E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যুদ্ধাপরাধ : নেত্রকোনার দুইজনের মৃত্যুদণ্ড

২০১৯ এপ্রিল ২৪ ১৩:৪৮:৩০
যুদ্ধাপরাধ : নেত্রকোনার দুইজনের মৃত্যুদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার আটপাড়া থানার সোহরাব ফকিরসহ দুই রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সোহরাব ফকির ওরফে সোহরাব আলী ওরফে ছোরাপ আলী (৮৮) ছাড়া দণ্ডিত অপরজন হলেন শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার হেদায়েত উল্লাহ ওরফে মো. হেদায়েতুল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি (৮০)। তাদের বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ (বুধবার) এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আমীর হোসেন ও মো. আবু আহমেদ জমাদার।

দুই আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা সোহরাব আলী রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আরেক আসামি হেদায়েত উল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি পলাতক।

একাত্তরে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং আটপাড়ার মধুয়াখালী, মোবারকপুর ও সুখারী গ্রাম এবং মদন থানার মদন গ্রামে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান বলে উঠে এসেছে এই মামলার বিচারে।

২১৮ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত বলেছে, আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ছয়টি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি অভিযোগে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে। বাকি তিন অভিযোগের প্রত্যেকটিতে তাদের দশ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আঞ্জুর ভাই এনায়েত উল্লাহ ওরফে মঞ্জুকেও আসামি করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে তার নাম মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়।

পরে ওই বছরই কারাগারে থাকা সোহরাব ও পলাতক আঞ্জুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত। বিচার কাজ শেষে আদালত বুধবার তাদের দোষী বলে সাজার রায় দিল।

এই রায়ের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পাবেন আসামিরা। তবে, সে সুযোগ নিতে হলে পলাতক হেদায়েত উল্লাহকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বিশ্বের মানুষ এখন গণহত্যার বিরুদ্ধে সক্রিয় ও সচেতন। ট্রাইব্যুনাল আগেও উচ্চারণ করেছেন, এবারও উচ্চারণ করলেন- গণহত্যা আর না।’

অন্যদিকে আসমিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আব্দুস শকুর খান সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আর পলাতক যিনি আছেন তিনি যদি আদালত, রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন, তাহলে আশা করি দু’জনেই খালাস পাবেন।’

দুইজনের বিরুদ্ধে ৬ অভিযোগ

প্রথম অভিযোগ- একাত্তরের ২৯ মে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার মধুয়াখালী গ্রামে ২০-৩০টি ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং গণহত্যার সমতুল্য অপরাধ।

দ্বিতীয় অভিযোগ- একাত্তরের ২৩ অগাস্ট আটপাড়া থানার মোবারকপুর গ্রামের শহীদ মালেক তালকুদার ও কালা চান মুন্সীকে অপহরণ, হত্যা এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ।

তৃতীয় অভিযোগ- একাত্তরের ৩০ অগাস্ট জেলার মদন থানার মদন গ্রামের শহীদ হেলিম তালুকদারকে অপহরণ ও হত্যা এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ।

চতুর্থ অভিযোগ- একাত্তরের ৩ সেপ্টেম্বর জেলার আটপাড়া থানার সুখারী গ্রামের দীনেশ চন্দ্র, শৈলেশ চন্দ্র, প্রফুল্ল বালা, মনোরঞ্জণ বিশ্বাস, দুর্গা শংকর ভট্টাচার্য, পলু দে, তারেশ চন্দ্র সরকারকে অপহরণ, হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ এবং বেশ কিছু হিন্দু পরিবারকে দেশত্যাগে বাধ্য করা।

পঞ্চম অভিযোগ- একাত্তরের ২ সেপ্টেম্বর জেলার মদন থানার মাঝপাড়া গ্রামের হামিদ হোসেনকে অপরাহরণ ও নির্যাতন।

ষষ্ঠ অভিযোগ- একাত্তরের ৬ সেপ্টেম্বর জেলার মদন থানার মদন গ্রামের ১৫০-২০০টি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test