E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সাগর-রুনির মামলায় র‌্যাবের অবস্থান কিছুটা ম্লান হতে পারে

২০১৯ নভেম্বর ১৪ ১৮:১৮:২৫
সাগর-রুনির মামলায় র‌্যাবের অবস্থান কিছুটা ম্লান হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার : সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায় কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার জন্য মামলার তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি জানানোর জন্য ২০২০ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ফৌজধারী কার্যবিধি ১৭৩ অনুযায়ী মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামি তানভীরকে বিচারিক আদালতে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

আদালতের পর্যবেক্ষণে হতাশা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও তদন্তের মাধ্যমে এ মামলার রহস্য উদঘাটিত না হওয়া এবং অপরাধীদের চিহ্নিত, গ্রেফতার এবং বিচারের সম্মুখিন না করতে পারা নিঃসন্দেহে দুঃখ ও হতাশার বিষয়।

হাইকোর্ট র‌্যাবকে অভিজাত বাহিনী ইঙ্গিত করে বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর, অভিজাত (এলিট) ও চৌকস বাহিনী হিসেবে খ্যাত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), দেশে জঙ্গি সন্ত্রাস মাদক, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার, ভেজাল প্রতিরোধসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অনন্য সফলতা কিছু হলেও ম্লান হবে, যদি এ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের চিহ্নিত এবং গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করতে না পারে।

হাইকোর্ট বলেন, আদালত প্রত্যাশা করে যে, র‌্যাব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে হত্যার রহস্য উন্মোচন ও প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত এবং গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করতে সক্ষম হবে। বিশেষায়িত এ বাহিনীর ব্যর্থতার দায়ভার বহন করুক এটা কারো কাম্য নয়।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। আসামি তানভীরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আদালত আসামি তানভীরের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।

এর আগে গত ১১ নভেম্বর সাগর-রুনি দম্পতি হত্যার আলামত ডিএনএ টেস্ট করতে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছেন মামলার (আইও) তদন্ত কর্মকর্তা খন্দকার সফিকুল আলম। মামলার তদন্তের কোনো অগ্রগতি তার হাতে ছিল না বলে জানান তিনি।

সেদিন হাইকোর্টের তলবে তদন্ত কর্মকর্তা খন্দকার সফিকুল আলম আদালতে উপস্থিত হয়ে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে বলেন, যেসব আলামত জব্দ করা হয়েছে সেসব আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে।

গত ২০ অক্টোবর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী মামলার সিডিসহ তদন্ত কর্মকর্তা (১১ নভেম্বর) আদালতে হাজির হন।

পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ আট বছরে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে এসেছে। আদালত বলেছেন, তদন্ত শেষ হবে কবে? তদন্ত কি অনন্তকাল ধরে চলবে। শুনানি নিয়ে আদালত তানভীরের ক্ষেত্রে মামলাটির কার্যক্রম কেন বাতিল করা হবে না -এ মর্মে রুল দিয়েছেন।

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় গ্রেফতারের ২৬ মাস পর জামিনে কারাগার থেকে বরে হন তানভীর রহমান। তানভীরের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে। তিনি ঢাকায় উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে থাকেন। তানভীর রহমান ২০১২ সালের ১ অক্টোবর তার কর্মস্থল স্কলাসটিকা স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন।

এ ঘটনায় উত্তরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার। এরপর ৯ অক্টোবর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে জানান, সাগর-রুনি হত্যা মামলায় তানভীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে ২০১৪ সালে হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। একই বছরের ডিসেম্বরে তিনি মুক্তি পান।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়াবাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাগর তখন মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। হত্যাকাণ্ডে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এ মামলায় মোট আটজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, সাগর-রুনির ভাড়াবাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল, পলাশ রুদ্র পাল এবং নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান।

তাদের মধ্যে প্রথম পাঁচজনই মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যার ঘটনায় র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হন। প্রথম পাঁচজন ও নিরাপত্তারক্ষী এনামুল এখনও এ মামলায় কারাবাস করছেন।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test