E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন ওসি মোয়াজ্জেম

২০১৯ জুলাই ১৭ ১৬:০২:২০
নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন ওসি মোয়াজ্জেম

স্টাফ রিপোর্টার : ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগ গঠন করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম। এসময় তিনি ওসি মোয়াজ্জেমকে জিজ্ঞেস করেন নুসরাতের ভিডিও ভাইরাল করার অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো। আপনি দোষী না নির্দোষ? 

এসময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ওসি মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমি নির্দোষ।’

বুধবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস সামশ জগলুল হোসেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনের ফলে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়েছে। এদিন কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

এসময় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী। অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

অভিযোগ গঠনের সময় তাকে দোষী না নির্দোষ জানতে চাইলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। অপর দিকে তার জামিন আবেদনও নামঞ্জুর করেন আদালত। সেইসঙ্গে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৩১ জুলাই দিন ধার্য করেন।

এর আগে ১০ জুলাই মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির না করায় অভিযোগ গঠন শুনানি পেছানোর আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। বিচারক সময় আবেদন মঞ্জুর করে ১৭ জুলাই অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য নতুন দিন ধার্য করেন।

আসামির আইনজীবী আদালতে আরও দুটি আবেদন করেন। প্রথমত, তিনি এজলাসে পুলিশের উপস্থিতিতে আসামির সঙ্গে আইনজীবীদের প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলার সুযোগ চান, দ্বিতীয়ত মামলার আর্জিতে বর্ণিত (সংযুক্ত) পেনড্রাইভের কপির জন্য আবেদন করেন। আদালত পেনড্রাইভের কপি সংযুক্তির আবেদন মঞ্জুর করলেও এজলাসে কথা বলার আবেদন মঞ্জুর করেননি।

গত ২৪ জুন জেল কোড অনুযায়ী, ওসি মোয়াজ্জেমের ডিভিশনের বিষয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। ১৭ জুন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস শামস জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

২৭ মে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত বাদীর আবেদন আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এদিন সকালে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদর দফতরের সিনিয়র এএসপি রিমা সুলতানা।

গত ১৫ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সুমন। আদালত তার জবানবন্দি নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এমন অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন।

মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছেন নুসরাত। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা এবং তা ভিডিও করেন। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন নুসরাতকে। নুসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নও করতে শোনা যায় ওসি মোয়াজ্জেমকে। অধ্যক্ষের নিপীড়নের ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

এরপর গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নুসরাতের।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test