E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিকৃত সুরের ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ সব অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অপসারণের নির্দেশ 

২০২৪ জানুয়ারি ০৯ ১৬:১১:০২
বিকৃত সুরের ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ সব অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অপসারণের নির্দেশ 

স্টাফ রিপোর্টার : ফেসবুক, ইউটিউবসহ সকল অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হতে অস্কারজয়ী ভারতীয় সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের বিকৃত সুরে গাওয়া কাজী নজরুল ইসলামের 'কারার ঐ লৌহ-কবাট' গানটি অপসারণ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি জে.বি. এম. হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ছয় মাসের জন্য এ আর রহমানের বিকৃত সুরে গাওয়া কাজী নজরুলের 'কারার ঐ লৌহ-কবাট' গান সকল অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অপসারণ করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন।

আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। তাকে সহযোগিতা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাঈম সরদার ও ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার। মানবাধিকার সংগঠন ল' এন্ড লাইভ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে গত ৬ই ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন।

রিটে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিটিআরসি, ও কবি নজরুল ইনস্টিটিউটকে বিবাদী করা হয়।

রিটকারীরা হলেন মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, নাঈম সরদার, ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান, ব্যারিস্টার শেখ মঈনুল করিম, ব্যারিস্টার আহমেদ ফারজাদ, এডভোকেট শহিদুল ইসলাম, এডভোকেট মোঃ শাহেদ সিদ্দিকী, এডভোকেট মোঃ আনাস মিয়া ও এডভোকেট মোঃ বাহাউদ্দিন আল ইমরান।

এরআগে গত ১৯ শে নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বিবাদীদের এ আর রহমানের বিকৃত সুরে গাওয়া 'কারার ঐ লৌহ-কবাট' গানটি অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অপসারণ করতে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে এ আর রহমানের বিকৃত সুরে গাওয়া 'কারার ঐ লৌহ-কবাট' গানটি অপসারণ করতে বলা হয়। কিন্তু কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় এ রিট দায়ের করা হয়।

'কারার ঐ লৌহ-কবাট' গানটির মূল লেখক , সুরকার ও গীতিকার আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

রিটে বলা হয়, কবি কাজী নজরুল ইসলামের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ গানটিতে অস্কারজয়ী ভারতীয় সংগীত পরিচালক এ আর রহমান নতুনভাবে সুরারোপ করেছেন। এটি ব্যবহার করা হয়েছে পিপ্পা নামের একটি হিন্দি চলচ্চিত্রে। এ আর রহমান গানের কথা ঠিক রাখলেও সুরের পরিবর্তন করেছন। এই গান নজরুলের নিজের সুরারোপিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। আমাদের সব বিপ্লব–বিদ্রোহ তথা আন্দোলন–সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’।

রিটে বলা হয়, কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি বিদ্রোহী কবি নামে পরিচিত। তাঁর কবিতা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। তাঁর কবিতার আসল সুর অক্ষুণ্ন রাখার দাবি জানানো হয়।

বৃটিশ সরকার কর্তৃক দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আটকের প্রতিবাদে কাজী নজরুল ইসলাম 'কারার ঐ লৌহ-কবাট' গানটি লেখেন। ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ গানটি 'ভাঙার গান' বইয়ে প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। প্রকাশের পরপর ১৯২৪ সালের ১১ নভেম্বর ব্রিটিশ সরকার ভাঙার গান নিষিদ্ধ করে।

পরবর্তীকালে স্বাধীন ভারতে ‘ভাঙার গান’ কবিতাটি ফের প্রকাশিত হয়। ১৯৪৯ সালে কলাম্বিয়া রেকর্ড এবং ১৯৫০ সালে এইচএমভিতে গিরিন চক্রবর্তীর কণ্ঠে গানটি বাণীবদ্ধ হয়। ১৯৪৯ সালে নির্মল চৌধুরী পরিচালিত 'চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন' সিনেমায় গিরিন চক্রবর্তী ও তাঁর সহশিল্পীদের নিয়ে গানটি রেকর্ড করেন সংগীত পরিচালক কালীপদ সেন। এরপর ১৯৬৯-৭০ সালে জহির রায়হান তাঁর কালজয়ী চলচ্চিত্র 'জীবন থেকে নেয়া' সিনেমায়ও গানটি ব্যবহার করেন।

রিটে বলা হয় 'কারার ঐ লৌহ-কবাট’ শত বছরের এক অবিনাশী অমর গান। সময়ের প্রয়োজনে লেখা হলেও গানটির লোকপ্রিয়তায় সামান্য ঘাটতি হয়নি। ব্রিটিশি বিরোধী মানসে লেখা গানটি সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার, ফলে এখনো সমানভাবে এটি প্রাসঙ্গিক। নোটিশে বলা হয় একই গান একটি কাজী নজরুলের সুরে ও আরেকটি বিকৃত সুরে থাকলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিভ্রান্ত হবে।

রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, এ আর রহমানের গাওয়া 'কারার ঐ লৌহ-কবাট' গানটি অপসারণ করতে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কার্যকর কোন ব্যাবস্থা নেননি। কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তাঁর গান আমাদের সকল প্রকার বিপ্লব ও আন্দলনে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তাঁর গান ও কবিতা আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের জাতীয় কবি ও তাঁর অমর কবিতার মূল সুর রক্ষায় সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে রিট দায়ের করা হয়েছিল। শুনানি শেষে আজ আদালত বিটিআরসিকে এআর রহমানের বিকৃত সুরে গাওয়া জাতীয় কবির " কারার ঐ লৌহ কবাট" গানটি অপসারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

(এসটি/এসপি/জানুয়ারি ০৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test