E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খালেদার আইনজীবীদের ব্যর্থতা জানালেন অ্যাটর্নি জেনারেল

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ২৮ ১৭:৩০:০২
খালেদার আইনজীবীদের ব্যর্থতা জানালেন অ্যাটর্নি জেনারেল

স্টাফ রিপোর্টার : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় জামিন আবেদনের শুনানিতে বিএনপির আইনজীবীরা কোন দিকে ‘ব্যর্থ’ হয়েছেন সেটা জানিয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা মাহমুবে আলম। এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিএনপির আইনজীবীদের ভুল ছিল জানালেও কী সে ভুল সেটি প্রকাশ করেননি।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীর সংখ্যা অত্যাধিক এবং তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আবার তারা এতিমের টাকা আত্মসাতের কথা শুনলে ক্ষেপে যান। এটা পেশাদারিত্ব নয়। এসবের প্রভাব পড়েছে জামিনের বিষয়ে আদেশে।

বিএনপির আইনজীবীরা ‘ব্যর্থতার’ দায় রাষ্ট্রপক্ষের ওপর চাপাতে চাইছেন বলেও অভিযোগ করেন মাহবুবে আলম।

বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল গৃহীত হয়েছে গত ২২ ফেব্রুয়ারি। তিন দিন পর তার জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। দুদকের আইনজীবী এবং তার প্রবল বিরোধিতায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং সহিদুল করিমের বেঞ্চ মামলার নথি দেখে আদেশ দেয়ার কথা বলেছেন।

সেদিন খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি ‍মূলত খালেদা জিয়ার বয়স এবং শারীরিক সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দেননি।

খালেদা জিয়ার জামিন ঝুলে যাওয়ার পর সেদিন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা হতাশ হন। তারা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন। আবার আদালতে শুনানির পর সাংবাদিকদের সঙ্গে নিত্যদিন কথা বললেও সেদিন কোনো কথাই বলেননি।

আইনজীবীদের সূত্র বলছে, সেদিন এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতে জোরালো বক্তব্য রাখতে পারেননি বলে তার প্রতি ক্ষুব্ধ হন বিএনপির আইনজীবীরাই।

মঙ্গলবার রাজধানীতে এক আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘নিজের আইনজীবীদের ভুলের কারণে খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আইনি প্রক্রিয়ায় না লড়ে বরং সরকারকে দোষারোপ করে যাচ্ছেন।’

পরদিন সুপ্রিমকোর্টে সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘তারা আদালতের শৃঙ্খলা রক্ষায় সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের কোনো জবাব দেননি। তবে বিএনপির আইনজীবীদের ব্যর্থতা নেই, তাদের মধ্যে বিভেদও নেই।’

কিছুক্ষণ পর সাংবাদিকরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে গেলে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাদের ব্যর্থতার দায় আমাদের (রাষ্ট্রপক্ষ) ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কেন? এটা দুঃখজনক।’

‘খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে আমি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিইনি। আমি আদালতে আইনি যুক্তিতে কথা বলেছি।’

জামিন শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কী ব্যর্থতা ছিল- এমন প্রশ্নে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমি লক্ষ্য করেছি এ মামলার শুনানির সময় আইনজীবীদের মধ্যে কো-অপারেশনের (সমন্বয়) অভাব ছিল। একটি মামলায় এতো আইনজীবী থাকলে কো-অপারেশনের অভাব হয়।’

‘আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে তাদের আইনজীবীরা বক্তব্য দিয়েছেন, আমরাও বক্তব্য দিয়েছি। এখন আদালত মনে করলে তাকে জামিন দিতেও পারেন। তাদের আইনজীবীরা শুধু শুধু আমাদের দোষারোপ করছেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালতে এ মামলা শুনানির সময় এতিমের টাকা আত্মসাতের কথা আসলেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ক্ষেপে যান। তারা সহ্যই করতে পারেন না। কিন্তু আইনজীবীদের পেশাগত জায়গা থেকে তারা এটা করতে পারেন না।’

পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম এতিমদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি বলেও মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল গ্রহণ করে ১৫ দিনের মধ্যে মামলার নথি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিএনপির আইনজীবীদের অভিযোগ, আদালতের নথিপত্র বিলম্বে পাঠাতে যড়যন্ত্র চলছে। এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলন, ‘এটি অসত্য কথা।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, তিনি আশা করছেন খালেদা জিয়া ও অন্য আসামিদের দণ্ড আপিলেও বহাল থাকবে।

১৯৯১ সালে বিদেশ থেকে এতিমদের জন্য আসা দুই কোটি ১০ লাখেরও বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালে দুদকের করা মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে খালেদা জিয়ার। তার ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামির কারাদণ্ড হয়েছে ১০ বছরের। আর যত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, সেই পরিমাণ জরিমানা হয়েছে সবার।

এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে করা আপিল গ্রহণ হয়েছে ২২ ফেব্রুয়ারি। আর ৭ মার্চের মধ্যে মামলার নথিপত্র পাঠাতে বলা হয়েছে বিচারিক আদালতকে।

অ্যাটর্নি জেনারেল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে বলেছেন, আদালত চাইলে এই মাসেই আপিলের নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test