E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফের ভিক্ষা করছেন প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পাওয়া মেকআপম্যান

২০২০ জানুয়ারি ২৯ ১৭:২৬:১৭
ফের ভিক্ষা করছেন প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পাওয়া মেকআপম্যান

স্টাফ রিপোর্টার : ভাগ্যের নির্মম পরিহাস একেই বলে। যার হাতের শৈল্পিক ছোঁয়াতে নায়িকারা পর্দায় হাজির হয়েছেন স্বপ্নের রানী রূপে। মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছেন শাবানা, ববিতা, অঞ্জু, মৌসুমীর মতো নন্দিত সব নায়িকাদের। অথচ নিজের জীবনের সব সৌন্দর্য আজ তার ভিক্ষের থালায়। যে হাতে রঙিন হয়েছে সিনেমা সেই হাতে আজ ভিক্ষের থালা। পথে পথে হাত পেতে যোগার করছেন সংসার ও চিকিৎসার অর্থ।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ভিক্ষুকের নাম কাজী হারুন। ‘বেদের মেয়ে জোছনা’র মতো ব্যবসাসফল এবং জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের তিনি মেকআপম্যান ছিলেন। গুণি এই মেকাপম্যান ‘অন্য জীবন’, ‘শঙ্খমালা’, ‘গোলাপী এখন ঢাকা’, ‘জীবন সংসার’সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে পেয়েছেন নানা স্বীকৃতিও। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ ছবিতে কাজের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

দক্ষিণ যাত্রাবাড়ির ফরিদাবাদ বস্তিতে স্ত্রী মহুয়া আকতারকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। ৩টি বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে ঘর ভাড়া দেন স্ত্রী মহুয়া, অপরদিকে ভিক্ষা করে জীবনধারণের খরচ চালান কাজী হারুন।

তবে শুধু দারিদ্র্যতাই নয়, হারুনের আরও এক প্রতিপক্ষ হলো তার শারীরিক অসুস্থতা। যার সুচিকিৎসা তিনি করাতে পারছেন না অর্থের অভাবে। সিনেমায় থাকতে পারেন না অনেকদিন। তাই ভিক্ষার টাকাতেই কোনোমতে চালিয়ে যাচ্ছেন তার চিকিৎসা।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মেকাআপম্যান হারুনের সংসার চলে এখন ভিক্ষে করে। এমন খবর প্রকাশ হয়েছিল গণমাধ্যমে গত বছর। সেই খবরে টনক নড়েছিল রাষ্ট্রের। প্রধানমন্ত্রী ডেকে নিয়ে তাকে ৫ লাখ টাকা অনুদান দেন। সেইসঙ্গে সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ এক বছরের জন্য প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা সমমানের গৃহস্থালী পণ্য দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেছে। তবে সেই সাহায্য বন্ধ হয়েছে কয়েক মাস হয়।

এদিকে সরকারি অনুদানের টাকায় চিকিৎসা ও সংসার ব্যয় চালিয়ে সেটাও শেষ। তাই আবারও টিকে থাকার যুদ্ধে নামতে হয়েছে বৃদ্ধ এই মেকাপশিল্পীকে। আবারও থালা হাতে পথে পথে ভিক্ষে করছেন তিনি।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে আবারও আলোচনায় এসেছেন হারুন। জানা গেছে, জীবন ও নিজের ওপর অভিমান করে হঠাৎ বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ একমাস পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। কমলাপুর রেল স্টেশনে দিন-রাত ভিক্ষা করে, রাতে ইট মাথায় দিয়ে ঘুমিয়েছেন। পাঁচ হাজার টাকা জমিয়ে বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। এরপর থেকে আবারও নিয়মিত ভিক্ষে করেই সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

গেল বছর গণমাধ্যমে কাজী হারুনের স্ত্রী মহুয়া আকতার বলেছিলেন, বিয়ের পর বেশ সুখেই ছিলেন তারা। অভাব ছিল না কোনোকিছুর। হারুণ অনেক কাজ করতেন। যা আনতেন তা দিয়ে বেশ ভালোই চলে যেত তাদের। দুর্দশার শুরু ২০০৯ সালে। কাজী হারুনের ব্রেইন স্ট্রোক হবার পর থেকেই নেমে আসে হতাশা ও কষ্টের দিন।

জাকির হোসেন রাজুর ‘জীবন সংসার’ ছবির শিল্পীদের সাজিয়েছিলেন কাজী হারুন। তার শিল্পের তুলিতেই পর্দায় হাজির হয়ে দর্শক মুগ্ধ করেছিলেন সালমান শাহ-শাবনূর ও ফারুক-ববিতা জুটি। সেই তিনি আজ বিবর্ণ-ধূসর জীবন ও সংসার নিয়ে সংগ্রাম করে চলেছেন। তিনি জানেন না, এর শেষ কোথায়। কেউ কী আসলে জানে?

নিয়তির প্রতি ক্ষোভ পুষে রাখা অভিমানী কাজী হারুন হয়তো মৃত্যুকেই সব দুঃখের সমাপ্তি বলে মেনে নিয়েছেন...!

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ২৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test