E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ঢাকা অ্যাটাক : 'স্বপ্নবাজি হবে এটাই স্বাভাবিক'

২০১৭ অক্টোবর ০৮ ০৮:৫১:৩৩
ঢাকা অ্যাটাক : 'স্বপ্নবাজি হবে এটাই স্বাভাবিক'

সুপন সিকদার : ৬ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল বহুল আলোচিত দীপংকর দীপনের 'ঢাকা অ্যাটাক' সিনেমা। ঢাকা অ্যাটাক বহুল আলোচিত এই কারণেই যে সবার মুখে মুখে ঢাকা অ্যাটাকের নাম। ঢাকা অ্যাটাক নিয়ে দর্শকের স্বপ্ন একটু বেশি। কথায় আছে, 'মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড়'। তাই ছবিটা নিয়ে স্বপ্নবাজি হবে এটাই স্বাভাবিক।

তবে কি দর্শকের একটু বেশি স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে 'ঢাকা অ্যাটাক'? আমি বলবো পেরেছে । কারণ একজন ভালো দর্শক একটি ভালো ছবির জন্য স্বপ্ন দেখে। তবে ছবি মুক্তির পর সে ছবি দেখে এবং তার স্বপ্নভঙ্গ হয় বা পরে মুক্তচিন্তায় স্বপ্ন দেখতে ব্যাঘাত ঘটায়। সেটা ঢাকা অ্যাটাক মুক্তির আগে মুক্তি প্রাপ্ত বেশ কিছু ছবি থেকেই পেয়েছে। এ.পি.জে আবদুল কালাম বলেছেন, স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন সেটা যেটা তোমায় ঘুমোতে দেয় না। অন্য চলচ্চিত্রের মত 'ঢাকা অ্যাটাক' দর্শককে স্বপ্নের মধ্যে ঘুম পারিয়ে দেয়নি। বরং স্বপ্নের মধ্যে জাগিয়ে রেখেছে এবং পরে স্বপ্ন দেখার আশা জাগিয়েছে।

ছবি মুক্তি দিনই (৬ অক্টোবর) দর্শকের স্বপ্ন পূরণের চলচ্চিত্র 'ঢাকা অ্যাটাক' আমি দেখেছি। হলে অনেক দর্শকের সমাগম ছিল। সবাই বেশ মজা নিয়ে সিনেমাটি দেখেছে। চলচ্চিত্রটি দেখে আমার ভালো লেগেছে। সবার মত আমিও স্বপ্ন দেখেছিলাম 'ঢাকা অ্যাটাক' নিয়ে। আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে পরিচালক দীপংকর দীপন ও লেখক 'সানী সানোয়ার'।

অনেকে বলেছে, ঢাকা অ্যাটাক সিনেমাটি পুলিশ বাহিনীর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান নিয়ে নির্মিত। আমি তেমনটা বলছিনা। কারণ, সিনেমাটিটে পুলিশ বাহিনীর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান আছে এটা ঠিক। তার মানে এটা নয় সিনেমাটি শুধু পুলিশ বাহিনীর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান নিয়ে নির্মিত। সিনেমাটিটে পুলিশ বাহিনীর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পাশে পুলিশের ব্যক্তিজীবনও তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ ও মাহিয়া মাহি। আরিফিন শুভ যে ভালো অভিনেতা এটা তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন। আরো একবার প্রমাণ করলেন। আর মাহিয়া মাহিও যে কম যায়না। তিনি সেটার প্রমাণ দিয়েছেন ঢাকা অ্যাটাক সিনেমার ভেতর দিয়ে। সিনেমাটিটে আরো অভিনয় করেছেন সৈয়দ হাসান ইমাম, আফজাল হোসেন, এবিএম সুমন, নওশাবা, শতাব্দী ওয়াদুদ,তাসকিন রহমান, এহসানূর রহমান, পীযূষ সিকদারসহ প্রমুখ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন নায়ক আলমগীর এবং শিপন মিত্র। সিনেমায় সংশ্লিষ্ট সকলেই তাদের সেরাটা দিয়েছেন। বিশেষ করে এবিএম সুমন, নওশাবা, শতাব্দী ওয়াদুদের অভিনয় ছিল চোখ বাঁধানো এবং এহসানূর রহমান ও তাসকিন রহমানের অভিনয় ছিল অনবদ্য। কোন কিছুতে কমতি রাখেননি পরিচালক দীপংকর দীপন।

একটি কেমিক্যাল কোম্পানির ডাকাতির ঘটনা দিয়ে বেড়ে উঠে গল্প। পরে একে একে ঘটে থাকে নানা ঘটনা।গল্পের সাথে সাথে দর্শকের মনে জাগতে থাকে নানা প্রশ্ন। তবে দর্শক একসময় ঠিকই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায়।

হসপিটাল বোমা রাখা আছে জেনে ঘটনা স্থলে যায় পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয় কারি দল। পরে তারা বোমা নিষ্ক্রিয় করতে রিমোট হ্যাক করার চেষ্টা করে এবং তারা সফল হয়। কিন্তু বোমায় বিকল্প সিস্টেম (টায়িমার) থাকায় তারা পুরোপুরিভাবে পারেনা বোমা নিষ্ক্রিয় করতে। পরে নায়ক বোমার কাছে গিয়ে দেখতে পায় বোমা ফাটার সময় দুপুর ৩.১০ মিনিট। পরে সে সেটা জানায় এবং বোমা নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু পুলিশ অনেক আগেই জানতে পারে এই সব ঘটনা ঘটাচ্ছে কে। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে সোয়াট টিম পাঠিয়ে হাসপিটালের আশেপাশের বাসা বাড়িগুলো চেক করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা অপরাধীর আস্তানা খুঁজে পায়। সেখান থেকে তারা জানতে পারে অপরাধীর আস্তানার ঘড়ি ফাস্ট এবং সে ঘটনা জানানো হয়। ঘটনা জানার পরে নায়িকা নিজে যায় নায়কে জানাতে এবং সে সময় ভালোবাসার মানুষের পাশে থাকে চায় নায়িকা। সেই সিকোয়েন্সটি আমাকে স্পর্শ করেছে। তখন নায়কের হাতে থাকে ১০ মিনিট নায়ক প্রাণপন চেষ্টা করতে থাকে বোমার সার্কিটে থাকা সুইচ বন্ধ করতে। কোন ভাবেই পারছেনা পরে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জলের বোতল কেটে একটি কাঠিতে গ্লু দিয়ে বোতলের কাটা অংশ লাগিয়ে চেষ্টা করে এবং বোমা ফাটার ঠিক ১ সেকেন্ড আগে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে সফল হয়। এই সাথে বেঁচে যায় আইসিইউতে থাকা এগারোটি প্রাণ। বেঁচে যায় একজন প্রেমিকার ভালোবাসা। বেঁচে যায় হাজার হাজার দর্শকের স্বপ্ন।

সিনেমাটির গানের কথা বলতে হলে বলবো
প্রথমেই বলি আমারা সাধারণত যৌথ প্রযোজনা সিনেমাতেই দেখি দুই বাংলার শিল্পীদের কাজ করতে। কিন্তু আশ্চর্য ভাবে ঢাকা অ্যাটাক সিনেমাটিটে 'চুপচাপ টুপটাপ' নামের একটি গান গেয়েছেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী অরিজিৎ সিং। অনেকে বলছে, ছবিটির বাজারের জন্য এটি করা হয়েছে। কিন্তু আমার তেমনটা মনে হয়না। হ্যাঁ, আমি মানছি গানটি সুন্দর কিন্তু এটি সেরা গান নয়! হয়তো বাংলাদেশের কোন শিল্পীকে দিয়ে গান গাওয়ানো হলে আরো ভালো কিছু হতো বলে আমার বিশ্বাস। আর সিনেমাটি আইটেম গান 'টিকাটুলির মোড়ে' ছিল এক কথায় চমৎকার।

সিনেমার আরেকটি গান 'পথ যে ডাকে' ও 'কানামাছি ভো ভো' এই দুটি গান অসাধারণ, গান দুটি সিনেমাকে নিয়ে গেছে অন্য এক মাত্রায়। সত্যি কথা বলতে 'পথ যে ডাকে' এই গানটি ছুঁয়ে গেছে আমাকে।

ঢাকা অ্যাটাক সিনেমায় লাইট ও সিনেমাটোগ্রাফির কাজ ছিল অভূতপূর্ব। আমি মুগ্ধ হয়েছি। ওপার বাংলার অনেকে বলেন, ভারতীয়দের 'শুধু আলু চেটকে দিলেই তারা খায়'। আমি বলি, 'বাঙ্গালিরা শুধু আলু চটকে দিলেই খায়না। আলু ভর্তায় সাদ মতো লবণ ও ঝাল হলেই তারা খায়।'

সিনেমায় একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, 'লাশের পকেটে হাসি'। লাশের পকেটে হাসি কিনা জানিনা, তবে দর্শকের চোখে হাসি।

দীপংকর দীপনের প্রথম চলচ্চিত্র অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা 'ঢাকা অ্যাটাক' দর্শকের স্বপ্ন পূরণে সার্থক। দীপংকর দীপন তার নিপুণ হাতে বানিয়েছে সিনেমাটি। তিনি আগের সকল গ্লানি ভুলে গিয়ে সৃষ্টি করুক ঢাকা অ্যাটাক এক্সষ্ট্রিমসহ আরো সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন পূরণের সিনেমা।

জয় হোক ঢাকা অ্যাটাকের,
জয় হোক বাংলা সিনেমার।

লেখক : ছাত্র, সরকারি ইয়াছিন কলেজ, ফরিদপুর।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test