E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধের দরকার কি?

২০১৪ জুন ২২ ১৫:৪৭:১৪
প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধের দরকার কি?

চৌধুরী আ. হান্নান : যে স্রোত বাঁধ মানেবে না, সেখানে কষ্ট করে বালির বাঁধ তৈরি করে লাভ কি? তা এক সময় বিলীন হয়ে যাবে।

বেচারা জাফর ইকবাল! বড় মায়া হয় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের জন্য। দেশের এতা বড় বড় ঘটনা-দুর্ঘটনা থাকতে তিনি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকে কেন এতো বড় করে দেখলেন? চোখ বন্ধ করে চুপ করে থাকলেই পারতেন। যেমন থাকেন এ বিষয়ে যাদের দায়িত্ব পালন করার কথা তারা। মানুষকে তো জীবন বাঁচাতে হবে আগে। তারপর তো লেখাপড়া, পরীক্ষা।
জাফর ইকবাল যখন কোনো জাতীয় সঙ্কটের কথা বলেন মানুষ নড়ে চড়ে বসে। তিনি বিবেকবান মানুষের প্রতিনিধি। তরুণ প্রজন্ম তাঁর শিষ্য। সকল স্তরের শিক্ষার্থীরা তাঁকে অনুসরণ করে থাকে। তিনি কি-ই বা করতে পারেন? কলম ধরতে পারেন। এ বিষয়ে তাঁর লেখাকে এক পর্যায়ে তিনি হতাশ হয়ে ‘ভাংগা রেকর্ড’ বলেছেন। তবে তাঁর লেখায় কোন কাজ হয়নি-এমন নয়। হয়েছে তো। ক্ষতিগ্রস্ত তরুণদের দুঃখ-বেদনার সমব্যাথী হয়েছেন-কষ্ট ভাগ করে নিতে চেয়েছেন। বুঝাতে পেরেছেন যে বহুতল ভবনের পিলার গুলো দুর্বল হলে একসময় ভবনটি ধসে পড়বে। জাতির সামনে এমন এক ভয়ংকার অন্ধকার দেখতে পেয়েছেন তিনি।
আরও একটি কাজ হয়েছে। তা হলো শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ঘুম ভেঙ্গেছে। তাদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা এতদিনে এটাকে জরুরী বিষয় মনে করা শুরু করেছেন। বিশিষ্ট জনদের মতামত গ্রহণ করছেন । দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদগণ গত ১১ জুন শিক্ষামন্ত্রণালয়ে শিক্ষাখাতের নানা সমস্যা নিয়ে এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রাক্কালে এ ধরণের ‘চা-চক্র’ সময় ক্ষেপন ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না। কারণ পরিস্থিতি যখন এমন যে এখনই গুলি ছোঁড়া ছাড়া বিকল্প নেই, তখন কলমের চেয়ে বন্দুকের প্রয়োজন অনেক বেশি। তবে এ ধরণের তৎপরতায় মনে হবে যে তারা হাত গুটিয়ে বসে নেই। কিছু একটা কাজ করে দেখানো আর কি! তাছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে শিক্ষামন্ত্রনালয় তোপের মুখে রয়েছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কথা শুনে মনে হয় তিনি অসহায়, দিশেহারা-পথহারা। ঐ যে কথা আছে না-‘আমি একা কি করব?’ কিন্তু কখনও কখনও কোন কোন কাজ একাই করতে হয়। প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের প্রতিবাদ-আন্দোলনের চাপের মুখে শিক্ষামন্ত্রানালয়ের তাৎক্ষনিক এ সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একজন সজ্জন ও ক্লিন ইমেজের লোক। গত পাঁচ বছরে শিক্ষাখাতে প্রচুর সাফল্য ও রয়েছে। কিন্তু তাতে কি হবে? মানুষ ব্যর্থতা নিয়ে যত সমালোচনা করে, সফলতা নিয়ে তত আলোচনা করে না। রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে হাসিনা সরকারের সাফল্য বিগত যে কোন সরকারের চেয়ে বেশি। কিন্তু অনেকেই তা দেখতে পায় না। তারা বড় করে দেখে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের জঙ্গিদের উপর পুলিশি এ্যাকশনের মত সব ঘটনা। অথচ সেদিন সময়মত পুলিশ এ্যাকশনে না গেলে দেশ জামায়াত-সমর্থিত বিএনপি ও জঙ্গি গোষ্ঠির কালো হাতে চলে যাওয়ার ষ্পষ্ট আশংকা ছিল।

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করার দায়িত্ব শিক্ষামন্ত্রালয়ের এবং তাদের হাতেই সকল ক্ষমতা রয়েছে। অন্য কারও কাছে থেকে ক্ষমতা ধার করার প্রয়োজন নেই। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মুদ্রণ, বিতরণ যাবতীয় কার্যাদি তাদের সম্পৃক্ততায় হয়ে থাকে। এ কথাও সত্য যে সরকারের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা সরকারকে অসফল প্রমাণ করার জন্য সদা ব্যস্ত। তাদের প্রতিহত করেই তো সফলতায় পৌঁছাতে হবে।
যে কাজে টাকার গন্ধ আছে তা বন্ধ করা সহজ নয়। দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত এ দেশে আরও সম্ভব নয়। তবে যে যা করতে চায় তাকে তা করতে দিলে আর কোন সমস্যা থাকে না।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অপমান ও দুঃখের সাথে সমব্যথী হয়ে আমি পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের একটা পরামর্শ দিতে চাই। যার ফলে পরীক্ষায় নকল বা প্রশ্ন ফাঁস বন্ধের জন্য আকাশ পাতাল করতে হবে না। পরীক্ষার উদ্দেশ্য মেধা যাচাই। শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের জন্য দেশে বিদেশে নানা ধরণের পদ্ধতি রয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরীক্ষার যে সকল স্তরে নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার আশংকা বেশি থাকবে সে সব ক্ষেত্রে ‘ওপেন বুক টেস্ট’(open book test) পদ্ধতি চালু করতে হবে। বিদেশে বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ পদ্ধতি চালু আছে। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন কোন বিভাগে open book test পদ্ধতি চালু আছে। তাতে অনেক সুবিধা। পরীক্ষার্থীগণ বই-পত্র সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবে। হল পরিদর্শকদের কাজ হবে শুধু পরীক্ষার জন্য নির্ধরিত সময় রক্ষা করা। প্রশ্নপত্র এমনভাবে প্রণীত হবে যে যারা মেধাবী বা পড়াশুনা করছে তারাই কেবল ভাল করবে। প্রশ্নের সংখ্যার সাথে সময়ের এমন বিন্যাশ থাকবে যে একজন ভালছাত্র নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে। বইয়ের মধ্যে উত্তর খঁজে পেতে হলে কিছু পড়াশুনা থাকতে হবে। মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। দক্ষতার সাথে এ জাতীয প্রশ্নপত্র তৈরি করার জন্য বাংলাদেশে বহু চৌকস শিক্ষক রয়েছেন। এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে এক সাথে অনেক সমস্যা দূর হবে।


লেখক: সাবেক ব্যাংকার।





পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test