E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমি ফাঁসি চাই আমারই

২০১৭ এপ্রিল ১২ ১৯:১৫:০৪
আমি ফাঁসি চাই আমারই

মোনাজ হক


আমি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে কি রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজ করেছি? যদি তাই হয় তাহলে আমি আমার ফাঁসি চাই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধু। আমাদেরকে দিয়েছিলেন তার স্বাধীনতা আন্দোলনের মহাকাব্যে- বঙ্গবন্ধুর তেজোদ্দীপ্ত ভাষণ বাঙালির চেতনায় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করেছিল। জাতি, ধর্ম, দলমত নির্বিশেষে ঐক্যের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। আমরা যুদ্ধ করে দেশ শত্রুমুক্ত করেছি, আজ তা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে, তাই আমি আমার ফাঁসি চাই।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সামনে যে জুসটিসিয়া সিম্বলটি দু’বছর আগে বিচারবিভাগ স্থাপনা করেছে তা বিচারিক মানবতার সিম্বল বলেই সারাবিশ্বে পরিচিত, সিম্বলটির চোখ বাঁধা অর্থাৎ বিচার মানুষ চিনে নয় সকলের জন্যে সমান, এক হাতে নিক্তি অর্থাৎ ন্যায়বিচার, অন্যহাতে খড়গ অর্থাৎ বিচারের দণ্ডাদেশও বিচারকরাই ঠিক করে দেবেন । এই সিম্বলকে বিকৃতভাবে হেফাজত-ই-ইসলাম, মূর্তিপূজার সাথে সম্পর্ক খুঁজে আন্দোলন শুরু করেছে, প্রগতিশীল মানুষ এই বিকৃত তথ্যের বিরোধিতা করেছেন। তবে গতকাল দেশের প্রধানমন্ত্রী বিচারবিভাগের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে হেফাজতিদেরকে আশ্বস্ত করেছেন "এই মূর্তি সরিয়ে ফেলা হবে" দেশের প্রধানমন্ত্রী কি হেফাজতিদের জন্যে? অর্থাৎ জুসটিসিয়ার চোখ কি আর বাঁধা থাকলোনা? প্রধানমন্ত্রী কি বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছেন না?

কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট কি পারেন বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করতে? হেফাজতিরা না হয় গোঁড়া শরিয়ারাষ্ট্রের সমর্থক, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জনগণের নেতা, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট তিনি কি এই বিচারিক মানবতার সিম্বল জুসটিসিয়া কে মূর্তিপূজার সাথে এক করে দেখছেন? দেশের তিনটি সাংবিধানিক ইনস্টিটিউশন পার্লামেন্ট, জুরিসপ্রুডেন্স ও এক্সেকিউটিভ এখন সবই প্রধানমন্ত্রীর হাতে? হেফাজতিদের পরামর্শে তিনি দেশ শাসন করছেন এটি একটি ভয়াবহ ইঙ্গিত বহন করে, হেফাজতিদের পরামর্শে প্রাইমারি ও মাধ্যমিক শিক্ষার বাংলা বই থেকে বাংলা প্রবন্ধ সরিয়ে নিয়ে মৌলবাদী ইসলামি প্রবন্ধ সংযোজন, ২০১৩ সনের শাহবাগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত ব্লগারদেরকে একের পর এক হত্যা করা হয়েছে হেফাজতিদের নীল নকশায়, এবার এই বিচারিক মানবতার সিম্বল জুসটিসিয়াকে সরানো হচ্ছে, পরিবর্তে শরিয়া আইনের সিম্বল লাগানো হবে, এর পরে দাবি আসবে জাতীয় পতাকায় লাল সূর্য ইসলামিক নয়, এখানে চাঁদ-তারা লাগাতে হবে, তারপরের দাবি জাতীয় সংগীত হিন্দু কবির লেখা এটা বাদ দিতে হবে, দেখবেন প্রধানমন্ত্রী সবগুলোই মেনে নেবেন। প্রধানমন্ত্রী কি দেশের সংবিধানে দেশ শাসন করছেন নাকি মদিনা সনদে দেশ পরিচালনা করছেন?

এখন তাহলে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর পদত্যাগ করার কথা, কারণ তারা তিনজনই হেফাজতিদের দাবির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এতদিন। এটাও এখন পরিষ্কার হলো যে আজকে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, অপরাজেয় বাংলাসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সকল ভাস্কর্য সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাহলে কেউ বাধা দিতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীও ধর্মের দোহাই দিয়ে এগুলো সরিয়ে ফেলবেন।

হায়রে স্বাধীনতাযুদ্ধ, হায়রে ৩০ লক্ষ্য শহীদের আত্মা! এখন সবই প্রধানমন্ত্রীর হাতের মুঠোয়। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি আমার ফাঁসি চাই, কারণ আমি বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম, শত্রু মুক্ত করতে দেশবিরোধী যে মানুষ গুলোকে হত্যা করতে আমি সেদিন কুন্ঠা বোধ করিনি, তারাই এখন প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়পাত্র, এখন আমাদেরকে শুনতে হচ্ছে ওলামা লীগের সভাপতি মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী নাকি বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিল, তেঁতুল হুজুর ও নাকি মুক্তিযোদ্ধা ছিল। জামায়াত ইসলাম ও হেফাজতি ইসলাম নাকি মুক্তিযুদ্ধের দল ছিল, তাহলে আমরা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি? তাই আমি মনে করি একাত্তরে ভুল করেছি, আমি আমার ফাঁসি চাই।

লেখক : জার্মান প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test