E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল

২০২০ জানুয়ারি ১৪ ১২:৫৪:৫৩
কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল

স্টাফ রিপোর্টার : মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ অঞ্চলে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

কায়সারের আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে বলেন প্রধান বিচারপতি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি নবম মামলা। আজ রায়ের মাধ্যমে এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো।

তার বিরুদ্ধে আনীত ১৪ অভিযোগের সাতটিতে মৃত্যুদণ্ড, পাঁচটিতে যাবজ্জীবন, একটিতে ১০ বছর ও আরেকটি পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাত অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন, বাকি চারটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন-বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুরাদ রেজা ও মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, সাঈদা খাতুন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি।

এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও মনুয়ারা বেগম। এ ছাড়াও প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, জেয়াদ আল মালুম, রেজিয়া সুলতানা চমন, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল।

অন্যদিকে কায়সারের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন উপস্থিত না থাকলেও, অপর আইনজীবী এস এম মো. শাহজাহান, অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির ও ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সৈয়দ কায়সারের দুই ভাই সৈয়দ সেলিম কায়সার ও সৈয়দ শাহজাহান কায়সার উপস্থিত থাকলেও আজ পরিবারের কোন সদস্য উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান আইনজীবী এস এম শাহজাহান।

এস এম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে পুর্নবিবেচনা (রিভিউ) আবেদন করা হবে। তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের জানান, যে চার মৃত্যুদণ্ড থেকে কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে আপিল বিভাগের রায় প্রকাশ পাওয়ার পর তা দেখে সেগুলোতে (তদন্ত সংস্থা) আমরা রিভিউ করব।

এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর কায়সারের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে করা আপিলের ওপর রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।

এর আগে গত ২৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে শেষ হয় ৩ ডিসেম্বর। তারও আগে গত ৩০ অক্টোবর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কায়সারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন।

আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনালে কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ২০১৫ সালে। আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায়ের এক মাসের মধ্যে খালাস চেয়ে আপিল করে আসামিপক্ষ।

২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়। সৈয়দ কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন আপিল আবেদনটি করেন। আপিলে খালাসের আরজিতে ৫৬টি যুক্তি তুলে ধরা হয়। ৫০ পৃষ্ঠার মূল আপিলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত করা হয়।

এরপর ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট এক আদেশে আপিল বিভাগ আপিলের সার সংক্ষেপ দাখিলের নির্দেশ দেয়। ওই বছর ১০ অক্টোবর শুনানি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনে তা পিছিয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার পর গত ১০ জুলাই সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ৩ ডিসেম্বর তা রায়ের পর্যায়ে আসে।

২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে অপরাধ সংঘটিত করেন হবিগঞ্জ মহকুমার রাজাকার কমান্ডার ও শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার।

২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তাকে সর্বোচ্চ সাজাসহ ২২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে ১৫২ জনকে হত্যা-গণহত্যা, দুই নারীকে ধর্ষণ, পাঁচজনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় এবং দুই শতাধিক বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ষড়যন্ত্রের ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ১৪টিই প্রমাণিত হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো অন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে ফাঁসির দণ্ড পান কায়সার। সাঁওতাল নারী হীরামনি ও অপর নারী মাজেদাকে ধর্ষণের অপরাধ দুটি প্রমাণিত হয়।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test