E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘দুই শিশু নিয়ে জাপানি মা-বাংলাদেশি বাবার আইনজীবীরা সমাধান করবেন’

২০২১ সেপ্টেম্বর ১৬ ১৭:২১:৪৭
‘দুই শিশু নিয়ে জাপানি মা-বাংলাদেশি বাবার আইনজীবীরা সমাধান করবেন’

স্টাফ রিপোর্টার : দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ ও দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবা ও জাপানি মায়ের আইনজীবীরা সুন্দর সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে বর্তমানে গুলশানের ভাড়া ফ্ল্যাটে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি শরীফ ইমরান দুই শিশুসন্তান নিয়ে শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে একদিন বাবা, একদিন মা থাকবেন বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

শুক্রবার সকাল ৮টায় প্রথমে মা যাবেন। পরদিন সকাল ৮টায় তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যাবেন। এরপর বাবাকেও একই নিয়ম অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

এরমধ্যে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনজীবীরা বিষয়টি সমাধান করে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আবার শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত। এর মধ্যে আগামী ৩১ সেপ্টেম্বর বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

শিশুদের জন্য মঙ্গল হয় এবং দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য উভয়পক্ষের আইনজীবীকে বলা হয়েছে।

জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান শরীফ ইমরান দুই শিশুসন্তান নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনি। বাবার পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। তার সাথে ছিলেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান শরীফ ইমরান দুই শিশুসন্তান নিয়ে বর্তমানে গুলশানের একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে রয়েছেন। গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ তাদের ১৫ দিন ভাড়া বাসায় থাকার আদেশ দিয়েছিলেন।

গত ২৩ আগস্ট মায়ের সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে থাকা দুই শিশুকে উন্নত বাসায় রাখার প্রস্তাব করেছিলেন তাদের বাবা ইমরান শরীফ। ৩১ আগস্ট গুলশানের ভাড়াবাসায় থাকতে বাবা-মা সম্মতি দিলে তাদের আইনজীবীদের অনুমতি দিয়ে আদালত আদেশ দেন। এরপর ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন আদালত এবং পরবর্তী শুনানির জন্য ১৬ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেন।

ওই দুই শিশুকন্যাকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে শিশুদের হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে ঢাকায় এসে ১৯ আগস্ট রিট আবেদন করেন জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো, যিনি পেশায় চিকিৎসক। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সেদিন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করতে তাদের বাবা শরীফ ইমরান ও ফুফুকে নির্দেশ দেন।

শিশুদের আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গুলশান ও আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলা হয়েছিল। শিশুদের নিয়ে তাদের বাবা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য ৩০ দিনের নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছিল।

এরপর গত ৮ সেপ্টেম্বর দুই মেয়েকে নিয়ে বাধাহীনভাবে উন্মুক্ত পরিবেশে চলাচল ও রাতে তাদের সঙ্গে ঘুমানোর অনুমতি পান জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো। আর বাবা দুই শিশুর সঙ্গে দিনের বেলা থাকতে পারবেন বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

আদেশে আদালত বলেন, বাবা-মা দুজনই তাদের শিশুদের নিয়ে বাইরে যেতে ও কেনাকাটা করতে পারবেন। এছাড়াও ফ্ল্যাটের ভেতরে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরা অপসারণ করতে হবে। তবে বাসার বাইরে সিসি ক্যামেরা থাকতে পারে।

এর আগে ২৫ আগস্ট জাপানি দুই শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে সুবিধামতো রাজধানীর যেকোনো একটি উন্নতমানের হোটেলে রাখার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তাদের বাবা। শিশুদের বাবার পক্ষে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ এ আবেদন করেন।

তার আগে গত ২২ আগস্ট ওই দুই শিশুকে হেফাজতে নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তখন ওই দুই শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়।

তারও আগে ১৯ আগস্ট তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সঙ্গে তাদের বাবা ও ফুফুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

গত ১৯ আগস্ট সকালে দুই কন্যাশিশুকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬)। রিটে দুই কন্যাশিশুকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চান ওই নারী।

২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।

চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।

গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন।

কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

এরপর গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test