E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হলি আর্টিসানে হামলায় সাত আসামির মৃত্যুদণ্ড

২০১৯ নভেম্বর ২৭ ১৫:১১:১৫
হলি আর্টিসানে হামলায় সাত আসামির মৃত্যুদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বুধবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, মো. হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুল সবুর খান, শরিফুল ইসলাম খালেক ও মামুনুর রশীদ রিপন।

আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, ‘জাহাঙ্গির হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, মো. হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুল সবুর খান, শরিফুল ইসলাম খালেক ও মামুনুর রশীদ রিপনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৬ (২) (অ) ধারায় দোষীসাব্যস্ত করা হলো এবং তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হলো।’

আদালত রায়ে আরও উল্লেখ করেন, ‘আসামি জাহাঙ্গির হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুল সবুর খান ও শরিফুল ইসলাম খালেককে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৭ ধারায় দোষীসাব্যস্তক্রমে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। অনাদায়ে আরও দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হলো।’

আদালত বলেন, ‘আসামি জাহাঙ্গির হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, মো. আব্দুল সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, শরিফুল ইসলাম খালেক ও মামুনুর রশীদ রিপনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৮/৯ ধারায় দোষীসাব্যস্ত করা হলো। এবং উক্ত আইনের ৮ ধারায় প্রত্যেককে ছয় মাসেন সশ্রম কারাদণ্ড এবং উক্ত আইনের ৯ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। এবং অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হলো।’

‘আসামি মামুনুর রশীদ রিপনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৭ ধারায় অভিযোগ, আসামি মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৬ (২) (অ)/৭/৮/৯/১০/১১/১২/১৩ ধারার অভিযোগ এবং আসামি জাহাঙ্গির হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান, মো. হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, শরীফুল ইসলাম খালেক ও মামুনুর রশীদ রিপনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ১০/১১/১২/১৩ ধারার অভিযোগ হতে বেকসুর খালাস প্রদান করা হলো।’

‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ এ ধারা মতে আসামিদের বিচারকালীন হাজতবাস দণ্ডাদেশ হতে কর্তন হবে। দণ্ডপ্রাপ্ত হাজতি আসামিগণের বিরুদ্ধে সাজাপরোয়ানা ইস্যু করা হোক। জব্দকৃত অস্ত্রগুলো রাষ্ট্রীয় অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হলো এবং ধ্বংসযোগ্য আলামত বিধি মোতাবেক বিনষ্ট করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

‘মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অনুমোদনের জন্য অত্র মামলার নথি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে প্রেরণ করা হোক। অত্র রায়ের অনুলিপি বিজ্ঞ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা বরাবর প্রেরণ করা হোক।’

আদালত রায়ে আরও উল্লেখ করেন, আসামি জাহাঙ্গির হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুল সবুর খান ও শরিফুল ইসলাম খালেককে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৭ ধারায় দোষীসাব্যস্তক্রমে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। অনাদায়ে আরও দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হলো।

এর আগে আদালতে তোলার সময় আসামি আসলাম হোসেন সরদার ভি চিহ্ন দেখান। তাদের মধ্যে অধিকাংশের মুখেই হাসি ছিল। আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীও হাসিমুখে ছিলেন।

এদিকে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এ জঙ্গি হামলার মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত পাড়াসহ রাজধানী ঢাকা ও সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আদালত চত্বর ও এর আশপাশ এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারিতে রেখেছেন।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে পুলিশ।

গত ১৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা জন্য আজ ২৭ নভেম্বর (বুধবার) দিন ধার্য করেন।

মামলা দায়ের করার পর ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। একই বছর ২৬ নভেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত আট আসামি ছাড়াও বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।

এছাড়া হলি আর্টিসানে সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত পাঁচ হামলাকারী হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

আলোচিত এ মামলায় আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে আটজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test