E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধে স্থায়ী নির্দেশনা চেয়ে রিট

২০২২ সেপ্টেম্বর ২০ ১৬:২৮:৩৮
ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধে স্থায়ী নির্দেশনা চেয়ে রিট

স্টাফ রিপোর্টার : ভারতে ইলিশ রপ্তানি স্থায়ীভাবে বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

রিটে ভারতে কম দামে ইলিশ রপ্তানি বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারির আদেশ চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতে ইলিশ স্থায়ীভাবে বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া রিটে পর্যটন করপোরেশনকে ইলিশ মাছ কেন্দ্রিক পর্যটনের বিকাশে কাজ করতে নির্দেশনার আর্জি চাওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর এবং বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।

এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। ওই নোটিশ পাঠানোর সাতদিনের মধ্যে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় রিটটি করা হয়।

রিটটি শিগগির হাইকোর্টে শুনানির চেষ্টা করা হবে বলে জানান আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান। রিটে বিবাদীদের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আইনজীবী জানান, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, জনসাধারণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। অপরদিকে জনগণের স্বার্থে সর্বদা নিয়োজিত থাকা বিবাদীদের সাংবিধানিক দায়িত্ব।

তাই রিটে বলা হয়, দেশের বাজারের চেয়ে কম মূল্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করার মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তারা দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ধ্বংস করেছেন এবং জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন। এছাড়া রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী ইলিশ মাছ মুক্তভাবে রপ্তানি যোগ্য পণ্য নয়। তাই রিট মামলায় এই ইলিশ মাছ স্থায়ীভাবে রপ্তানি বন্ধের আবেদন করা হয়েছে।

রিটে বলা হয়েছে, দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ, অথচ বর্তমানে ইলিশ মাছের অত্যধিক দামের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই মাছ কেনার চিন্তাও করে না। দেশের মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী ইলিশ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।

আইনজীবী বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, দরিদ্র কৃষকরা দুই মণ ধান বিক্রি করেও এক কেজি ইলিশ মাছ কিনতে পারছেন না। এছাড়া ইলিশের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু হলো পদ্মা নদীর ইলিশ। ইলিশ মাছের দাম ১৬০০-১৮০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে গিয়ে ঠেকেছে। অপরদিকে বাংলাদেশের এই ইলিশ ভারতে মাত্র ১০ ডলার (প্রায় ৯৫০ টাকা) কেজি দরে রপ্তানি হচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বাজার মূল্যের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে ইলিশ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের মানুষের চাহিদার কথা চিন্তা না করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।

রিটে আরও বলা হয়, ভারতে যে ইলিশ রপ্তানি করা হচ্ছে সেগুলো মূলত পদ্মার ইলিশ। এমনিতেই পদ্মা নদী থেকে সীমিত পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়। এই ইলিশ ভারতে রপ্তানির ফলে বাংলাদেশের বাজারগুলোতে পদ্মার ইলিশ যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের রপ্তানিনীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী ইলিশ মুক্তভাবে রপ্তানিযোগ্য পণ্য নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ অনায্যভাবে, জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।

সরকার যদি বিদেশিদের ইলিশের স্বাদ উপভোগ করাতে চায়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ‘ইলিশ উৎসব’ আয়োজন করতে পারে। যেখানে বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এমনকি আসন্ন দুর্গাপূজায় ভারতীয়দের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে বাংলাদেশে ভ্রমণ করে ইলিশের স্বাদ উপভোগ করার।

এখানে উল্লেখ্য যে, পর্যটন করপোরেশন আইন (বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন অর্ডার) এর ধারা ৫ অনুযায়ী, পর্যটনের উন্নয়ন, বিকাশ, বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করাসহ পর্যটনের সব উৎকর্ষসাধনের দায়িত্ব পর্যটন করপোরেশনের।

এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৪৯ প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ মেট্রিক টন করে মোট দুই হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি-২ শাখার এক চিঠিতে এ অনুমতি দেওয়া হয়।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test