E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাবলিক প্লেসসহ সব প্রতিষ্ঠানে ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার’ স্থাপনে রুল

২০১৯ অক্টোবর ২৭ ১৫:৪৮:৫৩
পাবলিক প্লেসসহ সব প্রতিষ্ঠানে ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার’ স্থাপনে রুল

স্টাফ রিপোর্টার : বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, হাসপাতাল, শপিংমলসহ জনসমাগম ঘটে এমন সব সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত জায়গায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে পাবলিক প্লেস ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনে নীতিমালা তৈরি করতে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে মন্ত্রিপরিষদ, সমাজকল্যাণ, স্বাস্থ্য, মহিলা ও শিশু, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব এবং বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।

এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলুরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রিটকারী শিশু উমাইর বিন সাদীর মা ইশরাত হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। সঙ্গে ছিলেন রাশেদুল হাসান ও জামিউল হক ফয়সাল।

গত ২৪ অক্টোবর নয় মাস বয়সী শিশু উমাইর বিন সাদীর পক্ষে তার মা রিটটি দায়ের করেন। রিট আবেদনে সুপ্রিম কোর্ট, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের সব কর্মস্থল, শপিংমল, বিমানবন্দর, বাসস্টেশন, রেলস্টেশনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন ও নিরাপদ পরিবেশ এবং স্বাচ্ছন্দ্যে শিশুদের মায়ের দুধ পান করাতে নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রিট আবেদনে বলা হয়, এমন পরিবেশে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করতে হবে, যেখানে কোনো মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে কোনো অস্বস্তি বোধ করবে না বা যৌন হয়রানির শিকার হবেন না। সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এ প্রথম কোনো শিশুর পক্ষে রিট পিটিশন হলো। তবে রিটের জন্য আগে আদালতের অনুমতি নিতে হয়েছে।

রিট দায়েরের পর শিশু উমাইরের মা জানিয়েছিলেন, অনেক কর্মস্থলে বা বাস, ট্রেনস্ট্রেশনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার না থাকায় মায়েদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নিরাপদ পরিবেশের অভাবে ও যৌন হয়রানির ভয়ে মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ পান করাতে পারেন না। অথচ একজন শিশুর মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি এবং পুষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মায়ের বুকের দুধ। আমার মতো হাজার হাজার মা এ সমস্যার সম্মুখীন হন। রিট আবেদনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা-সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দর, সুস্থ ও সবলভাবে শিশুকে বেড়ে তুলতে এবং নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে সরকারি-বেসকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ডে কেয়ার সেন্টার ও মাতৃদুগ্ধ দানকক্ষ স্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

এরপর নয় বছর অতিবাহিত হলেও এক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি। বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্রে কর্মজীবী মায়েদের জন্য নেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার । প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে, কর্মক্ষেত্রে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে যেন একজন কর্মজীবী মা সমর্থ হন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বীমা-ব্যাংক, শপিংমল, কল-কারখানা, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালসহ অফিস, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান এবং শপিংমলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়নি। ফলে একদিকে যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ পান কর্মসূচি অন্যদিকে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের জন্য বলা হলেও মানছে না অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মা যদি কর্মস্থলে শিশুকে তার চাহিদা অনুযায়ী বুকের দুধ ও ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার খাওয়াতে পারেন তার সুফল অনেক। সবচেয়ে বড় সুফল শিশুর সুস্থতা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে এক জরিপে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের এক-তৃতীয়াংশ শিশু খর্বকায়, আর ৩৩ শতাংশ শিশুর ওজন কম, ১৪ ভাগ শিশু কৃশকায় (লম্বার তুলনায় ওজন খুবই কম)। এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিংয়ের যে হার ১০০ ভাগ হওয়ার কথা, সেখানে আমাদের রয়েছে ৫৫ শতাংশ। শিশুর পুষ্টিমান নিশ্চিতে সব জায়গায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার চালু হওয়া প্রয়োজন।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test