E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা

আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতের নির্দেশ

২০১৪ অক্টোবর ১৫ ১৩:১২:৪৭
আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতের নির্দেশ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :২০০২ সালে কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি  এজাহার  হিসেবে গণ্য করে আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা বাদি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিনের নারাজি আবেদনের শুনানী শেষে জনাকীর্ণ আদালতে এ আদেশ দেন।
এদিকে আদেশ শোনার পর আদলতে উপস্থিত থাকা এ মামলার অন্যতম আসামী যুবদল নেতা ও কেড়াগাছি ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ আলী তড়িঘড়ি করে পুলিশের চোখ এড়িয়ে সটকে পড়েন।
বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. এসএম হায়দার আলী আদালতে নারাজি শুনানীকালে বলেন, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস(সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমানকে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে মারপিট করা হয়। তার কাছে থাকা সাড়ে ১১ হাজার টাকা ছিনতাই করা হয়। মারিপট করে জখম করা হয় নেত্রীর গাড়ি বহরে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল হক রাসেল, রমনা এলাকার যুব মহিলা লীগের নেত্রী ফতেমা জামান সাথী, আওয়ামী লীগ কর্মী আব্দুল মতিনসহ কয়েকজন। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক থানার ভিতরে আশ্রয় নিলেও তাদেরকেও পিটিয়ে জখম করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় তাদের ক্যামেরা। ছিনিয়ে নেওয়া হয় মোবাইল, ঘড়ি ও টাকা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরের ঢাকা মেট্রো-গ- ১২ -৫৩৪২ পাজারুর গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়।
এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা(সিআরপি-১১৭১/০২) দায়ের করন । মামলায় ১৮জনকে সাক্ষী করা হয়। বিচারক এম আই ছিদ্দিকী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন। ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঘটনা মিথ্যা বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্তকালে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম গোলাম কিবরিয়া ৩৫ জনের ১৬১ ধারায় সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন মর্মে আদালতকে অবহিত করেন। সাক্ষীরা ঘটনা সঠিক নয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। এদের মধ্যে অন্যতম সাক্ষী হিসেবে নব্য আওয়ামী লীগার লাঙ্গলঝাড়া ইউপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম, দৈনিক পত্রদূতের সাংবাদিক জুলফিকার আলী জিল্লু, বর্তমান কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, সাবেক সভাপতি ও সাংসদ বিএম নজরুল, সাবেক কেড়াগাছি ইউপি চেয়ারম্যার আলতাফ হোসেন লাল্টু, শহীদুল ইসলাম, শওকত হোসেন, প্রভাষক সাংবাদিক জাভিদ হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু, ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মিনি, দৈনিক লোকসমাজের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মাসুদ হোসেন, আল মোদাজ্জেদ এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি কাজী শওকত হোসেন ময়না, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রুহুল কুদ্দুস, সংগ্রাম ও বিটিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জামায়াত নেতা আলতাফ হোসাইনের ১৬১ ধারায় জবানবন্দির নীচে নিজ নিজ সাক্ষর দেখিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
বারবার তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে যেয়েও তিনি জবানবন্দি না নিয়ে নিজের মনগড়া কথা ১৬১ ধারার জবানবন্দি হিসেবে উল্লেখ করেছেন বলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এফিডেফিড দিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির হয়ে বিচারককে অবহিত করেন সাক্ষী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, শওকত হোসেন, শহীদুল ইসলাম, প্রভাষক জাভিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম লাল্টু ও আলতাফ হোসেন লালু।
বাদি মোসলেমউদ্দিন পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে ২০০৪ সালের ২২ জানুয়ারি আদালতে নারাজির আবেদন জানালে শুনানী শেষে তা খারিজ হয়ে যায়। এ খারিজ আবেদনের বিরুদ্ধে বাদি ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা ( ১৭/০৪) দায়ের করেন।
২২ এপ্রিল শুনানী শেষে বিচারক একেএম জহিরউদ্দিন এ রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেন। নিরুপায় হয়ে ২০০৪ সালের ৪ আগষ্ট বাদি এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে ক্রিমিনাল মিস কেস (৫৮৯৩/০৪) দাখিল করেন।
দীর্ঘ শুনানী শেষে বিচারক এম এনায়েতুর রহিম ও আকরাম হুসাইন চৌধুরী ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আপিল মঞ্জুর করে নিম্ন আদালতের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসাথে নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। আদেশের কপি দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর ফাইলবন্দি থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এসে পৌঁছায়। ১৭ সেপ্টেম্বর বাদির উপস্থিতিতে নারাজির শুনানী করার জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
মামলার শুরুতেই সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ট আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল মজিদ যুবদল নেতা আশরাফ হোসেনের দায়ের করা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজের মাধ্যমে লিভ টু আপিলের (ক্রিমিনাল মিসলেনিয়াস রিভিশান ৫৬২/১৪) শুনানীর জন্য আইনজীবীর একটি চিঠি উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি এ আদালতে এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন জানান। তবে আদালত তা আমলে নেয়নি।
আদালতের কাঠগড়ায় মামলার বাদি প্যারালিসিস রোগে আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন ঘটনার বিববরণ আদালতে উপস্থাপন করার পর পুলিশের হয়রানিসহ দীর্ঘদিন বিচার না পাওয়ার যন্ত্রণার কথা একের পর এক তুলে ধরেন। একযুগ পরে হলেও মৃত্যুর আগে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর হামলাকারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি আমলে নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ায় তিনি যার পর নেই খুশি। তিনি বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন ও আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ সকল আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ মামলায় বাদি পক্ষের শুনানীতে অংশ নেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. ওসমান গণি, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. মোবারক আলী, অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, অ্যাড. আব্দুস সামাদ, অ্যাড শাহানাজ পারিভন মিলি, অ্যাড. মোস্তফা নুরুল আলম, অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলুসহ কমপক্ষে ৫০জন আইনজীবী।
তারা আদালতে বলেন, বিচার বিভাগ পৃথক না থাকায় প্রশাসনের অবৈধ হস্তক্ষেপে এ বিচার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। হাইকের্টের আদেশের বিরুদ্ধে যুবদল নেতার লিভ-টু-পিটিশান দাখিল করার কোন সূযোগ নেই।

(আরকে /এসসি/অক্টোবর১৫,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test