E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এনএসআইয়ের সাবেক ডিজিকে কারাগারে প্রেরণ

২০১৮ এপ্রিল ২৫ ১৬:০৩:৫৪
এনএসআইয়ের সাবেক ডিজিকে কারাগারে প্রেরণ

স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আগামী ১০ মে শুনানির পরবর্তি তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

বুধবার ট্রাইব্যুনালের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আমির হোসেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তবে ওয়াহেদুল হকের পক্ষে শুনানিতে কেউ অংশ নেননি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আমির হোসেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১০ মে শুনানির পরবর্তি তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে, এ সময়ের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতির জন্য ট্রাইব্যুনাল থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারির পর দুপুরে গুলশানের বারিধারার বাসা থেকে ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করা হয় বলে ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান।

তিনি বলেন, বারিধারার জে ব্লকের বাসা থেকে আসামি ওয়াহিদুল হককে গুলশান থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। আগামীকাল বুধবার তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।

ওয়াহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে দুই বছর পর তিনি পুলিশে যোগ দেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় দায়িত্ব পান এবং এরপর গত শতকের শেষ দিকে তিন বছর পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক ছিলেন।

তুরিন আফরোজ জানান, ‘পাকিস্তান আর্মির সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে হত্যা, গণহত্যা চালিয়ে ছিলেন আসামি মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক। পাকিস্তান আর্মির সাবেক সদস্য হিসেবে তাকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ওয়াহিদুল হককে মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এর পর তদন্ত শুরু হয়।’

১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাঁচ থেকে ছয়শ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালের ওপর মেশিন গানের গুলি চালিয়ে হত্যা ছাড়াও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের সঙ্গে আসামি ওয়াহিদুল হকের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, ‘আসামির বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। বারিধারার যে বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটিই তার বর্তমান ঠিকানা।’

জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে কমিশন পান। পরে তাকে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে বদলি করা হয়।

১৯৭০ সালের মার্চে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনা নিবাসে স্থানান্তরিত হলে ওয়াহিদুল হকও সেখানে চলে আসেন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত ওই রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট ছিলেন তিনি। ওই বছরই তিনি বদলি হয়ে আবার পাকিস্তানে (পশ্চিম পাকিস্তান) চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফেরেন ওয়াহিদুল হক। ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর তাকে বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ দেয়া হয়।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৭ সালে কুমিল্লার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ওয়াহিদুল। পরের বছর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলায় পুলিশ সুপারের দায়িত্বপালন করেন।

১৯৮৪-৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ওয়াহিদুল হককে পরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনএসআইর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করা হয়। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই দায়িত্ব শেষে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test