E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সুমন কি রাজনীতির মাঠে?

২০১৪ মার্চ ১২ ১২:৫১:৫৫
সুমন কি রাজনীতির মাঠে?

বিনোদন ডেস্ক, ঢাকা : ২৫ মার্চ অ্যাকাডেমি মঞ্চে সুমন মুখোপাধ্যায় আর কবীর সুমন একসঙ্গে৷ সঙ্গে থাকছেন বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌশিক সেনও৷ কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের এই ভরা বাজারে এঁদের এই একসঙ্গে আসা কীসের ইঙ্গিতবহ? নিছকই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শিল্পীর প্রতিবাদ, নাটকের অনুষ্ঠান? নাকি সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিক রাজনীতিতে তার অন্য মানে দাঁড়িয়ে যাবে? দুই সুমনের সঙ্গে কথা বলে সেটাই বোঝার চেষ্টা।

সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত 'মফিস্টো' দেখে মন্তব্য করেছিলেন কবীর সুমন, 'কমরেড, আপনাকে সালাম৷ জীবনের কিছু কিছু মুহূর্ত থাকে যখন মনে হয় - আহ্, আমি এই মুহূর্তে যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি বাকি পৃথিবী কেন যে সেটার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে না! 'মেফিস্টো' এমনই সমস্ত মুহূর্ত দেয় আমাদের৷ আপনি এবং আপনার টিম আমাকে এক অদ্ভুত একাকীত্বের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন৷ একই সঙ্গে নাটকটি আমার মধ্যে এক ধ্বংসাত্মক বহুত্ববাদ সৃষ্টি করছে৷'

এই মুহূর্তে, এটা লিখতে লিখতে, মনে পড়ছে একটা গান, যেটা লিখেছিলাম ১৯৮৬-তে৷ 'হাত থেকে হাতে বুক থেকে বুকে/করে দেব গোপনে পাচার/ভালোবাসার নিশিদ্ধ ইস্তেহার/আমি কী দরাজ আজ ওদের ভ্রুকুটি/আজ আমার ছুটি/সারাদিন প্যামফ্লেট বুকে করে ফিরি তার গোপন লালিমা/একদিন মুছে দেবে যুগের কালিমা/তোমার বন্দী দেহে চুপিচুপি এনে দেব কারামুক্তির সমাচার৷ ...থিয়েটার শিল্পের উদযাপনের লক্ষ্যে অসাধারণ সুন্দর সমস্ত চিত্রকল্প, এক খাঁটি শিল্পীর প্যাশন, এক প্রতিশোধ যা একজন শিল্পীই নিতে পারে৷ .... আমি (এই নিয়ে) বকে যেতেই পারি, আপনি জানেন মাঝে মাঝে আমি কতটা অর্থহীন বকতে পারি... আসলে এখন যখন দেখি আমাদের বেশিরভাগ প্রাক্তন সহযাত্রীরাই চাটুকারিতায় মত্ত বা পড়ে পাওয়া অক্ষমতার প্রতিভূ হয়ে যাচ্ছেন৷' বলাই বাহুল্য, অ্যাকাডেমিতে, আগামী ২৫ মার্চ যখন তৃতীয় সূত্র আর মুখোমুখির যৌথ প্রযোজনায়, সুমন আবার 'মেফিস্টো' নামাবেন, সেখানে কবীর থাকবেন৷ তবে, এবার দু'জনের আসার তাত্‍পর্য অন্য জায়গায়৷ তপন থিয়েটারে সে ঘোষণাই করলেন সুমন, 'ফ্যাসিবাদ'-এর প্রতিবাদে সারাদিন নাটক করছি আমরা৷ আমি, বিপ্লব, কৌশিক আর কবীর সুমন৷ বিপ্লব বন্দোপাধ্যায় থাকছেন তাঁর 'ক্যালিগুলা' নিয়ে, কৌশিক সেন তাঁর নতুন নাটক 'কর্কটক্রান্তির দেশ' নিয়ে এবং কবীর তাঁর গান নিয়ে৷

অবশ্য এর আগে, সুমন আর কবীর এক সঙ্গে বেশ কিছু কাজ করেছেন৷ সে 'চতুরঙ্গ'ই হোক, বা 'কাঙাল মালসাট'৷ কবীর অভিনয় এবং গান, দুই-ই করেছেন সুমনের পরিচালনায়৷ তবে সে সমস্ত কাজ ছিল আদ্যন্ত সৃষ্টিশীল৷ শিল্পের তাগিদে একসঙ্গে এসেছিলেন তাঁরা৷ কিন্ত্ত আগামী ২৫শে দু'জনের আসা এক অন্য আখ্যানের ঈঙ্গিতবাহি৷ যতটা সাংস্কৃতিক ঠিক ততটাই রাজনৈতিক৷ কবীর তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ৷ কিন্ত্ত আগামী লোকসভা নির্বাচনে লড়বার টিকিট তিনি পাননি৷ অন্যদিক সুমন রাজ্যে নাটকের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন, যা মোটেই শ্রবণমধুর নয়৷ তাঁর 'মেফিস্টো'তেও আছে নানা ঈঙ্গিত, যা এই মুহূর্তের রাজনৈতিক আবহাওয়াকেই তুলে ধরে৷ তাঁরই কথায়, 'বুদ্ধিমানোঁ কে লিয়ে ইশারাহাই কাফি হ্যায়!'

কথা বলতে গিয়ে সেই ক্ষোভেই ফেটে পড়লেন সুমন৷ 'এই যে সিনেমার তারকাদের ভোটে দাঁড়াবার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে - এটা কী গণতন্ত্র নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে? এঁদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী? আর অভিজ্ঞতাই বা কী? এঁরাই সংসদে জনপ্রতিনিধি হয়ে গিয়ে বসবেন? তর্ক-বিতর্ক করবেন সাধারণ মানুষের ভালো-মন্দ নিয়ে? জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন? যতদূর মনে পড়ে, এঁরাই কোনওদিন সক্রিয় রাজনীতিতে আসতে চাননি! এখন এই দুই অদ্ভুত ব্যাপার কী করে এক হয়ে যাচ্ছে?' বলছেন তিনি৷ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ২৫শে যে তাঁদের প্রতিবাদ গোটা রাজ্যে ছাড়িয়ে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক টানাপোড়েনেরও কি ইঙ্গিত দেয় না? 'হ্যাঁ, নরেন্দ্র মোদীর উত্থানও উত্‍কন্ঠা জাগায় বই কি! যতই তিনি ক্ষমা চান, ভিতরের ঘটনা তো সবাই জানে,' বলছেন সুমন৷

থিয়েটারের পরিস্থিতির ব্যাপারেও তিনি খোলাখুলিই ক্ষুব্ধ৷ 'লিখিত আকারে না হলেও, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে সমস্ত দল 'নাট্যস্বজন'-এ নেই, তাদেরকে অন্যত্র ডাকা হচ্ছে না৷ তাদের হল পেতেও অসুবিধে হচ্ছে৷ অথচ বলা হচ্ছে 'নাট্যস্বজন' একটা প্রতিনিধিত্বমূলক সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম৷ আমার বক্তব্য হল, এটাকে সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম না বলে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বলতে ক্ষতি কী? এই দলের মাথা তো ব্রাত্য (বসু)৷ যিনি কিনা একটা রাজনৈতিক দলের নেতা৷ অর্পিতাও (ঘোষ) তাই৷ তাহলে কি সেই প্ল্যাটর্ফমকে অরাজনৈতিক বলা যায়? এটা আমি ব্রাত্যকে বহুবার ব্যক্তিগতভাবে বলার চেষ্টা করেছি৷ ও মানতে চায় না,' স্পষ্ট কথা সুমনের৷

আরও বলছেন তিনি, 'সব মিলিয়ে আমাদের একেবারে কোণঠাসা অবস্থা৷ এটা কেন হবে? কেউ কেউ মুখ খুলছেন না৷ ভয় পাচ্ছেন, মুখ খুললেই সমস্যায় পড়ে যাবেন৷ এই সমস্ত ভাবনা থেকেই আমরা কয়েকজন মিলে ঠিক করি এক সঙ্গে কাজ করব৷ আমরা যারা অন্যভাবে মুখ খুলতে পারছি না, তারা এভাবেই ব্যাপারগুলোকে অ্যাড্রেস করছি৷ যাঁরা বোঝার তাঁরা বুঝবেন৷ কৌশিকও বলল, লোকসভা ভোটের আগেই নামাতে চায় নাটকটা৷ তবে আমাদের ফ্যাসিবাদের প্রতিবাদটা বড় প্রেক্ষিতে দেখলেই ভালো,' বলছেন সুমন৷ আর কবীর? 'এই সব নিয়েই কবীরদার সঙ্গে আলোচনা করি৷ তিনি হাতে গোনা সেই বুদ্ধিজীবীদের একজন যিনি তাঁর বিস্তৃত এক্সপোজার, পড়শোনা এবং বোধ দিয়ে সমসাময়িক সময়কে পড়েছেন৷ পড়ে চলেছেন৷ তিনিই তো নির্ভিকভাবে গেয়েছেন, 'হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং কন্ঠ ছাড়ো জোরে...'৷ এটাই আমাদের ২৫শে'র ট্যাগ লাইন হতে পারত৷ আমার প্রস্তাব শুনে কবীর সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে দিয়েছেন,' বলছেন সুমন৷

কবীরও একই কথা বলছেন৷ 'আমাকে যখন সুমন মুখোপাধ্যায় জানালেন যে উনি, বিপ্লব আর কৌশিক ২৫শে সারাদিন-ব্যাপি ফ্যাসিবাদের প্রতিবাদে অনুষ্ঠান করবেন আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম৷ বড় বিপদের সময় এটা৷ বর্তমান সরকারের মধ্যে একটা স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ এটা গত আমলেও দেখেছি,' বলছেন কবীর৷ কবীরও শুধুমাত্র বর্তমান রাজ্যের পরিস্থিতির নিরিখেই গোটা ব্যাপারটা দেখতে নারাজ৷ 'কিছুদিন আগে এশিয়া কাপের পরিপ্রেক্ষিতে মিরাটে যে ৬৭ কাশ্মীরি ছাত্রকে পাকিস্তানকে সমর্থন করবার জন্য দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পরে ছেড়ে দেয় পুলিশ, তা এক কথায় অসহনীয়৷ আমিও তো এক সময় ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট খেলায় পাকিস্তানকে সমর্থন করেছি৷ ইমরান খান বা ইমতিয়াজ আহমেদের বিরাট ভক্ত ছিলাম আমি৷ তাই বলে কি আমি দেশদ্রোহী হয়ে গেলাম? কই, এই জন্য তো কেউ আমাকে কোনওদিন গ্রেপ্তার করেনি! এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে আমাদেরই এক রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট এবং সুনাগরিক বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা৷ উনি একটা মেমো জমা দিতে গিয়ে পুলিশের অভিযোগের টার্গেট হয়ে গিয়েছিলেন৷ এগুলো স্বৈরাচারি কাজ ছাড়া কী? দু'টো ঘটনার মধ্যে এক অদ্ভুত মিল আছে৷ দু'টোই স্বৈরাচারি মানসিকতার স্বরূপ৷ সুমনের সঙ্গে আমি বহু কাজ করেছি৷ আর এবার তো 'না' করবার কোনও প্রশ্নই নেই,' বলছেন কবীর৷ কী গাইবেন? কবীর বলছেন, 'আমি আর কী গাইব? কিছু কবিতা পড়ব আর আমারই কিছু বাংলা গান গাইব৷'

আসন্ন নির্বাচনে নির্দল হয়ে দাঁড়াবার কথা ভাবছেন? 'ভাবছি৷ আরেকটা চান্স৷ আমি একা৷ কোনও সমর্থন নেই৷ জানি গো-হারান হারব৷ কিন্ত্ত তাও ভাবি, 'হোয়াই নট?' আর একবার৷ ওয়ান৷ মোর৷ টাইম৷ এরকম একটা ভাবনা থেকেই এই চিন্তার উত্‍পত্তি৷ তবে, এটুকু বলতে পারি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নিইনি৷ আমার এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ আমি করেছি৷ আমার এলাকার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন৷ আমি তো আক্ষরিক অর্থেই একা৷ আমার কোনও শিবির নেই, মহল নেই৷ কেউ পছন্দও করেন না- খুব সঙ্গত কারণেই৷ আমার টাকাও নেই- এটাও আমার একটা বিরাট বড় সমস্যা৷ আমার শরীর একদম ভালো নেই৷ দেখা যাক...,' বলছেন কবীর৷

(ওএস/এইচ/মার্চ ১২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test