E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাহালমের মামলায় হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত

২০১৯ এপ্রিল ২৩ ১৬:৪৫:১৪
জাহালমের মামলায় হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার : বিনা অপরাধে দুর্নীতির ৩৩ মামলা কাঁধে নিয়ে তিন বছর কারাভোগের পর হাইকোর্টের আদেশে মুক্ত হওয়া টাঙ্গাইলের জাহালমের বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।

মঙ্গলবার দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা শুনানির ক্ষেত্রে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুদকের করা একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগে বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এই আদেশ দেন।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ এসেছে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। এর ফলে এ সংক্রান্ত মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তবে, জাহালমের জামিনের ক্ষেত্রে এই আদেশ কোনো সমস্যা হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার আপিল বিভাগের বিচারপতি নুরুজ্জামানের চেম্বার জজ আদালত এই আদেশ দেন।

এরআগে গত ১৭ এপ্রিল নিরীহ জাহালমের কারাভোগ নিয়ে দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন তলব করেন হাইকোর্ট। ২ মে পরবর্তী শুনানির নতুন তারিখ ঠিক করেছিলেন আদালত।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত জাহালমের ঘটনায় হাইকোর্টের জারি করা রুলসহ এই মামলার সমন্ত কার্যক্রম ১৩ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। ওই দিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ নিয়মিত বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য ঠিক করে দিয়েছেন আদালত।

আদালতে দুদকের পক্ষে আজ শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, জাহালম সংক্রান্ত একটি রিট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে শুনানি চলছে। আগামী ২ মে এটা শুনানির জন্য আছে। যেই বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন, সেই বেঞ্চে দুদকের মামলা শোনার এখতিয়ার নেই- এটি চ্যালেঞ্জ করে গত ২১ এপ্রিল আপিল বিভাগে আবেদন করেছি। আজ সেটির শুনানি হয়েছে চেম্বার আদালতে। সেখানে আমরা দেখিয়েছি যে, দুদকের মামলা শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ দেয়া আছে। কিন্তু যে বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছে এবং রুল শুনানি করছে ওই বেঞ্চের দুদক সংক্রান্ত কোনো কিছু শোনার এখতিয়ার নেই। আমরা আমাদের আবেদনের সমর্থনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায় দেখিয়েছি। সেখানে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বলেছিলেন যে, বিশেষ বেঞ্চকেই এসব মামলা শুনতে হবে। যেকোনো বেঞ্চ শুনতে পারবে না।

এতদিন যে আদেশগুলো হলো এগুলোর ফলাফল কী হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে দুদক আইনজীবী বলেন, ১৩ মে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হলে সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। আজকে আমরা স্থগিত চেয়েছিলাম, চেম্বার আদালত স্থগিত করেছেন। এই বেঞ্চ তো জাহালমকে জামিন দিয়েছে, সেটার কী হবে?

খুরশীদ বলেন, আমার মনে হয় এটার কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি কোর্টের এখতিয়ার নিয়ে। কী হবে সেটা ১৩ মে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে নির্ধারণ হবে। আমরা বলেছি যে বেঞ্চে স্বপ্রণোদিত রুল জারি করেছে...দুদক সংক্রান্ত, দুদকের জন্য বিশেষ বেঞ্চ আছে। দুদকের বেঞ্চে না হওয়াতে নিয়মিত আর কোনো বেঞ্চ এ আদেশটা দিতে পারেন না।

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে।

এ বিষয়ে জানুয়ারির শেষ দিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। সেটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।

এরপর ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে দুদকের ব্যাখ্যা জানতে কমিশনের চেয়ারম্যানের মনোনীত প্রতিনিধিসহ চারজনকে তলব করেন। কারাগারে থাকা ‘ভুল’ আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেয়া হবে না এবং তাকে মুক্তি দিতে কেন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বণোদিত একটি রুলও জারি করা হয়।

এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুঃখ প্রকাশ করে ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আদালতের আদেশে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।

পাটকল শ্রমিক জাহালমের তিন বছর কারাগারে থাকার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল কি না- তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দুদক। তবে, হাইকোর্টে দুদকের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন।

কিন্তু দুদকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে ৩৩টি মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্রসহ (সিএস) যাবতীয় নথি তলব করেন হাইকোর্ট। দুদকের কার্যক্রমে উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলে, ইঁদুর ধরতে না পারলে সেই বিড়ালের প্রয়োজন নেই।

জাহালম কেমন আছেন, কীভাবে জীবনযাপন করছেন- তার মুখ থেকে তা শুনতে তাকে আদালতে নিয়ে আসতে আইনজীবী অমিত দাস গুপ্তকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের এই বেঞ্চ। সে অনুযায়ী জাহালম ১৭ এপ্রিল আদালতে হাজিরও হয়েছিলেন।

কিন্তু দুদক এক মাসেও নথি দাখিল করতে না পারায় আগামী ২ মে পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করে দিয়ে ওই সময়ের মধ্যে ৩৩ মামলার নথি ও দুদকের প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিলেন আদালত।

পাশাপাশি আসামি না হয়েও জাহালমের কারাভোগের জন্য কে বা কারা দায়ী তা দেখতে দুদকের কাছে প্রতিবেদন চায় হাইকোর্ট। ওইদিনই আদালত জানায়, ২ মে দুদক তাদের প্রতিবেদন দিলে তখনই হাইকোর্ট জাহালমের মুখ থেকে তার কথা শুনবে।

এরপর দুদক গত ২১ এপ্রিল হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে চেম্বার আদালতে যায়। ওই আবেদনের শুনানি করেই মঙ্গলবার স্থগিতাদেশ দিলেন চেম্বারজজ আদালত।

এখন ওই বিষয়ে আর শুনানি হবে কি না সেটা নির্ভর করছে আপিল বিভাগের ১৩ মের আদেশের ওপর।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test