইভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামভিত্তিক তৈরি পোশাক খাত পুরুষের চেয়ে নারীদের এ দুটি শহরে বেশি হারে আসার কারণ। তবে এতে সামাজিকভাবে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের অবকাশও সৃষ্টি হয়েছে বলে ধরা যায়। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে পুরুষাধিপত্যের যে সামাজিক আবহ বিরাজিত ছিল তা যে ভেঙে পড়ছে, তা বলা যায়। আর এ পরিবর্তনটি যে একটি ‘উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন’ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এটাও সত্যি যে, এ পরিবর্তন দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটেই ঘটত যদি পোশাকশিল্পকে পরিকল্পিত উপায়ে বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে করা যেত।ঢাকার এ বিস্তৃতি ঘটছে এবং বিস্তৃতি বৃদ্ধির হারও ক্রমাগত বাড়ছে। কিন্তু এই বৃদ্ধির সুযোগের দাম অত্যন্ত চড়া।

গত কয়েক বছরে অপরিকল্পিতভাবে ঢাকার জনসংখ্যা ও পরিসর বিস্তৃতির ফলে জীবনযাপনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান- যেমন জমি, পানি ও বাতাস সবই মাত্রাতিরিক্ত দূষিত হয়ে পড়েছে। একইভাবে এর শিকার হচ্ছেন পোশাকশিল্পে কাজের জন্য আসা নারীরাও। ঢাকা কি তার প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের ভার সইতে পারে তার অবকাঠামো নিয়ে? নগরায়ণ অবশ্যসম্ভাবী। মানুষও নগরের দিকে ধারিত হবে। কিন্তু তাদের এ পরিবর্তিত জীবনাচরণে খাপখাইয়ে নিতে হবে। এই খাপ খাওয়ানোর বিষয়টিই অনুপস্থিত। তবে আমাদের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই ভাবার সময় এসেছে যে দ্রুত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া ভবিষ্যতের সামাজিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা অসম্ভব বলে মনে করি।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test