E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

একাত্তরে ধর্ষণের দায়ে প্রথম মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাপার কায়সার

২০২০ জানুয়ারি ১৪ ১৪:১২:১৩
একাত্তরে ধর্ষণের দায়ে প্রথম মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাপার কায়সার

স্টাফ রিপোর্টার : মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মো. কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে ধর্ষণের দায়ে আসামি কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিষয়ে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি ঐক্যমত ছিলেন। তবে রায়ে যাবজ্জীবন ও অন্যান্য দণ্ড হলেও সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের সাজা পাওয়ায় কারাদণ্ডের সব সাজা মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ধর্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায়ে আসামি কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এর ফলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় ধর্ষণের দায়ে প্রথম কোনো আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো।

এর আগে ধর্ষণের দায়ে ট্রাইব্যুনালের তিনটি পৃথক মামলায় জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং পলাতক বিএনপি নেতা এম এম জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন রাজাকারকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।

অন্যদিকে জামায়াতের সাবেক নেতা পলাতক আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলেও অন্য অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় ধর্ষণের সাজা আলাদা করেননি আদালত।

ট্রাইব্যুনাল তখনকার সময় মতামত দিয়েছিলেন, সরকারের উচিত মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার নারী ও যুদ্ধশিশুদের যথাযথ সম্মান দেখিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

কায়সারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের দুটিসহ সাতটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। বাকি সাতটি অভিযোগের মধ্যে চারটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড, একটিতে ১০ বছর, একটিতে সাত বছর ও একটিতে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এরশাদ সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রী কায়সার ২০১৩ সালের ২১ মে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিচারের প্রায় পুরো সময় তিনি জামিনে ছিলেন। পরের বছরের ২ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছরের ৯ মার্চ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলে।

রাষ্ট্রপক্ষের ৩২ জন সাক্ষীর মধ্যে প্রথমবারের মতো একজন যুদ্ধশিশু ক্যামেরা ট্রায়ালে (সাক্ষীর পরিচয় গোপন করে শুনানি) সাক্ষ্য দেন। ২০ আগস্ট মামলার কার্যক্রম শেষে রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয়। রায় ঘোষণার পর তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

ট্রাইব্যুনালে যে সাত অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, তা হলো- ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৮ ও ১২ নম্বর অভিযোগ ধর্ষণের এবং ১৬ নম্বর অভিযোগ ২২ গ্রামের ১০৮ জনকে হত্যা ও নিপীড়নের।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে তার বিরুদ্ধে ৫, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত এবং ধর্ষণের রায়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা।

অষ্টম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১১ মে কায়সারসহ একদল পাকিস্তানি সেনা হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার চাঁনপুর চা-বাগানে এক সাঁওতাল নারীকে ধর্ষণ করে। ১২ নম্বর অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি কায়সারের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্য ও কয়েকজন রাজাকার মাধবপুর থানার জগদীশপুর পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে এক নারী, তার বাবা ও এক চাচাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ওই নারীকে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে হস্তান্তর করা হলে ৮-১০ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়।

১৬ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর কায়সারের নেতৃত্বে তার বাহিনী, শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকাররা এবং পাকিস্তানি সেনারা যৌথভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার দেউড়া, নিশ্চিন্তপুরসহ ২২ গ্রামে হামলা চালিয়ে ১০৮ জন নিরস্ত্র হিন্দুকে হত্যা করে।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে ৩, ৫, ৬ ও ১০ নম্বর অভিযোগে কায়সারের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এগুলোতেও মৃত্যুদণ্ড দেন। আপিল বিভাগ ৬, ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড থেকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয়।

সাত অভিযোগে কারাদণ্ড

হত্যা, নির্যাতন ও লুণ্ঠনের চারটি অভিযোগ ১, ৯, ১৩ ও ১৪ নম্বরে কায়সারকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। দ্বিতীয় অভিযোগে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের দায়ে কায়সারকে ১০ বছর, সপ্তম অভিযোগে অমানবিক আচরণের দায়ে সাত বছর ও ১১ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।

দুই অভিযোগ থেকে খালাস

হত্যা ও নির্যাতনের ৪ ও ১৫ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় কায়সারকে খালাস দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রতিক্রিয়া

রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত ও জেয়াদ আল মালুম। তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণের শিকার নারী ও যুদ্ধশিশু যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সে অনুসারে কায়সারের বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণা সঠিক হয়েছে।

কায়সারের আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেছেন, ‘আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের রিভিউ করার সুযোগ আছে। তাই উচ্চ আদালতের আপিলের রায় প্রকাশ পাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করব।’

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test