E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গীতের চড়কায় 'ঘুমকুমারী'র মঞ্চ ভ্রমণ

২০১৯ এপ্রিল ০১ ১৮:২২:৪৫
গীতের চড়কায় 'ঘুমকুমারী'র মঞ্চ ভ্রমণ

প্রান্ত সাহা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষ পরীক্ষা প্রযোজনা হিসেবে নাট্যকার ড. আফসার আহমদের 'ঘুমকুমারী' নাটকের মঞ্চ ভ্রমণ ঘটলো(২৭, ২৮, ২৯ মার্চ, ২০১৯ইং) নির্দেশক ড. রুবাইয়াৎ আহমেদের নিপুণতায়। নাট্যকার 'ঘুমকুমারী' নাটকটি রচনা করেন 'A Sleeping Beauty' গল্পের ছায়া অবলম্বনে। বলা বাহুল্য, এ নাটকটি সম্পূর্ণরূপে পাশ্চাত্য আঙ্গিক থেকে সরে সমহিমায় প্রকাশ পায় নাট্যকারের স্পর্শে! কাহিনির আবর্তে গল্পে এসেছে বিভিন্ন সংযোজন এবং বিয়োজন।

বঙ্গ দেশের রাজপুত্র রূপকুমার রাজ্যের প্রথাগত শাসনের নামে শোষণের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় প্রতিপক্ষ করে বসে রাষ্ট্রযন্ত্রের। রাজা সেনাপতি ও মহামন্ত্রীর প্ররোচনায় বন্দি করে রাজপুত্রকে। রানি রাজপুত্রের জীবন সংকট বুঝতে পেরে তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। রাজপুত্র মাতৃ আদেশ পালনে রাজ্য ছাড়ে। তবে তার মন পড়ে থাকে বঙ্গদেশে, সেখানে এক কৃষকের কন্যা মালঞ্চ রাজপুতের অপেক্ষায় থাকে। রূপকুমার একরাজ্য থেকে অন্যরাজ্যে, এক দেশ থেকে অন্যদেশে উদ্দেশহীনভাবে ঘুরতে থাকে। অতঃপর এসে পৌঁছে কাঞ্চনপুর রাজ্যে, সেখানে কালো বৃদ্ধ পরী কোবের অভিশাপে ঘুমন্ত পুরো রাজপ্রাসাদ।

অভিশপ্ত রাজ্যের কাহিনি এক ফকির রাজপুত্রকে জানায়, 'কাঞ্চনরাজ ছিল নিঃসন্তান। এক সন্ন্যাসীর থেকে কুকাফ শহরের পাকা আম প্রাপ্ত হয়ে রাজা কন্যা সন্তানের জনক হয়। রাজ্যে নামে আনন্দের বন্যা। তবে তা ছিল ক্ষণস্থায়ী, সেই উৎসবে সবার নিমন্ত্রণ হলেও ভুলক্রমে বাদ পড়ে শয়তান পরী কোবে। সে অভিশাপ দেয়, ষোড়শী হলেই রাজকন্যার হাত কাটবে সুতো কাটার চড়কায়; রাজা-রানি হতবিহব্বল হলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, তবে সাদা পরী শয়তানের অভিশাপ লাঘব করে বর দিলো যে তার মৃত্যুর পরিবর্তে রাজকন্যা একশো বছরের গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হবে আর তার সঙ্গে ঘুমন্ত থাকবে গোটা রাজপ্রাসাদ।'

এই কাহিনি শুনে বীরদর্পে এগিয়ে যায় রূপকুমার, সেই রাজকুমারীর ঘুম ভাঙায়। গোটা রাজ্য আবার প্রাণবন্ত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। এদিকে রাজকন্যাকে পেয়েও রূপকুমারের মনের অন্ধ কামরায় কৃষাণ কন্যা মালঞ্চ উঁকি দেয়। এভাবেই আমাদের প্রাচ্যের শিল্পগুণের অবারিত রসের উপস্থিতিতে ঘুমকুমারী পরিপূর্ণ।

অন্যদিকে নির্দেশকের চমকপ্রদ মঞ্চ গাঁথনে ঐতিহ্যবাহী বর্ণনাত্মক রীতিতে এগিয়ে যায় কাহিনির মুল রস। গীত প্রধান ঐতিহ্যরীতিকে মাথায় রেখেই 'ঘুমকুমারী' মঞ্চে বিমূর্ত হয়। গীতের নৌকায় গল্প আসে, আসে প্রেম, আসে বেদনা, আসে অপূর্ণতাকে পূরণের পরম কামনা। নির্দ্বিধায় এক জমকালো এবং বর্ণিল আলোকছটায় মঞ্চ দাপিয়ে বেড়িয়েছে প্রথম বর্ষের নবীন কিছু প্রাণ। বাঙলার ঐতিহ্যকে বেশ সচেতন ভাবেই মঞ্চে এনেছেন নির্দেশক। বঙ্গরাজা যে রাজ মুকুট ব্যবহার করেন তাতে আমাদের দেশীয় মাথাল দেখা যায়। এছাড়াও হাত পাখা এবং সৈনিকের বল্লমের জায়গায় প্রতীকীরূপে নৌকার বৈঠা। পোশাকের ক্ষেত্রেও বাঙলা নাটকের রসের থেকে বিচ্যুত হয় নি পুরো নাটক।

মঞ্চে স্থায়ীরূপে কোন সেটের ব্যবহার লক্ষ্য করা না গেলেও কাহিনির প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় মঞ্চে দোলনার আবির্ভাব ঘটে যা কিনা- এক ভিন্ন দ্যোতনার জন্ম দেয়। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা নাচে গানে পুরো ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখে প্রসেনিয়াম ফ্রেমে। কঠোর পরিশ্রমের ছাপ বেশ স্পষ্ট রূপেই প্রতিফলিত গোটা মঞ্চে।

“সামনে চল সুবন্ধু আমার,

পথ যে অনেক দূর।“

অর্থাৎ 'ঘুমকুমারীর' এ পথের মাত্র শুভ সূচনা, ঢাকার মঞ্চে উপস্থাপনের দাবি রাখে এ প্রযোজনাটি; বাঙলা ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারার গতিকে সমুন্নত রাখতে এ সকল নাটকের অধিক মঞ্চ ভ্রমণ আবশ্যক।

(পি/০১ এপ্রিল, ২০১৯ইং)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test