E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

প্রতিরক্ষা চুক্তি ও চমক

২০১৭ এপ্রিল ০৭ ২২:৩৭:৩৪
প্রতিরক্ষা চুক্তি ও চমক

মাহবুব আরিফ


চমক শব্দটি বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ, তাই সমগ্র বাংলাদেশ এখন ভারত বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তিতে একটি চমক দেখার অপেক্ষায় দিন গুনছে, অন্তত সরকার পক্ষের লোকেরা তো তাই বলছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে, যে কোন সরকারই আসুক না কেন কিঞ্চিত ভারত প্রীতির আশায় তাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। এটাই স্বাভাবিক, কারণ এতো বড় একটি বৃহৎ শক্তির পাশে ক্ষুদ্র দেশ হিসাবে বসবাস করতে গেলে বড় ভাই হিসাবে ভারতকে একটু আধটু ট্যাক্স দিয়েই চলতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জঙ্গি হামলা মোকাবেলায় এই উপমহাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিরক্ষা চুক্তি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং বাংলাদেশের স্বার্থেই এই চুক্তি করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, সেই সুযোগে ভারত নিশ্চয়ই বিনা স্বার্থে চুক্তি করতে এগিয়ে আসবে না সেটাও আমাদের অনুধাবন করার প্রয়োজন আছে বৈকি। দিল্লিতে এখন নতুন হওয়া, কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের জন্যে যতটুকু সুবিধা হতো এখন হয়তো ততটা সুবিধা নাও হতে পারে তবে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক দিল্লির সাথে খুব যে একটা খারাপ তা বলা যাবে না, বিগত দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় একটা সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক উপলব্ধি করা গেছে। যদিও তিস্তা নিয়ে ভারতের সাথে আমাদের কোনই দফা রফা হয়নি তবে বাংলার মানুষ আজো একটি চমকের অপেক্ষায় দিন গুনছে, ইতিমধ্যে শ্রী মমতা দেবী তিস্তার পানি নিয়ে খুব একটা আশার বাণী শোনাতে পারেননি বরং পানি নাকি শুকিয়ে গেছে বলেই অভিমত দিয়েছেন, ধরে নেয়া যায় তিস্তা নিয়ে কোনই চুক্তি হচ্ছে না।

আমাদের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে খুবই সুকৌশলে ভারতকে ডিঙিয়ে চীন সহ বিভিন্ন দেশের সাথে প্রতিরক্ষা ও সামরিক যন্ত্রপাতি ক্রয় বিষয়ে বিষয়ে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বটে তবে ভারতের যে এ বিষয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট তা হলপ করে বলা যাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে তিস্তার পানি চুক্তিতে ভারতের কতটুকু ইচ্ছা আছে যা পুরোটাই নির্ভর করছে অঙ্গরাজ্যের প্রধান মমতার মন মেজাজের উপর। দিল্লি চাইলেই যে তিস্তার পানি নিয়ে একটি সমঝোতার চুক্তি হবে এমন কোন নিশ্চয়তা আমরা এখনও পাইনি, আমার এখন শুধু মাত্র দিল্লির সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তির দুটা বড় খসড়া নিয়ে হাজির হবো, প্রথমটি সমঝোতা-স্মারক যার মেয়াদ ৫ বছর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ভারতের বহুল আকাঙ্ক্ষিত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটা, তিস্তা পানি চুক্তিটা হয়তো ঝুলেই থাকবে । যে কোন চুক্তি হবার প্রাক্কালে রাজনৈতিক অঙ্গনে পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত থাকবেই, তবে জনগণ যদি এইসব চুক্তির একটা আগাম চিত্র দাবি করে সেটা নিশ্চয়ই খুব অগণতান্ত্রিক দাবি নয়। তিস্তা নিয়ে মমতা ব্যানার্জি ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন যে ভরা মৌসুমে তিস্তাতে পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি থাকে না, পশ্চিমবঙ্গ শুষ্ক মৌসুমে ব্যারেজে সেই আপনি আটকে রেখে তাদের নিজেদের কাজে লাগায়, তিস্তার পানি প্রবাহ আর গঙ্গার পানি প্রবাহের মাঝে বিস্তর ফারাক, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তাতে পানি প্রবাহ কম, শুষ্ক মৌসুমে সেই পানির অধিকার বাংলাদেশেরও আছে, অন্তত এই নৈতিক দাবি নিয়ে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ দলের দিল্লিতে বসা উচিত। পানির চাহিদা বাংলাদেশেরও আছে আর এটাই আন্তর্জাতিক পানি বণ্টনের নিয়মে বাংলাদেশকেও তা দেবার যুক্তি নিয়ে প্রয়োজনে আদালত পর্যন্ত যাবার প্রস্তুতি থাকতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরটা ঠিক একটু অন্যরকম সেটি তিনি সেখানে রাষ্ট্রপতির অতিথি হয়েই অবস্থান করবেন আর এটা বাংলাদেশের জন্যে একটা বিশাল পাওয়া, ভারত যেটা চাইছিলও বটে সেটা তাদের পেয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রায় একশত ভাগ সেটা হল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটা।

তাই বলে আমাদের ন্যায্য অধিকারের কথা ভুলে গেলে চলবে না। জয় বাংলা, জয় হোক আমাদের উপমহাদেশের নিপীড়িত মানুষের।

লেখক : সুইডেন প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test