E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নামের মিলে জেলের ঘানি, ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

২০২০ জুন ০৩ ১৪:৪৬:২০
নামের মিলে জেলের ঘানি, ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার : শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় একজনের অপরাধে আরেকজনকে জেলে দেয়ার ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাপাইনবাবগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি শেষে বুধবার (৩ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

‘এক রুবেলের বদলে জেলে আরেক রুবেল’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। পরে আদালত বিষয়টি দেখে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, একটি দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনি। আদালত শুনানি নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রকাশিত খবরটি বিবেচনায় নিয়ে চাপাইনবাবগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন।

পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কালুপুর সেতুর কাছ থেকে গাঁজা সেবনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল পাঁকা ইউনিয়নের চরপাঁকা কদমতলা গ্রামের মন্টু আলীর ছেলে রুবেল আলী ওরফে রুবেল বাবুলকে (২৬)।

ওইদিনই এসআই আবদুস সালাম রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৬ ধারায় মামলা করেন (মামলা নং-১৫)। পরে তাকে জেলে পাঠানো হয়। ৫ দিন পর রুবেল মুক্তি পান। তিন দফা আদালতে হাজিরাও দেন। পরে হঠাৎ তিনি উধাও হয়ে যান।

ওই বছর ১০ জুলাই এসআই আব্দুস সালাম আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর পরোয়ানাটি দীর্ঘসময় পড়ে ছিল শিবগঞ্জ থানায়।

অবশেষে গত ১০ মার্চ রাতে ওই পরোয়ানামূলে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ পাশের জামাইপাড়া গ্রামের মো. মন্টুর ছেলে মো. রুবেলকে (২৩) সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন। গ্রামের নাম আলাদা হলেও আসামি ও তার বাবার নামে মিল থাকায় একজন নিরপরাধ অসুস্থ ব্যক্তিকে আড়াই মাস ধরে জেল খাটতে হচ্ছে।

নিরপরাধ রুবেলের বাবা মো. মন্টু ও এলাকাবাসী বলেছেন, রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে ভবন থেকে পড়ে কয়েক বছর আগে বন্দী রুবেলের দুই পা ভেঙে যায়। দুই বছর বিছানায়ই ছিলেন তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসার পর কিছুটা হাঁটতে পারলেও বাম পায়ে শক্তি নেই আজও।

অভাবের তাড়নায় সে জামাইপাড়ায় পাঁকা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আতাউর রহমানের গ্রামের ফাঁকা বাড়িতে থেকে বাড়ি দেখাশোনা করতেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। অপরদিকে মামলার মূল আসামি রুবেল আলী বছরখানেক আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন।

তার বাবা মন্টু আলী বলেন, বছরখানেক আগে রুবেল গ্রাম ছাড়েন, ঠিক কোথায় গেছেন তা জানি না। তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই আমাদের।

তবে অনেক চেষ্টার পর মূল আসামি রুবেল আলীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাকে কয়েক পুরিয়া গাঁজাসহ ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল ধরেছিল শিবগঞ্জ থানার এক কনস্টেবল। পরে এসআই আবদুস সালামের কাছে নিয়ে যায়। পরে মামলা হালকা করার জন্য সোনা মিয়া নামের একজন দালালের মাধ্যমে আমার কাছ থেকে ২৬ হাজার টাকা নেয় পুলিশ। পরে ওই সোনা মিয়াই উকিল ধরে আমার জামিন করান। আমাকে বলা হয়েছিল মামলাটি আর নেই। এর পর আর খোঁজ করিনি।

জানতে চাইলে পাঁকা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তরিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার হওয়া মো. রুবেল কিছুটা অসুস্থ ও স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে গ্রেফতার করার দিন আমরা বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে জানাজানি হয় যে, এই রুবেল আসল রুবেল নয়। শুধু নিজের আর বাবার নামের মিল থাকায় পুলিশ নির্দোষ রুবেলকে গ্রেফতার করেছে। সঠিকভাবে যাচাই করলে এই ভুল হত না।

শিবগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আনাম মোল্লাহ বলেন, তাকে গ্রেফতারের সময় এলাকার তিনজন গ্রামপুলিশও ছিল। তারাও কিছু বলেনি। তাকে থানায় আনার পরও প্রকৃত তথ্যটি কেউ জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারতাম।

এক রুবেলের বদলে আরেক রুবেলকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামসুল আলম শাহ বলেন, মনে হচ্ছে গ্রেফতারের সময় তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। এখন নিশ্চিত হয়েছি আপনারা জানানোর পর। কীভাবে নির্দোষ রুবেলকে বের করা যায় আমরা সেটা ভেবে দেখছি।

(ওএস/এসপি/জুন ০৩, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test