E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘গলুই’ সিনেমা বন্ধ হওয়ায় প্রতিবাদের ঝড়

২০২২ মে ১০ ১৭:১৭:৫৭
‘গলুই’ সিনেমা বন্ধ হওয়ায় প্রতিবাদের ঝড়

বিনোদন ডেস্ক : ঈদের দিন থেকে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার আশা সিনেমা হল ব্যতীত অন্য কোথাও কোনো হল না থাকায় ছবিটির পরিচালক এস এ হক অলিক পরিচালিত ‘গলুই’ সিনেমা বিভিন্ন অডিটোরিয়ামে ছবিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। এর মধ্যে ছিল জামালপুর শিল্পকলা একাডেমির নতুন অডিটোরিয়াম, জামালপুরের মাদারগঞ্জে নুরুন্নাহার মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম ও ইসলামপুরের ফরিদুল হক খান দুলাল অডিটোরিয়াম। উপচে পড়া দর্শকের ভিড় ছিল প্রদর্শনীগুলোতে।

পুরুষদের পাশাপাশি নারী দর্শকও দলবেঁধে ছুটে এসেছিলেন হলগুলোতে। হঠাৎ করেই ঘটলো বিপত্তি। শত বছরের পুরোনো একটি আইনের দোহাই দিয়ে জামালপুরে জেলা প্রশাসন সিনেমাটির প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দেয়।

এদিকে গলুই সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। অনেক নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলী সামিল হয়েছেন প্রতিবাদে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান লিখেছেন, ‘ইতো পূর্বে ছুঁয়ে দিলে মন ছবিটি কিন্তু দেশের বিভিন্ন জেলার শিল্পকলা একাডেমীসহ অডিটোরিয়ামে চলে ছিল ,তখন কোন সমস্যা হয়নি অথচ এখন কেন ‘গলুই’ সিনেমাকে বন্ধ করা হল? যেহেতু জামালপুরে কোন সিনেমা প্রক্ষাগৃহ নেই সেই জন্য সেখানকার অডিটোরিয়াম গুলোতে সরকারী অনুদানের ছবি ‘গলুই ’ কে পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশের বিভিন্ন জেলার অডিটোরিয়াম গুলোত চলচ্চিত্র প্রর্দশন করার অনুমতি দানের জন্য সম্মানিত তথ্য ও সম্রচার মন্ত্রী জ.হাছান মাহমুদ ও সম্মানিত তথ্য সচিব মকবুল হোসেন সাহেরের সহযোগিতা কামনা করছি।’

খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেখেন আমাদের এটাই প্রাপ্য। কারো সিনেমা আটকানো হলে আমরা বাকিরা যখন সেটা উপভোগ করি, রসালো গল্প তৈরি করে অনলাইনে ছাড়ি, তখন নানারকম বিধি নিষেধের গিলোটিন আমাদের ওপর নাজিল হবে না কাদের ওপর হবে? আমরা যখন এইসব করে বেড়াবো, ঠিক ঐ অবসরেই আইন করা হবে যে, ডিসি চাইলে এমন কি সেন্সর পাওয়া ছবিও আটকে দেয়া যাবে। বাই দ্য ওয়ে, জামালপুরের সিনেমার প্রদর্শনী কিন্তু কনটেন্টের জন্য বন্ধ করা হয় নাই। করা হইছে সিনেমা হলের বাইরে দর্শনীর বিনিময়ে সিনেমা দেখানোর অপরাধে। কিন্তু ডিসি চাইলে কনটেন্টের জন্যও সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ করতে পারেন, এমনকি সেন্সর হওয়ার পরও। নতুন নীতিমালাতে এটা ছাড়াও আরও ভয়াবহ আইন আছে।’

ফারুকী আরও লিখেছেন, “সুতরাং শিল্পীর স্বাধীনতা বিষয়ে আপনি মনে মনে অনেক কিছু প্রত্যাশা করতে পারেন। বাস্তবে আপনার হাত পা পুরাই বাঁধা! এই বিষয়ে সরকারের সাথে আমরা আমাদের নেগোসিয়েশন যথাযথ করতে পারি নাই। কেনো পারি নাই এটা সবাই নিজেদের প্রশ্ন করলে উত্তর পাইয়া যাবেন। এখন তাই কেবল নির্দোষ প্রেমের গল্প ছাড়া আপনার হাতে বানানোর মতো আর কিছু নাই। সেই নির্দোষ প্রেমের গল্পও অবশ্য ব্যান খাইতে পারে সামাজিক মূল্যবোধে আঘাত করার জন্য। যেরকম আমার ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ আর ‘ব্যাচেলর’ খাইছিলো কয়েক মাসের জন্য।’

পরিচালক দীপঙ্কর দীপন লিখেছেন, ‘জেলা শহরের সাংস্কৃতিক বিরোধ নিয়ে আমার ধারণা আছে। আমি আশা করি, ডিসির সিদ্ধান্তের পেছনে এমন কিছু নেই। থাকলেও সংস্কৃতির বিচারেই তার এই আচরণের প্রতিবাদ করি। আর এটা সম্পূর্ণ তার একক সিদ্ধান্ত হলেও অবাক হব না, এ নজিরও আমি দেখেছি। প্রতিবাদ প্রয়োজন। বিকল্প স্ক্রিনিং এ মুহূর্তে খুব দরকার।’

পরিচালক অপূর্ব রানা লিখেছেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুদান প্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘গলুই’ এর প্রদর্শনী বন্ধ করেছে জামালপুরের ডিসি মহোদয় !! করতেই পারেন সেটা তার নীতিমালার মধ্যে পড়লে। ঈদের চলচ্চিত্র গুলো যেখানে এই দুঃসময়ে কাটিয়ে চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচানোর চেষ্ঠা করছে সেখানে এই সামান্য অজুহাতে(শিল্প কলা একাডেমীতে সিনেমা প্রদর্শনী করা যাবেনা) প্রদর্শনী বন্ধ করা উচিত হয়েছে? প্রথমত এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান লিখেছেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প রক্ষায় শিল্পী পরিবারের সবাইকে এক হওয়া উচিত। গলুই চলচ্চিত্র দিয়ে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ১০৩ বছর আগের আইনের সামান্য একটি নজীর দেখিয়ে সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধ করা অবশ্যই অপরাধ, যাদের মধ্যে চলচ্চিত্র শিল্প সত্তা বিদ্যমান, যারা বাংলা চলচ্চিত্রকে মনেপ্রাণে লালন করেন, তাদের সবাইকে এর তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত।’

পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান মানিক লিখেছেন, ‘হল সংকট এর এই সময়ে, সিনেমা হল ব্যাতিত অন্য কোথাও বাণিজ্যিক ভাবে সিনেমা প্রদর্শন করা যাবে না এই আইন রহিত করা হোক। জামালপুর এর অডিটোরিয়াম গুলোতে, গলুই প্রদর্শন বন্ধ করার প্রতিবাদ জানাই।’

অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও অভিনেতা রওনক হাসান গলুই সিনোম বন্ধ হওয়ার নিউজ শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘যেখানে পর্যাপ্ত সিনেমা হল নেই সেখানে বিকল্প উপায়ে সিনেমা চালালে সেই প্রক্রিয়াকে প্রশাসনের সহায়তাই করা উচিত। যদি আইনি কোনো বিধিনিষেধ থাকে সেই আইনেরও সংশোধন হওয়া উচিত। বেশকিছুদিন আগে আরটিভি আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বলেছিলাম এটলিস্ট সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো ৬৪ জেলার ৬৪টি শিল্পকলা একাডেমিতে মুক্তি দেয়ার ব্যাবস্থা করলে সিনেমারই উন্নয়ন হবে। সেই বৈঠকে সরকারি এবং সিনেমা সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা সকলেই ছিলেন। সকলেই সাধুবাদ জানালেন এবং ঐপর্যন্তই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন কিন্তু সেই টাকা কোনো প্রক্রিয়ায় খরচ হবে। কিভাবে চলচ্চিত্রের উন্নয়ন হবে সে বিযয়ে আমাদের অগ্রজ নেতৃবৃন্দ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ এখনো কোনো রুপরেখা তৈরি করতে পেরেছেন বলে জানিনা! এইসকল বিষয়েও যদি সেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই হস্তক্ষেপ করতে হয় তবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। অবিলম্বে চলচ্চিত্র বান্ধব নীতিমালা প্রণয়নের জোর দাবী জানাচ্ছি। এদেশে সিনেমা বানানো অপরাধ, এটা আমরা বিশ্বাস করতে চাইনা। সকল প্রকার সংস্কৃতি চর্চাকে নিরুৎসাহিত নয় উৎসাহিত করুন।’

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী লিখেছেন, ‘১০৩ বছর আগের নীতিমালা দেখিয়ে জামালপুর শিল্পকলা অডিটরিয়াম গুলো থেকে ডিসির নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হলো ‘গলুই’ এর প্রদর্শনী। যে দেশে সিনেমা হল নেই সে দেশে সিনেমা কোথায় চালাবে।’

এছাড়া আরও অনেকেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। এদিকে এই প্রতিবাদ করায় ছবিটির পরিচালক এস এ হক অলিক ও নায়িকা পূজা চেরী সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

(ওএস/এসপি/মে ১০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test