E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘এসকে সিনহার নির্দেশেই শাহজালাল ব্যাংকে হিসাব খোলেন ভাই’

২০২০ ডিসেম্বর ২৮ ১৭:৫৫:০৪
‘এসকে সিনহার নির্দেশেই শাহজালাল ব্যাংকে হিসাব খোলেন ভাই’

স্টাফ রিপোর্টার : সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নির্দেশে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা ভাতিজা শঙ্খজিৎ সিনহাকে নিয়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় একটি যৌথ হিসাব খোলেন। সেই হিসেবেই পরবর্তীতে সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা চার কোটি টাকার দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়।

সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ শেখ নাজমুল আলমের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে নরেন্দ্র কুমার সিনহা এ কথা বলেন।

এদিন সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হন এসকে সিনহার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা ও ভাতিজা শঙ্খজিৎ সিনহা। এরমধ্যে নরেন্দ্র কুমার সিনহা তার জবানবন্দিতে বলেন, তার ভাই এসকে সিনহার নির্দেশে তিনি ও শঙ্খজিৎ শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় একটি যৌথ হিসাব খোলতে যান। সেখানে একজন কর্মকর্তা আগে থেকেই সবকিছু তৈরি করে রেখেছিলেন। গেলে শুধু তাদের স্বাক্ষর রাখা হয়। এরপর একটি চেকবইয়ের সব পৃষ্ঠায় দু’জনের স্বাক্ষর রাখা হয়। পরে তারা বাড়ি ফিরে যান। পরবর্তীতে জানতে পারেন ওই হিসাবের মাধ্যমেই অভিযোগের সমপরিমাণ দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা লেনদেন হয়।

এ জবানবন্দি দেওয়ার পর কাঠগড়ায় থাকা একজন আসামি মাথা ঘুরে পড়ে যান। এ সময় বিচারক সোমবার দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে নরেন্দ্র কুমার সিনহার জেরা ও তার ভাতিজার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। এ মামলায় মোট ১৮ সাক্ষীর ১৫ জন আদালতে জবানবন্দি দিলেন।

এর আগে সাক্ষ্য দিতে না আসায় গত ৮ ডিসেম্বর নরেন্দ্র কুমার সিনহা ও ভাতিজা শঙ্খজিৎ সিনহার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানা জারির পর সোমবার দু’জনই সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হন।

এ মামলার মোট আসামি ১১ জন। এরমধ্যে কারাগারে থাকা আসামি মাহবুবুল হক চিশতি ওরফে বাবুল চিশতিকে এদিন আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়া জামিনে থাকা এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রাক্তন ক্রেডিট প্রধান কাজী সালাহউদ্দিন, সাবেক এমডি এবিএম শামীম, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, টাঙ্গাইলের মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন কুমার সাহা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এ মামলায় এসকে সিনহাসহ মোট চার আসামি এখন পলাতক। তারা হলেন- ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ, সাভারের শ্রীমতি সান্ত্রী রায় (সিমি) ও শ্রী রনজিৎ চন্দ্র সাহা।

গত ৯ ডিসেম্বর ১১ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। অভিযোগত্রে ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতীর (বাবুল চিশতী) নাম নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর তদন্তকালে এজাহারনামীয় আসামি ফারমার্স ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক (গুলশান) মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদ মারা যাওয়ায় তাকে এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সেই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গত ৫ জানুয়ারি এসকে সিনহাসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলাটি বিচারের জন্য এ আদালতে বদলির আদেশ দেন ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ।

গত ১৩ আগস্ট একই আদালত অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে তাদের বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। গত ১৮ আগস্ট এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওইদিন মামলার বাদী দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল সাক্ষ্য দেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া ঋণের মাধ্যমে চার কোটি টাকা স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করার অভিযোগ মামলাটি করে দুদক। গত ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয় সংস্থাটি।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দু’টি অ্যাকাউন্ট খোলে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।

ঋণের জামানত হিসাবে আসামি রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। ওই দম্পতি এসকে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে। দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি একেএম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দু’টি অনুমোদন করেন।

ওই বছরের ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর 'অস্বাভাবিক দ্রুততার' সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দু’টি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এসকে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এসকে সিনহার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়।

পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এরমধ্যে এসকে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দু’টি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ২৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test