E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুর্ঘটনায় স্বজন পরিবহন, মৃত্যুতে দায় শমরিতার

২০১৮ অক্টোবর ১৫ ১৫:২৬:০০
দুর্ঘটনায় স্বজন পরিবহন, মৃত্যুতে দায় শমরিতার

স্টাফ রিপোর্টার : দুই বাসের প্রতিযোগিতার মাঝে পড়ে এক হাত হারিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হার মানা রাজীব হোসেনের মৃত্যুর জন্য শমরিতা হাসপাতালের অবহেলাকে দায়ী করেছে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি।

একইসঙ্গে এই দুর্ঘটনার জন্য প্রাথমিকভাবে স্বজন পরিবহনের চালককে দায়ী করা হয়েছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে দুই বাসের রেষারেষিতে কিভাবে হাত হারান রাজীব।

৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় সার্ক ফোয়ারার কাছে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন। বাসটি হোটেল সোনারগাঁওয়ের বিপরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে ঘেঁষে অতিক্রম করে। এ সময় দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এতে তার মাথায়ও প্রচণ্ড আঘাত লাগে। শমরিতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের ওই চালকদের ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স ছিল না।

এর আগে গতকাল (১৪ অক্টোবর) রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত কমিটি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে। গতকালও বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি হয়েছে। গতকাল শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়েছিল। তবে আজ আবার শুনানি শেষে আদেশের জন্য ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। আর আজকের শুনানিতেই শমরিতার অবহেলার বিষয়টি উঠে আসে।

হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আজ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে রুলের শুনানির জন্য দিন ঠিক করে দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া গতকাল যে প্রতিবেদন কমিটি দাখিল করেছেন সেই প্রতিবেদনের কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। উভয় চালক অর্থাৎ বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুই বাসের চালকদের সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স ছিল না। অর্থাৎ বড় গাড়ি চালানোর যে লাইসেন্স থাকার দরকার, সেটি ছিল না। তাদের হালকা যানবাহন চালনার লাইসেন্স ছিল। কমিটির প্রতিবেদনে আরেকটি বিষয় হচ্ছে- শমরিতা হাসপাতালকেও দায়ী করেছে। তারা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারেনি। তাদের কিছু অবহেলা রয়েছে। এই কমিটি জরিমানার পাশাপাশি সড়কে সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আনার জন্য কিছু সাধারণ পরামর্শ দিয়েছে প্রতিবেদনে। চূড়ান্ত রুল শুনানিতে এইসব বিষয় আসবে।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে চালকদের ট্রিপভিত্তিক গণপরিবহন চালানোর বিষয়টি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কমিটি ১৮ দফা সুপারিশ পেশ করেছে।

প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মাঝে পড়ে কীভাবে রাজিব হাত হারিয়েছেন সেই বিষয়টি এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এই দুর্ঘটনার জন্য কে দায়ী তাও চিহ্নিত করা হয়েছে।’

গত ৮ মে হাইকোর্ট এক আদেশে রাজীবের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন। পরে আপিল বিভাগ ওই আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। রাজীব হাসানের দুর্ঘটনায় দুই বাস কর্তৃপক্ষের দায় নির্ধারণ ও দায়ীদের ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে ৩০ মে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test