E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘রায় কিছুটা সান্ত্বনার’

২০১৭ ডিসেম্বর ০৪ ১৩:১২:১৯
‘রায় কিছুটা সান্ত্বনার’

স্টাফ রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ বলেছেন, আমি তারেককে তো আর পাব না। তবে আজকে সান্ত্বনা পাচ্ছি। এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ক্যাথরিন মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, এত দিনের যন্ত্রণার পর এ রায়টা পেয়ে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পেয়েছি।

সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ মামলায় ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণার পর রবিবার এমন মন্তব্য করেন ক্যাথরিন মাসুদ। তিনি বলেন, প্রয়াত তারেক মাসুদের স্ত্রী বলেন, আমি তারেককে ফেরত পাব না। তবে আজকে আমি কিছুটা সান্ত্বনা পেয়েছি আমার সাত বছরের ছেলের জন্য, যে তার বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলে। সান্ত্বনা পাচ্ছি তারেকের মায়ের জন্য, যিনি বড় ছেলেকে হারিয়েছেন এবং সান্ত্বনা লাগছে হাজার মানুষের জন্য, যারা প্রতিদিন তাদের কাছের মানুষকে হারাচ্ছেন মর্মান্তিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায়।

তিনি বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে আইনগতভাবে স্বীকৃত হচ্ছে যে, এই তথাকথিত দুর্ঘটনা আসলে দুর্ঘটনা নয়। এই সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর পেছনে ড্রাইভারদের দায় আছে, কোম্পানির দায় আছে, বাস কোম্পানির দায় আছে, এমনকি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, তাদেরও দায় আছে।

এ আইনে প্রথম বারের মতো প্রতিকার পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আইনের অধীনে আমরা প্রথমবারের মতো প্রতিকার চেয়েছি। এখন থেকে আশা করছি নিয়মিতভাবে অনেকে ক্ষতিপূরণ পাবে। এটা আমার আন্তরিক বিশ্বাস যে, যদি আমরা সমাজ হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে বড় হতে চাই, তাহলে একটা ফেয়ার এন্ড জাস্টিস আইনের প্রক্রিয়া স্থাপন করতে হবে। যার মধ্য দিয়ে, যাদের শক্তি বেশি তাদের দায়বোধ করাতে পারব তাদের দায়িত্বহীন ও বেপরোয়া কাজের জন্য। আজকে একটা আইনের প্রক্রিয়ায় বড় পদক্ষেপে এগিয়ে আছি।

রায়ের পরে ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন বলেন, আমাদের দীর্ঘ পাচঁ বছর লড়াইয়ের আজকে সমাপ্তি টানা হলো। ক্ষতিপূরণ দাবি করে পাচঁ বছর আগে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, ছেলে নিশাদ মাসুদ, তারেক মাসুদের মা নুরুন্নাহার বেগম মামলা করেছিল। আজকে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে এ রায় পেয়েছি। রায়ে মর্মান্তিক এ মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদেরকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতি পূরণ দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে গাড়ির চালককে ৩০ লাখ, ইন্সুরেন্স কোম্পানিকে ৮০ হাজার টাকা বাদ বাকি টাকা গাড়ির মালিকদের দিতে হবে।

তিনি বলেন, এই ক্ষতিপূরনের টাকা আমরা কয়েকটি খাতে দাবি করেছিলাম। এক. তারেক মাসুদ তিনি সংসারের মূল উপার্জনকারী ছিলেন, দুই. পরিবার ও সন্তানেরা তার স্নেহ ভালবাসা হারিয়েছে তার মূল্য, তিন. ক্যাথরিন মাসুদ নিজে যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন তার ক্ষতিপূরণ এবং ওই দূর্ঘটনায় যে গাড়ি নষ্ট হয়েছে তারও ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছিল।তারই আলোকে আদালত আজ এ রায় দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ক্ষতিপূরনের দাবি সকলের জন্য থাকা উচিত। এর মাধ্যমে অন্যরাও ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। তবে আদালত এও বলেছেন, স্নেহ-ভালবাসা থেকে কেউ যদি বঞ্চিত হয়, তাহলে সবার জন্য একই মাপকাঠিতে ক্ষতিপূরণ দাবি করার অধিকার থাকবে। রায়ে আদালত গাড়ির চালকদের সতর্ক দিয়ে বলেছেন, গাড়ির চালকদেরও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিপূরণের দায় নিতে হবে। তা না হলে তারা সতর্ক হবেন না।

রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স কোম্পানির পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মো. মনির বলেন, এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পরে বিশ্লেষণ করে পরবর্তী আইনি (আপিলের বিষয়ে) পদক্ষেপ নেয়া হবে।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মনির। তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে তারেক মাসুদ ও মিশুক মনিরসহ মাইক্রোবাসের পাঁচ আরোহী নিহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।

২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মোটরযান অর্ডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাস মালিক, চালক এবং ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। পরবর্তীতে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন বাদীরা। নিম্ন আদালত থেকে মামলা দুটি স্থানান্তরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে ওই আবেদন দুটি করা হয়। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ এবং মিশুক মনিরের স্ত্রী কানিজ এফ কাজী ও তাঁদের ছেলে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর হাইকোর্টে ওই দুটি আবেদন করেন, যার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৩ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন।

রুলে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে, মামলা দুটি কেন উচ্চ আদালতে বদলি করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি মামলা দুটির নথি তলব করা হয়। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলা ও মোটর ক্লেইমস ট্রাইব্যুনালে করা মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির আবেদন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে বিচারপতি জিনাত আরার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য পাঠান প্রধান বিচারপতি।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test