E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হলি আর্টিসান হামলার বিষয়ে যা বললেন আসামি জাহাঙ্গীর

২০১৯ অক্টোবর ৩০ ১৮:২২:৪৯
হলি আর্টিসান হামলার বিষয়ে যা বললেন আসামি জাহাঙ্গীর

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন আসামিরা।

বুধবার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য আগামী ৬ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়। এদিন আসামি জাহাঙ্গীর আলম ও বড় মিজান আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন। লিখিত বক্তব্য দেন বাকি ছয়জন। মামলায় ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ২০০২ সালে জেএমবিতে (জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) যোগদান করি। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব পালন করি ২০১৪ সাল পর্যন্ত। ২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ায় খেলাফত ঘোষণা করলে তামিম চৌধুরী ও সারোয়ার জাহান মানিকের মাধ্যমে আনুগত্য স্বীকার করি। ২০১৪ সালের পর আমাকে তামিম চৌধুরী ও সারোয়ার জাহান মানিক উত্তরবঙ্গের সামরিক শাখার প্রধান বানিয়ে দেন।’

তিনি আরও বলেন, এরপর থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করি। জাপানি নাগরিক হিশোতিকে হত্যা করি। কুড়িগ্রামে মুসলমান থেকে খ্রিষ্টান হওয়ায় হোসেন আলীকে হত্যা করি। এছাড়া এমন বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করি। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি উত্তরবঙ্গের দায়িত্ব পালন করি।

জাহাঙ্গীর বলেন, ২০১৬ সালের ১ মার্চ মারজান থ্রিমা অ্যাপের (একটি নিরাপদ মেসেজিংয়ের অ্যাপ্লিকেশন) মাধ্যমে ফুড ভিলেজে আসতে বলেন। বিকেল চারটায় সেখানে উপস্থিত হয়। ওই দিন মারজান শফিকুল ইসলাম ও রোহান ইমতিয়াজ স্বপন নামে দুজন ব্যক্তিকে দেন। এদের নিয়ে কয়েকটা অভিযান পরিচালনা করি।

২০১৬ সালের ৫ মে সিরাজগঞ্জের হানিফ হোটেলে আসতে বললে আমি বিকেল ৩টায় সেখানে পৌঁছায়। সেখানে তিনজন ব্যক্তিকে নিয়ে আসতে বললে আমি তাদের নিয়ে আসি। স্বপন, খাইরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম উজ্জলকে নিয়ে মেজর জাহিদ চলে যান। আমার জানা মতে গুলশান হামলায় যারা জড়িত ছিলেন তাদের প্রশিক্ষণ দেন তারা। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ তামিম চৌধুরী থ্রিমা অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকার চিড়িয়াখানায় আসতে বললে আমি সেখানে পৌ‌ঁছায়। তামিম, মানিক, চকলেট, মারজান, নাঈম, তারেক তাওসিফকে সেখানে দেখতে পাই।

তামিম তখন আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন তিনি। সারোয়ার তাওসিফকে কিছু গ্রেনেড তৈরি করতে বলেন তামিম। চকলেট, নাইম ও তারেককে বোমা সরবরাহ থেকে শুরু করে সব দায়িত্ব প্রদান করেন। এরপর আমি সেখান থেকে চলে যাই। উত্তরবঙ্গে বেশকিছু অভিযান পরিচালনার কারণে আমাকে প্রশাসন খুঁজছিল। তখন তামিম ভাইকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাকে ঢাকায় আসতে বলেন। বিকেল তিনটায় কল্যাণপুর হানিফ কাউন্টারে পৌঁছ‌ালে বাশিরুজ্জামান চকলেট আমাকে রিসিভ করেন। তখন আমাকে বসুন্ধরার বাসায় নিয়ে যান তারা।

বাসায় ঢুকতেই মানিক, তামিম চৌধুরী, তানভীর কাদেরি, তার দুই ছেলে, চকলেট, স্বপন, খাইরুল ইসলাম, উজ্জল, মোবাশ্বের ও নিবরাসকে দেখতে পাই। পরের দিন মারজান ওই বাসায় চলে আসেন। তারা বিভিন্ন সময় মিটিং করতে থাকেন। মাঝেমধ্যে আমাকে মিটিংয়ে ডাকতেন। ২০ মার্চ যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারা সরঞ্জাম সরবরাহ শুরু করে। সেগুলো সংগ্রহ করে বসুন্ধরার বাসায় নিয়ে আসেন। চকলেট অস্ত্র নিয়ে আসেন এবং তারেক ও নাঈম নিয়ে আসেন গ্রেনেড। আমি, স্বপন, পায়েল ও শফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করি কোথাও কি বড় হামলা হবে? তারা বলে আমরা সঠিক জানি না। ২৭ জুন তাদের আবার এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি, তখন তারা বলে তামিম চেধুরী আমাকে বেশকিছু জায়গা দেখতে বলেছেন।

তখন তামিম আমাকে বলেন, আপনি ১ জুলাই বাসা থেকে চলে যাবেন। তখন পর্যন্ত তামিম, মারজান, মানিক ছাড়া কেউ জানতেন না কোথায় হামলা হবে। ১ জুলাই সকাল ৮টায় খাইরুল ইসলাম ও বাধন আমাকে বলেন ঢাকায় হামলা হবে। কোথায় হামলা হবে তা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। এরপর তামিম ও মানিক আমাকে বলেন, যেখানে ছিলেন সেখানে চলে যান। আমাকে ভাইদের জন্য দোয়া করতে বলেন। কোনো সময়ের জন্য যেন মোবাইল বন্ধ না হয় সে কথা বলেন।

জাহাঙ্গীর বলেন, ১ জুলাই বেলা ১১টার দিকে আমি ওই বাসা থেকে সিরাজগঞ্জে চলে যাই। থ্রিমা অ্যাপের মাধ্যমে সন্ধ্যা সাতটায় খবর দেখতে বলেন। আমাকে বলেন, ভাইদের জন্য দোয়া করতে থাকেন, যেন তাদেরকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেন।

৩ জুলাই তামিম ও মারজান আমাকে মিরপুর ১০ এ ডেকে ৫০ হাজার টাকা দেন। ১০ জুলাই উত্তরবঙ্গের দায়ী বিভাগের প্রধান রমজানকে আমি ঢাকায় ডাকি। তাকে কল্যাণপুরে রিসিভ করতে গিয়ে কাউন্টার টেরোরিজমের হাতে ধরা পড়ি।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।

২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। একই বছর ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

মামলার আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‍্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। এছাড়া বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।

হলি আর্টিসানে সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত পাঁচ হামলাকারী হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

এছাড়া এ মামলায় আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলেন- তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ৩০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test