E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেবহাটার খলিষাখালি ভূমিহীন জনপদ

১ হাজার ৩১৮ বিঘা জমির মালিকানা দাবিদারদের রিভিউ শুনানি শেষ, রায় ২৫ জানুয়ারি 

২০২৪ জানুয়ারি ১২ ১৮:১৩:২৫
১ হাজার ৩১৮ বিঘা জমির মালিকানা দাবিদারদের রিভিউ শুনানি শেষ, রায় ২৫ জানুয়ারি 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালির এক হাজার ৩১৮ বিঘা জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এপিলেড ডিভিশনের রায় এর বিরুদ্ধে মালিকপক্ষ দাবিদারদের রিভিউ পিটিশনের শুনানী শেষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রিভিউকারী আনছার আলীদের পক্ষের আইনজীবী মধু মালতী চৌধুরী বড়ুয়া ও জসীমউদ্দিনের পক্ষে অ্যাড. অন রেকর্ড নুরুল ইসলাম চৌধুরী সুপ্রিম কোর্টের ১ নং আপিল বিভাগে শুনানিতে অংশ নেন। শুনানী শেষে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আগামি ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রায় এর জন্য দিন ধার্য করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালে খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা জমি খাস করা সম্পর্কিত পারুলিয়ার জসীমউদ্দিনের দায়েরকৃত মামলায় সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ -২য় আদালত এর বিচারক এএসএম মাহাবুবর রহমান ওই জমি লাওয়ারিশ জমি হিসেবে ঘোষণা করে খাস সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করে দেখভাল করার জন্য ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি ভূমি সচীব ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়কে নির্দেশ দেন। একই আদেশে ওই জমি অ্যাড. বিকাশ চৌধুরীসহ দুইজনকে রিসিভার নিয়োগ দেন।

বিচারক রায় পর্যালোচনায় বলা হয় যে, ওই জমি নিয়ে জমির মালিক দাবিবদারগণ যে বিনিময় দলিল দাখিল করেছেন তার ৬০,৬১ ও ৬২ নং পাতার হাতের লেখার সঙ্গে অন্য পাতাগুলোর হাতের লেখার কোন মিল নেই। এছাড়া কয়েকজন মালিক দাবিদার আদালতে বয়নামার ফটোকপি জমা দিয়েছেন কিন্তু মূল বয়নামা জমা দেনননি। এমনকি সরকারি রাস্তা, খাল ও কালভার্টের ৫২ বিঘা জমি এসএ রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে। এ তিনটি কারণ উল্লেখ করেই ওই জমি জাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ আদেশের বিরুদ্ধে মালিক দাবিদাররা জজ কোর্টে আলি করে হেরে গেছেন।

পরে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হেরে যান তারা। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে ওই জমি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দেখভাল করার নির্দেশ দেন। ওই রায় পাওয়ার পর সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জিপি অ্যাড. লুৎফর রহমান ২০২১ সালে কথিত জমির মালিক আনছার আলী. ডাঃ নজরুল ইসলাম, কাজী গোলাম ওয়ারেশ, ইকবাল মাসুদ, আনছার আলী, আব্দুল আজিজসহ কয়েকজন ১৩১৮ বিঘা জমি নিজেরা দখলে রেখে বা অন্যত্র লিজ দিয়ে ১৯৫৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৫০ কোটিরও বেশি সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দেন। জমির মালিকরা বেগতিক বুৃঝে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে সিভিল রিভিউ ১৬৮/২১ নং মামলা দায়ের করেন।

সিভিল রিভিউ পিটিশন ১৬৮/২১ এর শুনানীর পর অঅগামি ২৫ জানুয়ারি রায় প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের ১নং আপিল বিভাগের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড এমডি. নুরুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রসঙ্গত, খলিষাখালিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ১৩১৮ বিঘা জমিতে ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সাপমারা খালের দু’পাশের ভূমিহীনসহ এক হাজারের বেশি পরিবার বসবাস শুরু করে। এরপর থেকে ওই জমির মালিক দাবিদাররা ভূমিহীনদের নামে থানায় একের পর এক ফৌজদারি মামলা দেন। ওই জমি খাস জমি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়ার দাবিতে খলিষাখালি শেখ মুজিবনগর ভূমিহীন আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির ডাকে সাড়া দিয়ে সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, অ্যাড, ফাহিমুল হক কিসলু, প্রভাষক ইদ্রিস আলী, সিপিবি নেতা আবুল হোসেনসহ বিভিন্ন বামপন্থী নেতাগণ আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন।

২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক জরুরী সভায় সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান খলিষাখালির ৪৩৯দশমিক ২০ একর জমি নিয়ে পারুলিয়ার জসীমউদ্দিনের এসএ রেকর্ড সংশোধন ও খাস জমি হিসেবে পরিণত করার দেঃ ১৮/১০ নং টাইটেলশুটের মামলায় সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ আদালত-২ এর বিচারক এসএম মাহাবুবর রহমান এর রায়টি উল্লেখ করেন।

জমির মালিক দাবিদারদের সুপ্রিম কোর্টের সিভিল রিভিউ মামলাটি শুনানী না হওয়া পর্যন্ত তাদের জমিতে কোন স্বত্ব নেই দাবি করে সেখানে বসবাসরত আট শতাধিক ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করা যাবে না মর্মে মতামত ব্যক্ত করেন পুলিশ সুপার। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বদলী হলে নতুন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ও দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ ওবায়দুল্লাহকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা দিয়ে ভূমিহীন,ভূমিহীন নেতা ও তাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া সাংবাদিক, রাজনীতিবীদদের শায়েস্তা করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করেন ওইসব জমির মালিক দাবিবদারগণ। এমনকি দুটি এনজিও ও দুটি স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদককে ম্যানেজ করে তাদেরকে দিয়ে একের পর এক বিকৃত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করানো হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় কমপক্ষে দুই ডজন ভূমিহীন ও ভূমিহীন নেতাসহ সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়। সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দেওয়া সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রথম আলোয় ছাপানোর অভিযোগে প্রথম আলোর সাংবাদিক কল্যাণ ব্যাণার্জীকে নিজ অফিসে ডেকে চরম অপমান করেন কাজী মনিরুজ্জামান। পরে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে মামলা না করলে ওই দুটি মামলায় চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হলেও একটি মামলায় আদালতে অবিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। অপর মামলাটি(৮) অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ১২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test