E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অর্থ পাচারকারীদের পরিচয় জানতে চান হাইকোর্ট

২০২০ ডিসেম্বর ১৭ ১৫:১৭:৩৮
অর্থ পাচারকারীদের পরিচয় জানতে চান হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার : বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে পরবর্তী তথ্য জানাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

অর্থ পাচার বিষয়ে দুদকসহ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রতিবেদন দাখিলের পর বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আরও শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে জমা দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রের অন্যান্য পক্ষ। এ সময় প্রতিবেদনে পুরনো তথ্য থাকায় দুদকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আদালত।

এসব প্রতিবেদন দেখে আদালত বলেছেন, ‘এখানে ২২ অক্টোবরে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের পরের কোনো আপডেট তথ্য নেই। তাই আদালত বলেছেন, আমরা অর্থ পাচারকারীদের নাম জানতে চাই। আপনারা নতুন নাম বলুন। সম্রাটতো কারাগারেই আছেন, আর নতুন করে অন্যান্য কারা জড়িত তাদের নাম বলুন। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলেও দুদক মাত্র ৪১ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষ, তাদের মধ্যে গুটিকয়েক মানুষ অর্থ পাচার করে থাকে। তাদের সবার জানার অধিকার আছে। আমরা অর্থ পাচারকারীদের নাম-ঠিকানা জানতে চাই।’

এর আগে, সম্রাটসহ অর্থ পাচারকারীদের একশত নামসহ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয় হাইকোর্টে। এরপর এ বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন আদালত। পরে এ বিষয়ে অগ্রগতির প্রতিবেদন জানাতে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওইদিন শুনানি হওয়ারও কথা রয়েছে।

এর আগে বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে ৫টি সংস্থা হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। কানাডায় অর্থ পাচারের বিষয়ে সে দেশের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইএইউ)।

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সব মিশন অর্থপাচারের রিপোর্ট দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা আদালতে দাখিল করা হবে। অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত দুদকের মামলার হিসাবে ২৫০০ কোটি টাকা অর্থ পাচার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে দুদক।

সিআইডি জানিয়েছে, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ সাতজন হ্যাকারদের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কায় অর্থ পাচার করেছে। শুধুমাত্র সম্রাট এবং এনামুল হক আরমানই ২৩২ কোটি ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯১ টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

এদিন সকালে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘সরকারি একটি সংস্থা এবং দুদকের প্রতিবেদনও কিছুক্ষণের মধ্যে জমা হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী।’

এর আগে গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সব ধরনের তথ্য চেয়েছেন। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব, দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

এরপর হাইকোর্টের আদেশের জবাব তৈরি করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে দুইবার বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সর্বশেষ গত সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) অ্যাটর্নি কার্যালয়ে এ বিষয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে দুদক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও এনবিআরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ওইদিন বৈঠকের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবাই একসঙ্গে বসে ঠিক করলাম। সবার বক্তব্য আমাদের দিলে, আমরা এটা এফিডেভিট করে আদালতে জমা দিব, অন্যকিছু না। তথ্য যা আছে সেটাই দেয়া হবে। সবাই আদালতের আদেশ মোতাবেক জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল জানতে চেয়েছেন, কারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেমন আমরা দুদকের পক্ষে বলেছি, পদক্ষেপ নিচ্ছি। কাগজ রেডি করছি। আশা করছি, ১৭ ডিসেম্বরের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে আদালতের আদেশ মতো দাখিল করতে পারবো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিএফআইইউসহ সবাই একই কথা বলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অর্থ পাচারের সার্বিক বিষয়ে দুদকের সর্বশেষ অবস্থান আগামী বৃহস্পতিবার আদালতে দাখিল করব। টাকা পাচার সংক্রান্ত দুদক যা করেছে, তার এ টু জেড তথ্য উপাত্ত আদালতে দাখিল করব। সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানিয়েছি। বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের নিয়ে ১৯ এবং ২১ নভেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।’

এ বিষয়ে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশসহ রুল জারি করেন। রুলে টাকা পাচারকারী সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং ঢাকা জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ রুল বিবেচনায় থাকা অবস্থায় বিদেশে টাকা পাচারকারীদের নাম-ঠিকানাসহ সব ধরনের তথ্য (মামলাসহ, কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা) প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ১৭, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test