E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘চরিত্রের সঙ্গে আমি নিজেকে বদলে নিতে পারি’

২০১৯ মার্চ ২৩ ১৬:১৯:৪৪
‘চরিত্রের সঙ্গে আমি নিজেকে বদলে নিতে পারি’

মারুফ সরকার : ব্যবসায়ী এবং অভিনেতা- এই দ্বৈত সত্ত্বার সমন্বয়ে চিত্রিত যে তৃতীয় সত্ত্বা বা প্রতিকৃতি, তারই প্রতিরুপ নায়ক আবীর চৌধুরী। একজন অভিনেতার প্রতিকৃতি বলতে বুঝানো হয় অভিনেতার সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের শৈল্পিক অভিব্যক্তির স্বরুপ অন্বেষণে পাওয়া কালোত্তীর্ণ উপাদানের আধার। সেদিক থেকে মিজানুর রহমান মিজান পরিচালিত রাগী ছবির দরাজ কন্ঠের নায়ক আবীর চৌধুরী কতোটা এগিয়ে আছেন, তা বিবেচনা করার সময় এখনও সমাগত নয়। তবে বর্তমানে আবীরের যা বয়স, তার শিল্প সাধনার বয়স তার চাইতে হয়তো ১৩ বা ১৪ বছর কম হবে। 

পারিবারিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই নিজের খেয়ালে বা ভালোবাসা থেকে শৈশবের মঞ্চাভিনয়ের কথা, তারপর টিভি নাটক এবং বর্তমানে চলচ্চিত্রাভিনয় - তার সবই এগিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব গতিধারায়। শিল্প সাধনার ক্ষেত্রে আবীর শতভাগ আন্তরিক হলেও তিনি মূলত একজন ব্যবসায়ী। তবে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি যতোটা সফল, অভিনয়ের ক্ষেত্রেও সে সাফল্য আসবে বলে আত্মবিশ্বাসী আবীর।

তিনি বলেছেন, তার জীবনে কোনো ব্যর্থতা নেই। তিনি যখন যা করতে চেয়েছেন তাতেই তিনি সফল হয়েছেন। মঞ্চ-টিভি অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ব্যবসা ক্ষেত্রে কর্মজীবন শুরু করেছেন একটি কোম্পানির কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের ব্যবসা। এছাড়াও তিনি এখন একজন চিত্রনায়ক। শৈশব থেকে ব্যবসা এবং শিল্পাঙ্গনে তার পথ পরিক্রমা এখানে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো -

পারভেজ আবীর চৌধুরী আসল নাম হলেও গ্ল্যামার জগতে তিনি আবীর চৌধুরী নামে সমধিক পরিচিত। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ। জন্ম ঢাকায়। ১৮ অক্টোবর। তিনি ইংরেজীতে স্নাতকোত্তর করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আবীর সকলের ছোট।

আবীর চৌধুরীর অভিনয়ে হাতেখড়ি আরামবাগের কে কে থিয়েটার থেকে। তার বড় মামা শফিউল্ল্যাহ শফি ছিলেন নাট্যকার। তার মাধ্যমেই তিনি মঞ্চে কাজ শুরু করেন। এই থিয়েটারের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন প্রায় ১৫ বছর। তবে তিনি জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে কারো কোনো অনুপ্রেরণা নেই। তিনি স্বপ্রণোদিত হয়েই কাজ শুরু করেছেন। সাত থেকে আটটি নাটকে তিনি ৩০টির বেশি শোতে অংশগ্রহণ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘অভিনয়ের জন্য আমি কোনো পারিবারিক অনুপ্রেরণা পাইনি। সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে যা ঘটে, আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।’

পড়াশোনা শেষ করার পর আবীর একটি ফ্রেন্স কোম্পানিতে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এই কোম্পানিতে কাজ করার সময়ই তার মাথায় আসে, অন্যের কোম্পানিতে কেন তাকে কাজ করতে হবে? তিনি নিজে কেন একটি কোম্পানির মালিক হতে পারবেন না? এই আত্মজিজ্ঞাসার জবাবই হলো তার আজকের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হওয়া।

পাশাপাশি টিভি নাটকে অভিনয় করে গেছেন। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে রক্ত রেখা, চেনা পথ অচেনা শহর, শফি মাস্টার। তবে এগুলো সবই টেলিফিল্ম।

তিনি ২০১৩ সালে প্রথম পরিচালক আশরাফুর রহমানের ‘তুমি আসবে বলে’ ছবিতে অভিনয় করেন। এরপর ২০১২ সালে শাহাদাৎ হোসেন লিটনের ‘বাপ বড় না শ্বশুর বড়’ ছবিতে কাজ করেন। তিনি চলচ্চিত্রে যেদিন প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তখন তার এক পাশে ছিলেন রাজ্জাক এবং আরেক পাশে ছিলেন খলিল।

তিনি বলেন, ‘শাহাদাৎ হোসেন লিটন ভাইয়ের ছবিটি দেখে আমার ভালো লাগেনি। তুমি আসবে বলে ছবিটি আমার কাছে মনে হলো একটি টেলিফিল্ম। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম, আর ছবিতে কাজ করব না। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি ছবির অফার ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ ছবির গল্প এবং বাজেট আমার পছন্দ হয়নি।’

‘অভিনয়টা আমার শখ বা পেশা নয়, এটা আমার নেশা। তাই ঘুরেফিরেই এখানে আছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার চাকরী জীবন স্থায়ী হয়েছিল মাত্র তিন বছর। ব্যবসা বলেন আর শিল্প, সর্বত্রই আসল কথা হলো একজনের ডেডিকেশন বা কাজের প্রতি নিবেদিত থাকা।

২০১৬ সালে তিনি কাজ শুরু করেছেন রাগী ছবিতে। ছবিটির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আবীর চৌধুরী বলেন, ‘আমি উত্তম কুমারের সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, আমার অভিনয় যদি একজন দর্শকেরও ভালো লাগে তাহলে আমি নিজেকে স্বার্থক মনে করব।

তিনি বলেন, ‘গল্প এবং চরিত্র অনুসারে আমি নিজেকে বদলে ফেলতে পারি এবং চরিত্রের ভাঙচুরের মধ্য দিয়েই আমার অভিনয় এগিয়ে যায়। ফরিদা ইয়াসমীন প্রযোজিত রাগী ছবিতে আমাকে দেখা যাবে বদলে যাওয়া একজন অভিনেতা হিসেবে। অভিনয়টাকে আমি শিল্প হিসেবেই দেখি। এখনো আমি শিল্পী হিসেবে গড়ে ওঠতে পারিনি। তবে মনেপ্রাণে চেষ্টা করছি একজন শিল্পী হয়ে ওঠতে এবং অভিনয়ের সৃজনশীলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে।’

(এমএস/এসপি/মার্চ ২৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test